ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

তারুণ্যের ক্রেজ

কফিহাউস কলম্বাস কফিশপ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
কফিহাউস কলম্বাস কফিশপ

ঢাকা: বাংলাসাহিত্য, শিল্পকলা কিংবা বাঙালি জীবনে কফিহাউসের কথা বার বার এসেছে। প্রখ্যাত শিল্পী মান্না দে’র গাওয়া সেই ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ গানটির সঙ্গে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত।



ওইগানের কথায় চোখের সামনে যে কফিহাউসের ছবি ভেসে ওঠে, সেটা অনেককেই স্মৃতিতাড়িত করে। এই যেমন- বাষ্প ওঠা কফিতে চুমুক দিতে দিতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা; বিশ্বের রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করার সেই মধুর দিনগুলির কথাই মনের চোখে ভেসে ওঠে।

চোখের সামনে ভেসে ওঠে কফিহাউসে তেমন কোনো কোলাহল থাকবে না। থাকবে শুধু বেগম আখতারের রাগ্রাশয়ী সঙ্গীত কিংবা লতা, হেমন্ত, মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কিংবা আরতি মুখোপাধ্যায়ের মন ভোলানো গানের হাল্কা সুর অথবা পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় শিল্পীর মনমাতানো গান। এর সঙ্গে কফির কাপে চুমুক দেওয়াটাই ছিল তখনকার তারুণ্যের ক্রেজ। অনেকেই ঠিক এ রকমই একটি কফিশপের খোঁজ করেন আজও।

রাজধানীর বনানীর ‘কলম্বাস কফিশপ’-এ এমন পরিবেশটাই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাইমিন মোস্তফা।

তিনি  বলেন, ‘কলম্বাস কফিশপ’-এ আমেরিকার ওহাইও’র বিখ্যাত কফি ব্র্যান্ড ‘ক্রিমসন কাপ কফি’ পরিবেশন করা হচ্ছে। আমরাই ‘ফার্স্ট ফ্রানচাইজি ইন বাংলাদেশ’।

কফিশপে সেলফি:
মোহাইমিন মোস্তফা বলেন, ২০০০ স্কয়ারফিটের এই শপে সেলফ সার্ভিসে কফি পান করতে পারবেন। কফির পাশাপাশি ডেজার্ট আইটেম হিসেবে পেস্ট্রির ব্যবস্থাও আছে। শপের বিভিন্ন পাশে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে, যার যেভাবে ভালো লাগবে, তিনি সেভাবেই কফি পান করতে পারবেন। আবার চাইলে একটু ফান ছবিও তুলতে পারবেন। আমরা শপের মধ্যে সেলফি কর্নারও রেখেছি।

পরিচ্ছন্নতা:
অনেকেই ভাবতে পারেন, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কফি পান শেষে পেপার-কাপটি কোথায় ফেলবেন! মজার ব্যাপার হচ্ছে, কলম্বাসে পেপার-কাপ ফেলবার জন্য ঝুঁড়ি আছে। তবে সেটা সবার অদৃশ্যই থাকবে। শপে গিয়ে ব্যাপারটা না দেখলে বিষয়টি আঁচ করা সত্যিই মুশকিল।
 
‘কলম্বাস কফিশপ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা চাই, এখানে ‘সোস্যাল গেদার’ (সামাজিক মিলনস্থান) তৈরি হোক। এখানে কাস্টমার নিজে মজাদার কফি ড্রিংকস তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটাও দেখতে পারবেন।

এখানে যারা কফি তৈরি করেন, তারাসহ প্রতিষ্ঠানের সবাই খুব বন্ধুভাবাপন্ন। আমাদের কর্মীরা সবাই আমেরিকা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সম্প্রতি, ক্রিমসন কাপের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিভ বেলেস ঢাকায় এসে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তার নির্দেশনায় প্রশিক্ষিত-কর্মীরা সব সময় একই মানের কফি পরিবেশন করবেন।

এই তরুণ উদ্যোক্তা জানালেন, পরিবারের কোনো ধরনের সহায়তা ছাড়াই কয়েক বন্ধু মিলে তারা এই কফিশপ গড়ে তুলেছেন।
 
