ঢাকা: সেবার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখা আর প্রতিনিয়ত তাতে নতুন নতুন মাত্রা যোগ করার প্রত্যয় নিয়ে ঢাকায় ১ জুন (সোমবার) চালু হচ্ছে আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল লে মেরিডিয়ান। কর্তৃপক্ষ একে বলছেন ‘সফট লঞ্চিং’।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুই কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে রাজধানীর খিলক্ষেত-নিকুঞ্জ২ এ অত্যাধুনিক নকশায় গড়ে উঠেছে এই হোটেল ভবন। কি ব্যবসায়ী, কি পর্যটক, যে কারো জন্যই এই হোটেল হয়ে উঠবে প্রধান আকর্ষণ, সেবার মানে সেই অর্জনই নিশ্চিত করতে চায় লে মেরিডিয়ান-ঢাকার কর্তৃপক্ষ।
স্টারউডস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইনকর্পোরেটেড’র একটি প্রতিষ্ঠান এই লে মেরিডিয়ান।
বাংলানিউজের কথা হচ্ছিলো লে মেরিডিয়ানের মহাব্যবস্থাপক আশবানি নায়ারের সঙ্গে। তিনিই জানাচ্ছিলেন সেবার মানে তাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা। বললেন, ‘আমরা মেহমানদের আমন্ত্রণ জানাতে চাই, আসুন দেখে যান আমাদের সেবার মান, আধুনিক সাজ-সজ্জা, আর উপভোগ করুন নব নব আবিষ্কারের অসীম সুযোগ। ’
আশবানি নায়ার এর আগে ভারতের জয়পুরের লে মেরিডিয়ানের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরে বাংলানিউজকে হোটেলটি ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন এর মার্কেটিং কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার জাইরিন সুলতানা লুপা। তিনিই দেখাচ্ছিলেন হোটেলের ভেতরে প্রতি পরতে পরতে কিভাবে তুলে ধরা হয়েছে আবহমান বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে। আবার কেমন করেই তা স্থান করে নিয়েছে বিলাসবহুল পাশ্চাত্য ধাচের সব আয়োজনের মাঝে।
ফ্রান্স থেকে মূল উদ্যোগ তাই লে মেরেডিয়ানের সকল চেইন হোটেলেই সাজ-সজ্জা, নকশায় তাদের চিত্র-শিল্পকলার ব্যবহার থাকেই। আর তার সঙ্গে ঢাকা-লেমেরেডিয়ান পেয়েছে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির ছোঁয়া। ফলে দুইয়ের সমন্বয়ে এই হোটেল পেয়েছে ভিন্ন এক অভিব্যক্তি।
আশবানি নায়ার বলছিলেন, লে মেরিডিয়ান-ঢাকা এরই মধ্যে এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগরীয় যেকোনও ভেঞ্চারে হয়ে উঠেছে একটি রেফারেন্স নেম। এই হোটেল তৈরিতে সেবার পাশাপাশি সাজ-সজ্জাও গুরুত্ব বেশি পেয়েছে। কেউ নতুন উদ্যোগ নিতে গেলে বলা হচ্ছে লে মেরিডিয়ান ঢাকা দেখে আসো, ওদের মতো করে বানাও।
ভারী মোলায়েম কার্পেটে মোড়া, অত্যাধুনিক সাজসজ্জার হোটেলের প্রতিটি ফ্লোরে ফ্লোরে, দেয়ালে দেয়ালে চোখ আটকে যেতে বাধ্য। আন্তর্জাতিক নামকরা হোটেলগুলোর মান যাদের চোখে ধরে আছে তারা লে মেরিডিয়ানকে তার চেয়েও বেশি কিছু ভাবতে পারবেন, দাবি জাইরিন সুলতানার।
ঢুকেই মূল লবি। কিন্তু জাইরিন বললেন লবি নয়, আমরা বলছি লে মেরিডিয়ান হাব। নাম দেওয়া হয়েছে ল্যাটিটিউড-২৩। হোটেলে ঢুকেই ল্যাটিটিউড-২৩ তে চোখ আটকে যাবে কাচের দেয়ালে। বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি প্রাধান্য পেয়েছে দেয়ালের ছবিতে। তবে একটু উপরের দিকে তাকালে সাদা ভুমিতে কালো কাজ করা খাজে খাজে ঘনবসতির ঢাকার এক শৈল্পিক উপস্থাপনা। একদিকে আলোর কাজে ফুটে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। লে মেরিডিয়ান হাবে গোছানো অথচ যত্রতত্র বসার সুযোগ। তবে পুরোটাই যেনো এক পাঠাগার। একপাশে টেলিভিশন মেগাস্ক্রিনের সামনে আড্ডার টেবিলও। তাতে বসে, হেলান দিয়ে খবরের কাগজ পড়ার সুযোগ যেমন থাকবে, তেমনি কেউ যদি একা হতে চান, সময়টি কাটিয়ে দিতে চান নিরিবিলি বসে তার জন্যও রয়েছে ব্যবস্থা। মূলত সৃজনশীল মানুষের সম্মিলনস্থলই হবে এই লে মেরিডিয়ান হাব বা ল্যাটিটিউড ২৩, বলছিলেন জাইরিন সুলতানা।
