ঢাকা: মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নামসর্বস্ব কিছু বিজ্ঞাপনী সংস্থা। এসব সংস্থার এজেন্ট ও মাসলম্যানরা বিজ্ঞাপন পেতে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন।
সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জনসংযোগ কর্মকর্তাসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের ডিজিএম মোফাজ্জেল হোসেনকে লাঞ্চিত করেছে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কয়েকজন প্রতিনিধি।
রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের জরিপ থেকে জানা গেছে, দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর সব ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজ করছে ২৫টি বিজ্ঞাপনী সংস্থা।
এদের মধ্যে ওলিয়েন্ডার কমিউনিকেশন, নকশী অ্যাডভারটাইজিং, খান অ্যাডভারটাইজিং, গোমতী অ্যাডভারটাইজিং, দি রাজধানী অ্যাডভারটাইজিং, আপলিফট অ্যাডভারটাইজিং, রংধনু অ্যাড লিমিটেড, পারফেক্ট অ্যাডভারটাইজিং, অহনা অ্যাডভারটাইজিং, রানা অ্যাডভারটাইজিং, কনফিডেন্স অ্যাডভারটাইজিং, টপমোস্ট কমিউনিকেশন, স্পার্ক মিডিয়া, অয়ন অ্যাডভারটাইজিং ও অ্যাড ভিলেজের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সার্টিফিকেট, আয়কর সনদ ও বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র রয়েছে।
এছাড়া রুদ্র অ্যাডভারটাইজিং, তানিয়া অ্যাডভারটাইজিং, রনি অ্যাডভারটাইজিং, প্রান্ত অ্যাডভারটাইজিং, দি ওল্ড বে অ্যাডভারটাইজিং, আরএন কমিউনিকেশন, শাপলা মিডিয়া অ্যাডভারটাইজিং ও বকুল তলা অ্যাডভারটাইজিং এর হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সার্টিফিকেট, আয়কর সনদ ও বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র এবং কোনো ব্যাংকের কার্যাদেশ এর কপি পাওয়া যায়নি।
আর অস্তিত্বহীন এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তা-ব্যক্তিরা সরকারি দলের নাম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে। না দিলে দলবেঁধে ব্যাংকের ভেতরে গিয়ে হামলা করারও অভিযোগ আছে বিজ্ঞাপনী সংস্থার মালিকদের বিরুদ্ধে।
চলতি বছরের ১১ মে সোনালী ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোফাজ্জেল হোসেনের কক্ষে ঢুকে মারধর করে আরএন কমিউনিকেশনের মালিক শাহনুরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী।
যোগাযোগ করা হলে আরএন কমিউনিকেশনের মালিক শাহনুর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে ডিজিএম মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে আপোস করা হয়েছে।
এর কিছুদিন আগে আপলিফট অ্যাডভারটাইজিং মালিক দেলোয়ার নিজেকে যুবলীগ নেতা ও ফজলে নুর তাপসের লোক পরিচয় দেন। তার সংস্থার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন না দিলে এখান থেকে বদলি করা হবে বলেও হুমকি দেন মোফাজ্জেল হোসেনকে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, সরকারি ব্যাংকগুলোর জনসংযোগ বিভাগে টাকা না দিলে কোনো বিজ্ঞাপন পাওয়া যায় না। মোট বিলের একটি অংশ তাদেরকে দিতে হয়।
এ বিষয়ে মোফাজ্জেল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হয় ব্যাংকের প্রয়োজনে। এজন্য টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
খান অ্যাডভারটাইজিং এর মালিক লিয়াকত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নাম ঠিকানা ও অস্তিত্বহীন বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তাদের মারধর করছে। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের নাম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম মোফাজ্জেল হোসেনকে মারধরের কথা স্বীকার করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাবলিক রিলেশন অ্যাসোসিয়েশন অব স্টেট বাংক (পিআরএসবি) এর সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ব্যাংক থেকে অবৈধ সুবিধা নিতে তৎপর। সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৫
এসই/জেডএম