ঢাকা: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্যা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) বলছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের উপরে নিতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। আর জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান বেসরকারি খাতের।
‘সরকার বাজেটের ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৫৬ হাজার কোটি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এরমধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেই নেওয়া হবে ৩৮ কোটি টাকা। সরকারের ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা বাড়ায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রাপ্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ’
শনিবার (০৬ জুন) এফবিসিসিআই সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।
এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নতুন নির্বাচিত সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ ও প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ৩৮ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ বাদ দিয়ে বাকি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার বেড়ে যেতে পারে। বেড়ে যেতে পারে ব্যাংক সুদের হারও। ফলে সরকারের মোটা অঙ্কের ব্যাংক ঋণ নেওয়ার কারণে ও সুদের হার বাড়ার আশঙ্কায় বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমেদ বলেন, বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো প্রয়োজন। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট ছড়া শিল্পায়ন তরান্বিত করা সম্ভব নয়।
বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেও প্রস্তাবিত বাজেটকে দেশীয় শিল্প সহায়ক বাজেট বলছে এফবিসিসিআই। এর কারণ হিসেবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম প্রস্তাবিত বাজেটে তার অধিকাংশ রাখা হয়েছে। এবারই প্রথম অর্থমন্ত্রীর মুখে বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা শুনেছি।
এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে মাতলুব আহমেদ বলেন, সিপিডি ব্যবসা করে না। ব্যবসা করি আমরা। আমরা বুঝি কোথায় ব্যথা লাগছে, কোথায় লাগছে না। সরকার রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা ব্যবসায়ীদের উপর কোনো চাপের প্রভাব ফেলবে না। আমরা শান্তিতে থাকবো।
মাতলুব বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি উন্নয়ন, কৃষি গবেষণা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে বেশকিছু উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। তবে কৃষকরা যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সে বিষয়ে চিন্তা করা জরুরি। আর স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও বেসরকরি বিনিয়োগ বাড়াতে জেলায় জেলায় কিডনি ও ক্যান্সারসহ জটিল রোগের হাসপাতাল স্থাপনে করমুক্ত সুবিধা দেওয়া উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন পণ্যের কর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা কমানোর দাবি জানানো হয়। এরমধ্যে মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ প্রত্যাহার করা এবং রিকন্ডিশন হাইব্রিড গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া।
এছাড়া ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীদের টার্নওভার কর, স্বর্ণ ও রৌপ্যের দোকানের ভ্যাট, যোগানদারদের সেবার মূসক, সুপারশপের ভ্যাট আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া প্রস্তাব করা হয়।
তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত পণ্যসহ সব রফতানি পণ্যের রফতানি মূল্যের উপর প্রস্তাবিত এক শতাংশ উৎস কর প্রত্যাহার করে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই।
এর কারণ হিসেবে সংগঠনটি বলছে, এক শতাংশ উৎস কর ধার্য করা হলে রফতানিকারকরা বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। ফলে ২০২১ সালের মধ্যে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন কঠিন হবে।
রমজান মাসের ইফতার সামগ্রী বিক্রির উপর ভ্যাট আরোপ না করার প্রস্তাব দিয়ে এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৫/আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা
এএসএস/এএ