ঢাকা: ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অতিরিক্ত এক হাজার কোটি টাকা আবদার করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
সোমবার (১১ মে) অতিরিক্ত এ বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. কায়কাউস আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আগামী অর্থবছরে (২০১৫-১৫) বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এতে করে সব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো না। সেই লক্ষ্যে আমাদের আরও এক হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। কারণ আমরা নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগ স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যে কারণে অতিরিক্ত এক হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন।
বিদ্যুৎ বিভাগ আরও জানায়, সরকারের ‘ভিশন ২০২১’ অনুসারে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য এডিপিতে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে দ্বিপক্ষীয় ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। প্রয়োজনে এসব দেশে যৌথ বিনিয়োগে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, যার
জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন।
প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প শেষ করার জন্য এ বাড়তি অর্থের দরকার বলে জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কার্যক্রম সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ ও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১০’ সংশোধন করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনায় আমদানিকৃত ও দেশি কয়লা আলাদা করে না দেখিয়ে শুধু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনা করা হয়েছে। নতুন অর্থবছরে এ কাজ শুরু হবে। প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় কয়লার খনি লিজ নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন উল্লেখ করে বিদ্যুৎ বিভাগ আরও জানায়, সমুদ্র বিজয়ের ফলে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে বিশাল জলরাশিতে গ্যাস, তেল ইত্যাদি জ্বালানি প্রাপ্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। উপকূলীয় ও গভীর সমুদ্র এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সার্ভে করা হবে।
অন্যদিকে, ভারতের নুমালীগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ততম রুট বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া জেট ফুয়েলের মূল্য যুক্তিযুক্তভাবে হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলকভাবে সমন্বয় করে নির্ধারণ করা হবে।
অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের অনুকূলে নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট বাবদ মোট ১৫ হাজার ৪শ’ ৮৫ কোটি ১৭ লাখ টাকার ব্যয়সীমা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে দেওয়া হবে ৬ হাজার ৩০০ কোটি এবং প্রকল্প সাহায্য ৯ হাজার ১৮৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
নতুন অর্থবছরের এডিপিতে বিদ্যুৎ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এডিপিতে স্থানীয় সরকারে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার এডিপি প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। ১৪ মে সকাল ১০টায় এ বিশাল এডিপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় উত্থাপন করা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রণালয় সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেললেও নতুন করে হাজার কোটি টাকার এ আবদার করে বসলো বিদ্যুৎ বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৫
এমআইএস/আরএম