মাওয়া থেকে ফিরে: মাওয়া গেলেই চোখে পড়বে কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগিয়ে চলেছে পদ্মাসেতুর কাজ। এর অদূরে চাররাস্তা মোড় সংলগ্নে কুমারভোগ।
গেট থেকে কয়েক পা হাঁটতেই দেখা গেল পরিকল্পিত একটি মসজিদ। সবেমাত্র আসরের নামায পড়ে বের হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন মুসল্লি।
সবাই পদ্মাসেতু প্রকল্পের পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা। এদের মধ্যে একজন হাজী ফয়জুল মোড়ল(৬৫)। প্রকল্পের কাজে দিয়েছেন বাপ দাদার ৪০ শতক জমি। এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পেয়েছেন ৭ শতক জমি ও ৫০ লাখ নগদ টাকা। সেই টাকা দিয়ে এখন সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন তিনি।
কেমন আছেন? প্রশ্ন করতেই হাত প্রসারিত করে পুনর্বাসন এলাকার চারপাশ দেখালেন তিনি। এরপর বলেন, এমন পরিবেশে সবাই ভালো থাকবে। আল্লাহ দিলে অনেক ভালো রাখছে। ৪০ শতক জমির বিনিময়ে বাড়ি করার জমি পাইছি। ঘরবাড়ি বিনিময়ে ৫০ লাখ টাকা পাইছি। সেই টাকা দিয়ে আল্লাহ দিলে হজও করছি। ’
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর রহমতে আমার স্ত্রী আছিয়া বেগম, বড় বোন মাকছুদা খাতুন ও মা হালিমা খাতুনও হজ করেছে। ১৩ লাখ টাকা খরচ করে হজ করেছি। এক সঙ্গে পদ্দাসেতুর টাকা না পাইলে হজ করতে পারতাম না। এখন আমরা সবাই আল্লাহর রহমতে হাজি বাড়ি। ’
মসজিদের সামনে আরও কথা হয়, হাজী শুকুর হাওলাদার, হাজী আদেল শেখ, হাজী ওমর কাওড়া, হাজী আবু বকর, হাজী ইমান আলী, হাজী আব্দুল খালেক ও হাজী আর্শেদ আলীর সঙ্গে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এখানকার অধিকাংশ মানুষই পদ্মাসেতুর টাকা পেয়ে হজ করেছেন।
হাজী ফয়জুল মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, কয়জনের নাম বলবো। কয়েক ঘর বাদে একটি করে হাজী আছে। আল্লাহ দিলে পদ্মাসেতুর টাকায় আমরা হজ করেছি। পদ্মাসেতুর আশীর্বাদে এটা হাজিপাড়া হয়ে গেছে। পুনর্বাসন এলাকা বললে ভুল হবে। পদ্মাসেতুর আশীর্বাদে এটা এখন হাজিপাড়া।
একখণ্ড সবুজ বেষ্টনীর মধ্যে কি নেই। সারি সারি দেবদারু, পেয়ারা, কাঁঠাল, আম, লিচু, কামরাঙা, লেবু ও রকমারী ফুল গাছের চোখ জোড়ানো সারি। মৎস প্রকল্প। নানা প্রজাতির মাছের লুটোপুটি। সবুজে ঘেরা স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভাল উপস্থিতি। প্রয়োজনীয় পানির ট্যাঙ্ক, ক্ষুদ্র কাঁচাবাজার ও পাঠাগার। স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ সুবিধাসহ প্রতিটি বাসার সঙ্গে পিচ ঢালা কালো পথের সংযোগ।
শেখের বেডি না থাকলে কিচ্চু পাইতাম না!
পুনর্বাসন কেন্দ্র ঘুরতে ঘুরতে কথা হলো আরেক হাজি ওমর আলীর সঙ্গে। তিনি ৫০ শতক জমি ও অবকাঠামোর(বাড়ি) বিনিময়ে এখানে ৭ শতক জমি ও ৫০ লাখ টাকা পেয়েছেন। এরপরে ৭ শতক জমির উপর নির্মাণ করছেন ২তলা বিশিষ্ট পাকা ঘর। তবে জমি এখনও তার নামে নিবন্ধন করা হয়নি।
হাজি ওমর আলী বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মাসেতুর কাজে ঘরবাড়ি ও জমি হারাইছি। বিনিময়ে সব পাইছি। বাড়তি আল্লাহর ঘরও(হজ্)ঘুরছি। আল্লাহ দিলে অনেক ভালো আছি। শেখের বেডি(শেখ হাসিনা) না থাকলে মনে হয় কিচ্চু(কিছু) পাইতাম না। ’
এর পাশেই নতুন করে বাড়ি তৈরি করছেন হাজি মনসুর আলী। জমি পদ্মাসেতু প্রকল্পে ব্যবহার হওয়ার কারণে তিনিও সব কিছু ফিরে পেয়েছেন। এই এলাকায় যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে এদের মধ্যে হাজির সংখ্যাই অধিক।
পুনর্বাসন কাজে সবাই সন্তোষজনকভাবে দেখছেন। ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন কাজও সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ ভাগ। মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলায় যথাযতভাবে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। সেতুর উভয় পাশে ৪টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে মোট ১ হাজার ৪২২ দশমিক ৭৫ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে।
বাকি ভূমি দখল বুঝে নেয়ার জন্য কাজ চলমান প্রকল্পের পুনর্বাসন কাযর্ক্রমের অগ্রগতি ৮০ ভাগ। ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য মোট ২ হাজার ৫৯২টি প্লটের মধ্যে ১ হাজার ২৭০টি প্লট হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৬০টি প্লট ভূমিহীন ক্ষতিগ্রস্তদের। বাকি কাজ খুব দ্রুত সময়ে হবে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।
সেতুর উভয় পাশে চারটি পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সবগুলোই পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এমন সবুজ বেষ্টনী ও হাজিপাড়ার(পুনর্বাসন কেন্দ্র) মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতায় কখন বেলা গড়িয়ে গেল টেরই পেলাম না।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৫
এমআইএস/এনএস/
** টেস্ট পিলারের টেস্ট ৩ হাজার টন!