ঢাকা: বাজারে গেলেই মিলছে নতুন চাল। দাম হাতের নাগালে হওয়ায় ক্রেতারা কিনছেনও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে।
বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি চালের দাম কমেছে দুই থেকে আট টাকা। আর খুচরা বাজারে কমেছে দুই থেকে ছয় টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিপণন অধিদপ্তর ও বাণিজ্যে মন্ত্রণালয়ের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের মাসিক বাজারদর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক মাসে (১০ এপ্রিল থেকে ১০ মে) চালের দাম কমেছে দুই থেকে সাত টাকা ২৫ পয়সা পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন ধানের (বোরো) চাল বাজারে আসার পর থেকেই চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে চালের বর্তমান দাম যে কোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। আর বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ধান ও চালের এ বাজার ক্ষণস্থায়ী।
সকাল ৭টার দিকে দেশের সবচেয়ে বড় চালের আড়ত বাবুবাজারে ঢুঁ মারতেই দেখা গেলো, ক্রেতাদের অপেক্ষায় আছেন আড়তদাররা।
মেসার্স নিউ মাতৃ ভাণ্ডার চালের আড়তের বিক্রেতা বাদশা মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ থেকে নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করলেও গত সপ্তাহ থেকে বেশি আসছে। এখন চালের বাজারে কোনো সমস্যা নেই। মিনিকেট, স্বর্ণা, ২৮, হাসকিসহ কয়েক জাতের চালের দাম অনেক কমেছে।
বাজারের একটু ভেতরে ঢুকতেই পাওয়া গেলো বাদামতলী ও বাবুবাজার চালের আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনকে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত কয়েকমাস চালের বাজার মোটমুটি স্থিতিশীল ছিলো। নতুন চাল বাজারে এলে প্রতিবছরই দাম কমে। কিন্তু এবার একটু বেশিই কমেছে। এর কারণ, ভারত থেকে এবার অনেক বেশি চাল আমদানি করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ও বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক শাহ বাংলানিউজকে বলেন, বোরো ধানের মৌসুম চলছে। বাজারে ধানের পর্যাপ্ততা থাকায় চালের দাম কমছে। ধীরে ধীরে যখন ধানের দাম বাড়বে তখন চালের দাম ঠিকই বেড়ে যাবে। বর্তমানের চালের বাজার ক্ষণস্থায়ী বলা যায়।
বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত চালের বাজারে মিনিকেট, স্বর্ণা ও ২৮ চালের চাহিদা ও বিকিকিনি বেশি।
বিভিন্ন চালের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে বাংলানিউজের পাঠকের জন্য বর্তমান ও অতীতের বাজার মূল্যের মূল চিত্র তুলে ধরা হলো:
কেজিপ্রতি মিনিকেট চালের পাইকারি দাম কমেছে ৭ টাকা। আর খুচরা কমেছে ৩ থেকে ৫ টাকা। পাইকারি পুরাতন মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৩ টাকায় (আগের দাম ৪৭ থেকে ৫০ টাকা) এবং খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা (আগের দাম ৫২ থেকে ৫৪ টাকা)। পাইকারি নতুন চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৪০ টাকায়, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। আর মধ্যম মানের চাল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকায়, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়।
পাইকারি বাজারে স্বর্ণা ও গুটি স্বর্ণা চালে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৬ টাকা কমেছে। খুচরা বাজারে কমেছে দুই থেকে পাঁচ টাকা। পুরাতন পাইকারি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ২৭ টাকায় (আগের দাম ৩০ থেকে ৩২ টাকা), খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায় (আগের দাম ৩২ থেকে ৩৫ টাকা)। আর নতুন স্বর্ণা চাল পাইকারি ২৫ থেকে ২৭ টাকায়, খুচরা ২৯ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২৮ ধানের চাল পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৮ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আর খুচরা বাজারে কমেছে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি নতুন ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকায়। আর পাইকারি পুরাতন চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৩ থেকে ৩৪ টাকায় (আগের দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা), আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায় (আগের দাম ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা)।
এছাড়া চালের পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি নাজিরশাইল ৮ থেকে ১০ টাকা, আতপ এক থেকে দুই টাকা, পোলাও চালে ৬ থেকে ১০ টাকা কমেছে বলে জানালেন আড়তদারেরা। খুচরা সুগন্ধি (কালিজিরা, চিনিগুড়া) ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৮ টাকায়।
তেজগাঁও কলমিলতা কাঁচাবাজার থেকে পাঁচ কেজি মিনিকেট চাল কিনে বাড়ি ফিরছিলেন আব্দুর সোবহান। তিনি জানান, চালের বাজার এখন অনেক ভালো। সারাবছরই এরকম দাম থাকলে খুবই ভালো হবে। কেননা অনেক বেশি চাল বেশি কিনে রাখা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য কঠিন।
মহাখালী কাঁচাবাজার থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে মিনিকেট চাল কিনছিলেন আরিফুল ইসলাম। চালের বাজার সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই বলেন, দাম কমেছে। গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে একই চাল কেজিপ্রতি চার টাকা কমে কিনেছি।
পেপার বিক্রেতা বেলাল আহম্মেদ জানান, দোকানদের যদি বলা যায় চালের দাম কমেছে তাহলে কম রাখে। তাছাড়া দাম নেওয়ার সময় বলে দুই টাকা কম রাখলেন। তবে তিনি দু’দিন আগের চেয়ে দুই টাকা কমে চাল কিনেছেন। না বললে তারা আগের দামই রাখে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিপণন অধিদপ্তর বাজার দর বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সরু চাল কেজিপ্রতি ৩ টাকা ১৩ পয়সা এবং মোটা চাল ৬ টাকা ১৫ পয়সা কমেছে।
আর বাণিজ্যে মন্ত্রণালয়ের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের এক মাসের বাজার দর বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রতিকেজি সরু চালের দাম কমেছে তিন টাকা ২৩ পয়সা, মিনিকেট (সাধারণ) দুই টাকা ৩৩ পয়সা, উন্নত ৪ টাকা ৮৫ পয়সা, মাঝারি দুই টাকা ৪৪ পয়সা, পাইজাম (সাধারণ) আড়াই টাকা কমেছে।
তবে পাইকার ও খুচরা বাজারে ভারতের চাল নিয়ে বেশ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে, ভারতের তিন বছরের পুরনো চাল এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজারজাত করছেন। বিক্রেতাদের দাবি, স্বর্ণা চালের সঙ্গে ভারতের চালের দামের মিল রয়েছে। তাই দেশি চাল কেনাই ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৫
একে/আরএম/এএ/জেডএম