আসবাবের সবগুলো লে মেরিডিয়ানের ব্র্যান্ডেড। জাইরিন বলছিলেন, আমরা লে মেরেডিয়ান ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়ে পুরোই সচেতন।
এগিয়ে গেলে বিজনেস কর্নার। কোনেও কর্পোরেট প্রধানের অফিস ঠিক যেমন হয় এর সাজসজ্জায় তার এতটুকু কমতি রাখা হয়নি।
কেউ ব্যবসায়ী কাজে বাংলাদেশে এসে যদি কয়েকদিন অবস্থান করেন তার জন্য পুরোপুরি নিজের অফিসকেই এখানে পাওয়া সম্ভব। পুরো বিজনেস কর্নার ভাড়া করে নিজে অফিস সাজিয়ে বসতে পারবেন। সঙ্গে রয়েছে ছোট্ট মিটিং রুম। এই রুমের সজ্জ্বায় দেয়ালে চোখে পড়লো ঢাকাই জামদানির নকশা। তবে সে নকশা সুতোয় নয় রাবারের কারুকাজ।
অতিথিদের রুমগুলোর একটি ঘুরে দেখা গেলো প্রতিটি প্রশস্ত কক্ষের সাজসজ্জা আন্তর্জাতিক মানের নামকরা যেকোনও হোটেল কক্ষের সমকক্ষ। তাহলে বেশি কি রয়েছে? সে প্রশ্নে জাইরিন জানালেন, এর কার্পেট, দেয়াল, লাইটিং, বেডিং, রেস্টরুম, সাজসজ্জা সবকিছুতেই রয়েছে ভিন্নতা ও স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তি কিছু। টেলিভিশন স্ক্রিনকে মাল্টিমিডিয়া হিসেবে ব্যবহারের সুযোগও রয়েছে বলে জানালেন তিনি। আর প্রতিটি কক্ষেই উচ্চগতির ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি।
এর বহুমাত্রিক, সম্পৃক্তরা পরিবেশ যে কোনও বোর্ডারকে তার এই হোটেলে অবস্থানের মানকে বাড়িয়ে তুলেবে, বলেন জাইরিন।
খাবারের কি আয়োজন? ঘুরে ঘুরে দেখা গেলো প্রস্তুত হচ্ছে কনসেপচুয়াল ইতালীয় রেস্টুরেন্ট ‘ফাবোলা’। সেখান থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্মুক্ত রানওয়ে আর পাশেই ডালপালা বিস্তৃত গাছে সবুজের সমারোহ একসাথে চোখে পড়ে। ফাবোলায় মিলবে জনপ্রিয় ইতালীয় খাবার।
ভূ-মধ্যসাগরীয় কুজিন ‘ওলিয়া’ সাজানো হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মধ্যপ্রাচ্যের সাজে। এতে থাকবে তুরষ্ক, ইরানীয় খাবারের প্রাধান্য।
আঞ্চলিক আর আন্তর্জাতিক খাবারের সমারোহ থাকবে ‘লেটেস্ট রেসিপি’ নামের মূল রেস্তঁরায়। তিনবেলা বুফে খাবার পরিবেশনা থাকবে। খাবারের আন্তর্জাতিক মান ও দেশীয় স্বাদ এই হোটেলের বিশষত্ব হবে সেটাই অঙ্গীকার। গরম গরম রান্না করেই পরিবেশনা করবেন এর পাঁচকরা। এই রেস্টুরেন্টে রয়েছে আলাদা কক্ষে বসে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ বা ডিনার মিটিং করারও ব্যবস্থা।
আর এর পাবকে সাজানো হয়েছে পুরো ব্রিটিশ ঢংয়ে। নাম দেওয়া হয়েছে ফিফটিন অ্যাভাব। এছাড়াও রয়েছে পুলসাইড বারও।
স্পা, হেলথ ক্লাব, রুফটপ সুইমিং পুল এসবের ব্যবস্থাতো রয়েছেই।
৩০৪টি গেস্টরুমের ১০৬ চালু করে সোমবার শুরু হচ্ছে এই হোটেলের প্রাথমিক যাত্রা।
লে মেরিডিয়ান ঢাকার সবচেয়ে বিলাসবহুল, সবচেয়ে বড়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সবচেয়ে কাছের একটি হোটেল। এখানে প্রতিটি অতিথি তার দেওয়া অর্থের বিনিময়ে ন্যয্য সেবা পাবেন।
হোটেলের ৯৯ শতাংশ কর্মীই বাংলাদেশি। তবে তারা আন্তর্জাতিকভাবে পেশাদারি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। মেধাবীদের দেশে এনে তাদের দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি হোটেল চালনাই লে মেরিডিয়ান-ঢাকার মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমেই অগ্রসরমান। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি এখন বাংলাদেশে আসছে। এ অবস্থায় ঢাকায় লে মেরিডিয়ানের মতো একটি হোটেলের খুব প্রয়োজন, বললেন আশবানি নায়ার।
বাংলাদেশ সময় ১৭০০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
এমএমকে/