ঢাকা: যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিসেবে তাদের ঋণ সুবিধা দিয়ে পুনর্বাসন করতে চায় কেন্দ্রীয় এ ব্যাংক।
সমাজের ঘৃণিত পেশা থেকে নিজেদের ফিরিয়ে নিতে যৌনকর্মীরা নিজ উদ্যোগে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী পালন, বাঁশ, বেত, হস্তশিল্প, মোবাইল ফোন মেরামত, রিচার্জ ও টেইলারিং প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সামাজিকভাবে জীবিকা নির্বাহ করে বেঁচে থাকার জন্য উল্লেখিত কর্মকাণ্ডের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েও অর্থের অভাবে উদ্যোগের বাস্তবায়ন করতে পারছেনা। কারণ যৌনকর্মী হওয়ায় কোনো ব্যাংক তাদের ঋণ দেয় না।
বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টি গোচর হওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে একটি দল চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল পটুয়াখালী সদর উপজেলায় অবস্থিত পতিতালয়ের অর্ধশত যৌনকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
স্থানীয় এনজিও পল্লী উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে মতবিনিময় করার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ঘৃণিত পেশা পরিবর্তন করে সামাজিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েও অর্থের অভাবে ব্যবসা করতে পারছে না তারা। বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন।
মতবিনিময় সভায় যৌনকর্মীরা বলেন, সাধারণ ভাবে একজন যৌনকর্মীর কন্যা সন্তান হলে সেও একই পেশা বেছে নেয়। আর পুত্র সন্তান হলে হয় চোর, ডাকাত অথবা সন্ত্রাসী। তারা যদি ব্যাংকের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পুনর্বাসনের সুযোগ পায়। তাহলে বদলে যাবে তাদের জীবনযাত্রার মান ও পরিবেশ। সমাজের অন্য মানুষের মত মানুষ হতে পারবে তাদের সন্তানরাও।
অনিচ্ছাকৃতভাবে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে জীবিকা উপার্জন করছে দেশের বিভিন্নস্থানের পতিতারা। পেটের দায়ে ছাড়তে পারছে না সামাজিকভাবে ঘৃণিত এ পেশা। ইচ্ছে করলেও সহজে ফিরতে পারছেন না এই পেশা থেকে।
তাই অর্থের অভাবে যাতে যৌনকর্মীদের (সমাজের সুবিধা বঞ্চিত) কোনো উদ্যোগ বাঁধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পতিতাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে (পুর্নঃ অর্থায়ন তহবিলের আওতায়) সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
এজন্য প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলাপ আলোচনা চলছে।
এছাড়াও দেশে কার্যরত সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনে অর্থায়নের জন্য নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করার চিন্তা করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে একটি পতিতালয়ের কয়েকজন যৌনকর্মীকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সামাজিক পেশায় ফিরতে ইচ্ছুক দেশের সকল যৌনকর্মীকে এ উদ্যোগের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৫
এসই/এনএস/