ঢাকা: নিমতলী ট্রাজেডির পাঁচ বছর পেরুলেও পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে সরানো হয়নি রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের দোকান ও গুদাম। উল্টো দুর্ঘটনাস্থলে নির্মিত নতুন ভবনে চলছে কেমিক্যাল ব্যবসা।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের দাবি, আরেকটি নিমতলী ট্রাজেডির আগেই পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের দোকান ও গুদাম অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এদিকে, এসব কেমিক্যালের দোকান অন্যত্র না সরিয়ে উল্টো নতুন করে ব্যবসায়ীদের লাইন্সেস দেওয়ায় প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জল ও পরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. ইনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, নিমতলী ট্রাজেডির পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঢাকাসহ দেশে আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের কেমিক্যালের দোকান অপসারণের উদ্যোগ নেয়। সেই সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিলো। কিন্তু কিছুদিন পরে কেন যেন সেসব উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেল।
তিনি বলেন, প্রশাসন যদি আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল ব্যবসার জন্য লাইন্সেস দেয়, তাহলে আমাদের কি করার থাকে।
এই এলাকায় আবারও দুর্ঘটনার সম্ভবনার কথা উল্লেখ করে ড. ইনামুল হক বলেন, আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের কেমিক্যাল দোকান দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।
এজন্য সরকারি নীতি থাকার পাশাপাশি আইন প্রয়োগেও প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
পাঁচ বছর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটারায় কেমিক্যাল গুদামে বিস্ফোরণে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে নিমতলীর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে গড়ে ওঠা নতুন ভবনে চলছে কেমিক্যাল ব্যবসা। ভবনের নিচতলায় ওয়াটার সিকিউরিটি টেকনোলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠান কেমিক্যালের ব্যবসা করছে।
এই প্রতিষ্ঠানের কেমিস্ট খালিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ভবনের তিনতলা ও নিচতলায় তাদের দু’টি গুদাম রয়েছে। একমাস পর গুদাম দু’টি সরিয়ে দেওয়া হবে।
আবাসিক এলাকায় এধরনের ব্যবসা ঠিক কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো কোনো কেমিক্যাল নয়। লিকুইড ডিটারজেন্ট।
অন্যদিকে সোমবার (০১ মে) দুপুরে নিমতলীতে পাঁচদফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নাগরিক সমাজ। তারা পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের দোকান সরিয়ে ফেলা, ৩ জুন ‘নিমতলী ট্রাজেডি দিবস ঘোষণা এবং নিহত ১২৪ জনের স্মরণে ‘নিমতলী ট্রাজেডি স্মৃতিস্তম্ভ’ নিমার্ণ, ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান, আগামী এক মাসের মধ্যে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের দোকান ও ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোর হোল্ডিংস চিহ্নিত এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সংরক্ষিত জলধারার গুরুত্ব বিবেচনা রেখে জলধারা আইনকে কার্যকর করা দাবি জানান।
নিমতলী ট্রাজেডির ঘটনায় পরিবারের ছয় সদস্যকে হারানো স্বপন জানান, নিমতলীর ট্রাজেডিতে আমার পরিবারের ছয়জন মারা গেছেন। ভাগ্যক্রমে আমি ও আমার ছোট ভাই বেঁচে আছি।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ছোট ভাইকে নিয়ে ৫৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি। সেই বাড়িটি এখন দখল হয়ে যাচ্ছে।
নিরীহ ভেবে কতিপয় প্রভাবশালী বাড়িটি দখল করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘন্টা, জু১, ২০১৫
এনএ