বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে: বিশ্বাস করুন, আপনিই সুপারম্যান। আমরা সবাই সুপারম্যান।
বৃহস্পতিবার (২৮ মে) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সামাজিক ব্যবসা দিবসের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন মূল বক্তা।
তিনি বলেন, তরুণরা অনেক কিছু করতে পারে। তাদেরকে সে সুযোগ করে দিতে হবে। আমরা যদি তরুণদের শক্তিতে ভরসা রাখি, তাদের কাজের সুযোগ দেই, তারা এ সমাজের জন্য অনেক কিছু করবে।
ইউনূস বলেন, আমরা মানুষ। আমরা রোবট নই। মানুষ সব দিক থেকেই মানুষ। আমরা সংবেদনশীল, আমরা বুদ্ধিসম্পন্ন, আমরা ভাবতে পারি, ভালোবাসতে পারি। তাই আমরা অমূল্য। তরুণদের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তারাই হবে মেগাপাওয়ার। অন্য মেগাপাওয়ার প্রযুক্তি, সামাজিক ব্যবসা। গুরুত্বপূর্ণ সুশাসন। সব মিলিয়ে আসবে টেকসই সমাজ।
‘অর্থাৎ লক্ষ্য অর্জনে তিনটি জিরো পেতে হবে এবং চারটি মহাশক্তি নিয়ে এগোতে হবে’- সারমর্ম বলেন তিনি।
ইউনূস বলেন, আমরা যা করি, তা একভাবে ফিরে আসে। তাই হতাশা নয়, শুধুই কাজ ও আনন্দ। বিশ্বকে এগিয়ে নিতেই আমাদের যাবতীয় প্রক্রিয়া।
ইউনূস সকালের বক্তব্যের রেশ ধরেই লক্ষ্য ও পথের কথাগুলো বলেন সমাপনীতে ধন্যবাদ জানানো বক্তব্যে।
তিনি আরও বলেন, সবাই কোনো না কোনো ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। সেই ক্ষমতাকে চর্চা করতে হয়। শক্তিতে পরিণত করতে হয়। মানুষ যে ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়, তা যদি অকার্যকর হয়, তবে তার জন্য ব্যক্তি নয়, সমাজ দায়ী।
ইউনূস বলেন, যার যে পর্যন্ত যাওয়ার স্বপ্ন ও ক্ষমতা, তাকে সেখানে পৌঁছাতে সাহায্য করতে হবে। প্রত্যেককেই নিজেকে গড়তে হবে, নিজের সৃজনশীলতা বের করে আনতে হবে। ব্যক্তিগত স্পৃহাকে সম্মান জানাতে হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকেই ব্যবসা ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা-নিরাপত্তা চায়। কোনো মানুষই দরিদ্র নয়। তাই দারিদ্র্য দূর করতে হবে। তবেই কাউকে দরিদ্র বলার অভ্যাস দূরে হবে।
ইউনূস বলেন, বিশ্ব একটি পরিবার। এতে স্ট্রাগলের গল্প থাকবে, গান থাকবে, নাচ থাকবে। হতাশ হওয়া চলবে না।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ক্লান্তি আসার কথা। কিন্তু সেটি দেখিনি কারও। সবাই অনেক উদ্যমী। যতটা ধৈর্য সবাই ধরেছেন, অনেক ধন্যবাদ।
এবারের মতো শেষ হল সামাজিক ব্যবসা দিবসের বর্ণাঢ্য আয়োজন। বিশ্বনেতাদের সরব অংশগ্রহণে দিনব্যাপী আয়োজনের শেষের দিকে লাল-সাদা পোশাকের কয়েকজন কিশোরী নৃত্যে মন মাতায় সবার।
ইউনূস সেন্টার ষষ্ঠবারের মতো দিবসটি পালন করলো। সামাজিক ব্যবসা ধারণার প্রবর্তক ড. ইউনূসের জন্মদিনে (২৮ জুন) সচরাচর দিবসটি পালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু আসন্ন রমজানের বিষয়টি বিবেচনায় এবার ২৮ মে দিবসটি পালন করা হলো।
বিভিন্ন সেশনে নেতারা বলেন, মানুষ নিজেদের অন্তর্নিহিত শক্তিতেই এগোবে, কারও করুণায় নয়। গ্রামীণ তাদের শক্তিকে কেবল উৎসাহিত করবে। একজন মানুষ কখনো ‘বিনা কাজের’ হতে পারে না। প্রত্যেকেরই শক্তি রয়েছে নিজের দায়িত্ব নেওয়ার। কিছু না কিছু করার, প্রয়োজন কেবল কিছু সহযোগিতা।
‘আমরা চাকরি প্রার্থী নই, আমরা চাকরিদাতা, যুব বেকারত্বকে উদ্যোক্তায় রূপান্তর (উই আর নট জব সিকারস, উই আর জব গিভারস- টার্নিং আনএমপ্লয়মেন্ট টু এন্টারপ্রেনারশিপ)- এবারের দিবসের মূল প্রতিপাদ্য।
ইউনূস সেন্টার থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার (২৯ মে) গ্রামীণ ব্যাংকের সদর দফতরেই দিবসের মূল উপজীব্য নিয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাতেও বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৫
এসকেএস/জেডএস