ঢাকা: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দ্বিতীয় সাবমেরিন প্রকল্পসহ ১০টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ মে) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি’র সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া ১০টি প্রকল্পের মোট ব্যয় ২ হাজার ৩শ’ ৬৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জিওবি ১ হাজার ৫শ’ ৩১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, প্রকল্প সাহায্য ৬শ’ ৮১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১শ’ ৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
১০টি প্রকল্পের মধ্যে সব থেকে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে ‘দ্বিতীয় সাবমেরিন টেলিযোগাযোগ প্রকল্পে’। এর মোট ব্যয় ৬শ’ ৬০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি ১শ’ ৬৬ কোটি, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১শ’ ৪২ কোটি ৬৪ লাখ ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অর্থায়ন করবে ৩শ’ ৫২ কোটি টাকা।
এ প্রকল্পের এসএমডব্লিউ-৫ সিস্টেম স্থাপন লোকেশন হচ্ছে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর ও ভূ-মধ্যসাগর। তবে গ্রাউন্ড লোকেশন পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা।
প্রকল্পটি চালু হলে থ্রিজি মোবাইল সার্ভিসে চালু হওয়া ব্যান্ডউইথ চাহিদা পূরণে আরও সক্ষম হবে। এর ফলে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইথ চাহিদা মিটিয়ে ক্যাবল সংযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখা যাবে বলে আশা করছে সরকার। ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখা হবে।
প্রকল্পটির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি বিশ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। এর সঙ্গে এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের ১৪টি দেশের ১৬টি টেলিকম কোম্পানি যুক্ত আছে। বর্তমানে ক্যাবলে সমস্যা হলে বা কোনো কারণে কাটা পড়লে কিংবা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা মেরামত করতে ৭ থেকে ১০ দিন লেগে যায়। ফলে, তথ্য প্রযুক্তির কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এ থেকে উত্তরণ পেতে আমরা ব্যাকআপ হিসেবে নতুন সাবমেরিন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছি। এর ফলে, আমরা আরও ১ হাজার ৩০০ জিপিএস সাবমেরিন ক্যাবল ব্যান্ডউইথ পাবো।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, এ প্রকল্পের ফলে ডেটা ও ভয়েসের ক্ষেত্রে দেশের ব্যান্ডউইথ চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যাবে। ইন্টারনেট পৌঁছানো যাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। সেই সঙ্গে ইন্টারনেটের ক্যাপাসিটি ও স্পিড দু’টোই বাড়বে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এতে করে কল সেন্টার, সফটওয়্যার রফতানি, ডাটা এন্ট্রি খাত প্রসারিত হবে।
এছাড়া একনেক সভায় ‘বিসিক শিল্প নগরী, মিরসরাই’ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মোট ব্যয় ধরা হয় ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চলমান প্রকল্পটির মেয়াদ জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০১৬ সাল পর্যন্ত।
‘অন্তবর্তীকালীন পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ২শ’ ৫২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মেয়াদ মার্চ ২০১৫ থেকে জুন ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ‘পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যশিক্ষা’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪শ’ ১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০১৫ থেকে জুন ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে।
সভায় ‘দিনাজপুর-বিরল-পাকুয়া-রাধিকাপুর স্থলবন্দর’ প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার এ প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছে মার্চ ২০১৫ থেকে জুন ২০১৭ সাল পর্যন্ত।
একই সঙ্গে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও পল্লী উন্নয়ন অনুষদের সুবিধা সৃষ্টি’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি জুলাই ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স’ প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩শ’ ২৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ মার্চ ২০১০ থেকে জুন ২০১৮ সাল পর্যন্ত।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর’ প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩শ’ ২৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মেয়াদকাল মার্চ ২০১০ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ সাল পর্যন্ত।
সভায় ‘জাতীয় ভূমি জোনিং প্রকল্পের’ অনুমোদ দেওয়া হয়। যাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটি জুলাই ২০১২ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
‘বিএডিসি’র বিদ্যমান বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণ ব্যবস্থাদির আধুনিকীকরণ এবং উন্নয়ন’ প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়। যার মোট ব্যয় ২শ’ ৩১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ধরা হয়। প্রকল্পটি এপ্রিল ২০১৫ থেকে জুন ২০১৮ সাল নাগাদ বাস্তবায়িত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৫/আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা,
এমআইএস/আরএম/এনএস