ঢাকা: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ঢাকা সফরে তার পাতে নানা পদের ইলিশ তুলে দেওয়া হলেও ছাড় দেওয়া হয়নি ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে।
তবে এবার এ বিষয়ে নমনীয় হতে পারে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের আগে দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা খুঁটিনাটি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ আর আলোচনা। বড় থেকে ছোট, কোনো বিষয়ই বাদ পড়ছে না। বাদ পড়ছে না ভারতে ইলিশ রপ্তানির বিষয়টিও। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকগুলোতেও ইলিশের বিষয়টিও স্থান পেয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বহু আগেই ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাতে কোনোভাবেই রাজি হয়নি। ধারণা করা হয়, এর সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর তাই তিস্তার বিষয়ে মমতা ব্যানার্জি যেমন শক্ত অবস্থানে তেমনি ইলিশের বিষয়ে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের সংসদে সংবিধান সংশোধন বিলটি পাশ হওয়ার পর আবারও আলোচনায় আসে তিস্তা চুক্তি। নরেন্দ্র মোদি চুক্তিটি সম্পন্ন করতে ঢাকা সফরে মমতা ব্যানার্জিকে সফর সঙ্গী করতে চান, এমন খবরও বেশ পুরনো। এমন খবরে ঢাকার বরফ কিছুটা গলতে শুরু করে। তাই আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে ভারতে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি।
তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের হাই প্রোফাইল সফরের আগে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। আর ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে বহুদিন ধরে ভারত আর্জি জানিয়ে আসছে। সে বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের মতো এ বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।
২০১৩ সালের আগস্ট থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করা হয়। এরপর থেকেই ভারত ইলিশ চেয়ে আর্জি জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি ঢাকা সফরে মমতা ব্যানার্জি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইলিশ না পাওয়ার কথা জানিয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রীও ইঙ্গিত দেন, তিস্তার পানি এলেই ইলিশ যাবে।
তাই এ বিষয়টির সঙ্গে এখনো রাজনীতি জড়িত বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাজারে ইলিশের সহজপ্রাপ্যতা বাড়াতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ হয়। এতে করে ইলিশের বড় গ্রাহক ভারত বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বিষয়টি সেখানেই থেমে নেই। উচ্চ পর্যায়েও এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ ভিভিআইপি সফরে (নরেন্দ্র মোদির) সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।
তবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভারতে ইলিশ যাওয়া থেমে নেই বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ব্যবসায়ীদেরও দাবি, সরকারিভাবে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ হলেও পাচার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছরই ভারতে পাচার হচ্ছে ইলিশ। অথচ সঠিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রপ্তানি কার্যক্রম আবার চালু করলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সাদা মাছের বাজার সৃষ্টি হতে পারে।
এ বিষয়ে মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ পথে ভারতের বাজারে ইলিশ পাচার হচ্ছে। এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। কেউ দিতেও পারবে না। পণ্য বিনিময় বা হুণ্ডির মাধ্যমে এসব অর্থ লেনদেন হয়। ফলে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমরা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে আসছি।
তিনি আরও বলেন, ২০০৭ বা ২০০৮ সালেও আমরা ইলিশের রপ্তানি কমাতে ট্যরিফ ভ্যালু বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। সেবার প্রতিটনে ট্যারিফ ধরা হয়েছিল ৭শ’ থেকে ৮শ’ ডলার। ফলে ভারতের ইলিশ কেনার পরিমান কমে যায়। এবারও সেটি করা যেত।
তবে নরেন্দ্র মোদীর সফরে ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা উঠবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
জেপি/আরএম