ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজেট ভাবনা

অগ্নি নিরাপত্তা সামগ্রীর ভ্যাট তুলে নেয়া উচিত

ঊর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৫
অগ্নি নিরাপত্তা সামগ্রীর ভ্যাট তুলে নেয়া উচিত ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকাঃ বছরে একটি দেশের আয় ব্যয়ের পরিকল্পনা বাজেট। চলতি অর্থ বছরের রাজনৈতিক সঙ্কটে বিপাকে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা।

২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেটকে কেন্দ্র করে পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা নিয়ে বাংলানিউজের সাথে কথা বলেছেন এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ইএবি)সভাপতি ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ)সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

শুধু তাই নয়, তিনি দেশের অন্যতম রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  

২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বাজেটে অগ্নি নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ওপর থেকে আমদানি শুল্ক তুলে নেয়া হলেও রয়েছে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট।

বিষয়টিতে আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, রানা প্লাজা ও তাজরীনের দুর্ঘটনার পর বিশ্ব বাজারে আমাদের পোশাক শিল্পের বাজার ধরে রাখতে এক অসম যুদ্ধে নামতে হয়েছিলো। তার ওপর অ্যাকর্ড, এলায়েন্স। পৃথিবীর একমাত্র বাংলাদেশেই অ্যাকর্ড, এলায়েন্স রয়েছে।

কারখানা ভবনকে কমপ্লায়ান্সের আওতায় নিয়ে আসতে আমদানি করতে হয়েছে কোটি কোটি টাকার নানা ধরনের সামগ্রী। অগ্নি নিরাপত্তায় ভবন নির্মাণের বিভিন্ন সামগ্রীর আমদানি শুল্ক তুলে নেয়া হলেও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট রয়ে গেছে। এতে করে বিপাকে পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। তাই আমরা চাই এসব অগ্নি নিরাপত্তার দ্রব্য সামগ্রীর ওপর থেকে ভ্যাটও তুলে নেয়া হোক।

ব্যাংক ঋণের বিষয়ে এবারও পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের রয়েছে কিছু প্রত্যাশা। আর সেসব তুলে ধরেন ইএবি সভাপতি।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীরা যখন নাজেহাল তখনও কিন্তু ব্যাংক মুনাফা অর্জন বজায় রেখেছে। কারণ পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় ভালো খারাপ যাই হোক না কেন তাদের সুদের বোঝা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। হতে হচ্ছে ঋণ খেলাপী। এসব জিনিস বিবেচনায় এনে সরকারকে আমি অনুরোধ করব যাতে এবারের বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু ছাড় থাকে। পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে মেয়াদী ঋণের সুবিধা বাড়াতে হবে। তাছাড়া ঋণ ক্লাসিফাইড করার নীতি ব্যবসায়ীদের জন্য আরও শিথিল করতে হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে যেসব ফান্ড থাকে তাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস করা উচিত।

একদিকে বাংলাদেশে ডলারের মূল্য কমে যাওয়া অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় রফতানিকারকদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী নেতা। আর তাই ডলার ও ইউরো’র মূল্য কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের যাতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় সে বিষয়টিও বাজেটে বিবেচনা করতে হবে।

বিশ্ব বাজারের তেলের দাম হ্রাস পেলেও তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ছে না। তাই বাজেটে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে অবকাঠামো তৈরি করার পরও গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে তারা কাজ করতে পারছে না বলেও জানিয়েছেন এনভয় গ্রুপের এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এসব বিষয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই শিল্পে প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের মতো এতো বেশি না। কারণ এখানকার তরুণরা ব্যবসা বাণিজ্য করতে চায়। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে অনেকেই কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ করেও উৎপাদনে যেতে পারছেন না। তার মূল কারণ গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়া। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো যাতে গুরুত্বের ভিত্তিতে এসব অবকাঠামোতে গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। এতে করে উৎপাদন যেমনি বাড়বে, বাড়বে দেশের রফতানি, বাড়বে আয়।

গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত না করে কোনো প্রতিষ্ঠানকে আর নিবন্ধন না দেয়ার অুনরোধ জানিয়েছেন আবদুস সালাম মুর্শেদী।

বাজেটকে কর্মসংস্থানমুখী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তিনি বলেন, বাজেটকে কেবল আকারে দেখলে চলবে না। বাজেটে কি কি পদক্ষেপ নিলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান করা যাবে সেসব বিষয়ে নজর দেয়া উচিত।

রফতানিখাতের অন্যান্য শিল্পের প্রতি নজর দেয়ার বিষয়েও জোর দিয়েছেন বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি।

তিনি বলেন, পোশাক শিল্প ছাড়াও অন্যান্য রফতানির খাতকে নগদ প্রণোদনা দেয়া ও যেসব খাতে আগেই প্রণোদনা ছিলো তাদের প্রণোদনা বজায় রাখতে হবে। তাহলে রফতানির পরিমাণ বাড়বে।

তবে সরকারকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেটের করের আওতা বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ দেশের নাগরিক সবাই। শুধু ব্যবসায়ীরাই কেন দেশের সবাইকেই করের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হচ্ছে। তাই অর্থনীতির করের ক্ষেত্রেও সর্বসাধারণের সম্পৃত্ততা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়ঃ ১৪১০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৫
ইউএম/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।