ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিমা কোম্পানির অবৈধ ব্যয় থামছে না

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৫
বিমা কোম্পানির অবৈধ ব্যয় থামছে না

ঢাকা: বছরের পর বছর পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডারদের টাকা অবৈধভাবে ইচ্ছামতো খরচ করছে দেশের জীবন বিমা কোম্পানিগুলো। সর্বশেষ ২০১৪ সালে সরকারি বিমা প্রতিষ্ঠান জীবন বিমা কর্পোরেশনসহ ১৭টি কোম্পানি অবৈধ ব্যয় করেছে ৩০৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।


 
এর আগের পাঁচ বছরে একইভাবে ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ১ লাখ টাকা অবৈধভাবে ব্যয় করে প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ শেষ ৬ বছরে দেশের জীবন বিমা কোম্পানিগুলো অবৈধভাবে ব্যয় করেছে ১ হাজার ৭৮৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
 
কোম্পানিগুলোর এমন বেপরোয়া অবৈধ ব্যয়ের কারণে পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডাররা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ অবৈধভাবে যে টাকা ব্যয় করা হচ্ছে তার ৯০ শতাংশই প্রতিষ্ঠানের পলিসিহোল্ডাদের প্রাপ্য। বাকি ১০ শতাংশের ভাগিদার শেয়ারহোল্ডাররা।
 
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে কোম্পানিগুলোর দেওয়া আর্থিক বিবরণীর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডারদের অর্থ আইন লঙ্ঘন করে সব থেকে বেশি খরচ করেছে পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স। ৬ বছরে প্রতিষ্ঠানটির এ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৪৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।
 
এর পরেই রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান জীবন বিমা কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ ব্যয়ের পরিমাণ ২৩১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ। প্রতিষ্ঠানটি আইনি সীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত খরচ করেছে ১৮৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
 
শত কোটি টাকার উপরে অবৈধ ব্যয়ের তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে পদ্মা ইসলামী লাইফ ১৬২ কোটি ২৫ লাখ টাকা, সন্ধানী লাইফ ১৪৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, প্রগতি লাইফ ১৩৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা ও গোল্ডেন লাইফ ১২৪ কোটি ৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।
 
অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সান লাইফ অবৈধভাবে ব্যয় করেছে ৮৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সানফ্লাওয়ার লাইফ ৭৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা, রূপালী লাইফ ৫০ কোটি ২৩ লাখ টাকা, প্রাইম ইসলামী লাইফ ৬৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা, মেঘনা লাইফ ৬৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ৫৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।
 
এছড়া ন্যাশনাল লাইফ ৪৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, হোমল্যান্ড লাইফ ৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বায়রা লাইফ ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও প্রগ্রেসিভ লাইফ ২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ব্যয় করেছে।
 
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও সন্ধানী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল ইসলাম টিটু বাংলানিউজকে বলেন, আইনে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের যে সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। যে কারণে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর পক্ষে আইনি সীমার ভিতরে থেকে খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না।
 
তিনি বলেন, আতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে মানেই এই নয় কোম্পানিগুলো গ্রাহকের টাকা খেয়ে ফেলছে। কোম্পানির ব্যবসা বাড়াতে গেলে অতিরিক্ত খরচ হবেই। তবে দেখতে হবে কোম্পানিগুলো পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে কি না।
 
খরচ আইনি সীমায় করলে পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডাররা আরও বেশি লভ্যাংশ পেত- বাংলানিউজের পক্ষ থেকে পাল্টা এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বেশি খরচ করতে হবে আমি তা বলছি না। খরচ কমে হলে তা অবশ্যই ভালো হতো। তবে খরচ বেশি করা মানেই ধ্বংস করে ফেলা নয়।
 
জীবন বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয় ১৯৫৮ সালের বিমা বিধির ৩৯ ধারা অনুযায়ী। এ ধারা অনুযায়ী বিমা ব্যবসার অনুমতি পাওয়ার পর একটি কোম্পানি তিন বছর পর্যন্ত প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের সাড়ে ৯৭ শতাংশ এবং নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের সাড়ে ২২ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করতে পারে।
 
যা চার বছর থেকে ছয় বছর পর্যন্ত সাড়ে ৯৬ শতাংশ ও ২০ শতাংশ এবং সাত বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ ও ১৯ শতাংশ। আর ব্যবসায়িক কার্যক্রম ১০ বছর অতিক্রম করলে ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের ৯০ শতাংশ এবং নবায়নের ১৯ শতাংশ।
 
তবে কোনো কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় ১০ কোটি বা তার বেশি হলে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের ৯০ শতাংশ এবং নবয়ান প্রিমিয়াম আয়ের ১৫ শতাংশের বেশি খরচ করতে পারবে না।
 
আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানি অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ খরচ করতে পারে না। এ বিষয়ে কোম্পানিগুলোকে বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এরপরও যে কোম্পানি আইনি সীমার মধ্যে থেকে খরচ করতে পারছে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
তিনি বলেন, আইনে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের যে সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা ঠিকই আছে। কয়েকটি কোম্পানি একাধিক বছর নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যয় করেছে। অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের আড়ালে কোম্পানিগুলো অন্য কোনো অনিয়ম করছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।
 
শেফাক আহমেদ আরও বলেন, কোম্পানিগুলো আইনি সীমা লঙ্ঘন করে ব্যয় করার কারণে পলিসিহোল্ডাররা ভালো বোনাস (লভ্যাংশ) পাচ্ছেন না। শেয়ারহোল্ডাররাও কম বোনাস পাচ্ছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৫
এএসএস/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।