মোহাইমিন মোস্তফা পড়াশুনা করতেন আমেরিকার ওহাইও’র স্টেট ইউভার্সিটিতে। একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন দুই সিনিয়র তারেক রাফি ভূঁইয়া, আয়েশা রওশন ভূঁইয়াও।

সেখানে পড়াশুনা শেষে তারা ঠিক করলেন, দেশে ফিরে কিছু একটা করবেন। সবাই মিলে তখন এই শপের পরিকল্পনা করেন। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে যুক্ত হন মোহাইমিন মোস্তফার বাল্যবন্ধু রেহানুর রহমান। তিনি তখন লন্ডনের ওয়ারউইক ইউনির্ভাসিটিতে পড়াশুনা করতেন। পরবর্তীতে তিনি এতে যুক্ত হন।  
 
‘কলম্বাস কফিশপ’-এর পরিচালক রেহানুর রহমান বলেন, আমরা শুধু আমেরিকান কফি পরিবেশন করে কাস্টমারদের তৃপ্ত করবো, তা নয়; আমরা পুরো শপে আমেরিকান সংস্কৃতির প্রতিফলন করেছি। ওহাইওতে আপনি যেমন পরিবেশে কফি পান করতে পারতেন, এখানেও সেই একই পরিবেশে কফি পান করতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমরা ওহাইও’র সর্ববৃহৎ কফি পরিবেশক ক্রিমসন কাপ কফি পরিবেশন করছি। কাস্টমাররা কফি পান করতে পারবেন, আবার বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আমাদের সে ব্যবস্থাও আছে।

কফিশপ খোলা থাকার বিষয়ে রেহানুর জানালেন, আমাদের কফিশপ প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকবে। এখানে এসপ্রেসো, ওভার আইস এবং ফ্রোজেন এই তিনভাবে হরেক রকমের কফি ড্রিংকসের স্বাদ নিতে পারবেন কাস্টমাররা। পুরো শপটা ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হয়েছে।

ক্রিমসন কাপ কফির যাত্রা:
১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করা ক্রিমসন কাপ কফি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮টি রাজ্যে পরিবেশিত হচ্ছে। তাদের রয়েছে আড়াইশয়েরও বেশি কফিশপ।

ঢাকায় এই বিখ্যাত কফি পরিবেশনের আগে লায়ন গ্রুপের পার্টনার কলম্বাস কফিশপকে বেশ কিছু প্রস্তুতি নিয়ে হয়েছে। এর একটি হলো- শপের ম্যানেজার এবং কাস্টমার সার্ভিসের কর্মীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। আবার সেখান থেকে বিশেষজ্ঞ এসে কর্মীদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। এ কারণে কলম্বাস কফিশপে কফি পরিবেশন করা হয়, মার্কিনি সংস্কৃতিতে। ফলে, এর স্বাদ আর আমেজ দুটোই এখানে পাওয়া যাবে।

এদিকে, কলম্বাস কফিশপকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন  এর চেয়ারম্যন মির্জা আবদুল খালেদ, পরিচালক সরফরাজ আনোয়ার উপল। অন্য পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন- তারেক রাফি ভূঁইয়া, আয়েশা রওশন ভূঁইয়া।  

রাজধানীর বনানীর ১১ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির দোতলায় কলম্বাস কফিশপ। ভেতরের অনেকটাই সাজানো হয়েছে কফির রঙে। স্বচ্ছ কাচঘেরা এই শপের ভেতরে বসে বাইরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সঙ্গে মিলিয়ে ভেতরের পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এর শৈল্পিক ডিজাইন আর কফির কড়া গন্ধ কলম্বাস কফিশপের ভেতরে আশ্চর্য এক অনুভূতি এনে দেয়।

উদ্বোধন:
২২ মে বিকেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলম্বাস কফিশপ-এর যাত্রা শুরু হয়। উদ্বোধন করেন অভিনয়শিল্পী অনন্ত ও বর্ষা।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সঙ্গীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার, ক্রিকেটার আশরাফুলসহ অনেকেই।

ঠিকানা:
কলম্বাস কফিশপ, ফোন- ০১৯৩৬ ০০০২০৮, বাসা- ২৫ (২য় তলা), রোড- ১১, ব্লক-এইচ, বনানী, ঢাকা।

ফেসবুক: facebook.com/columbuscoffeebd

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।