ঢাকা: রাজস্ব আদায়ে নতুন করে খুঁজে পাওয়া করদাতাদের ওপর জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সোমবার (৮ জুন) বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
এর আগে অর্থমন্ত্রী বাজেটে রাজস্ব অর্জন ও আগামী বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা দেন।
মুহিত বলেন, এনবিআর ঢাকা ও এর আশপাশের জেলায় যে জরিপ করেছে তাতে বর্তমান করদাতার চেয়ে দ্বিগুণ নতুন করদাতা খুঁজে পেয়েছে।
বর্তমানে ১১ লাখ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর দেয়। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এবার খুঁজে পাওয়া নতুন করদাতাদের ওপর ‘আক্রমণ’ করা হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এনবিআর’র জরিপে সম্পদ, বাড়ি, গাড়ি মালিকদের ওপর যে জরিপ করেছে তাতে ১১ লাখের বেশি করদাতা খুঁজে পেয়েছে। তাদের কাছ থেকে কর আদায় করা হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে আয়কর ও করপোরেট কর রাজস্ব আদায়ে নাম্বার ওয়ান হচ্ছে। এর আগে কখনও এ দুইটি রেভিনিউ আদায়ে নাম্বার ওয়ান ছিল না।
ঘোষিত বাজেটে আয়কর লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা করা হয়েছে।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, লক্ষ্যমাত্রা উচ্চবিলাসী হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম।
গত ছয় বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’র লোকবল ১৩ হাজার থেকে ২২ হাজার ৩৭০ জন হয়েছে। দেওয়া হয়েছে রাজস্ব আদায়ে উচ্চ প্রশিক্ষণ। জনবল ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হবে।
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২২ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরে ৩০ শতাংশ অর্জিত হবে বলে জোর দেন তিনি।
তিনি জানান, রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক থাকবে না।
আগামী বাজেটের আয়কর বিষয়ে ঢাকার বাইরে বেশি মনোযোগ দেওয়া হবে। করদাতা খুঁজে বের করতে ঢাকার বাইরে জরিপ অব্যাহত থাকবে।
উপজেলায় কর অফিস সম্পর্কে তিনি বলেন, কর আদায়ে উপজেলা বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আয়কর দেওয়ার উপযোগী লোকজন আছে। ধনী শুধু শহর নয়, গ্রামেও আছে। জরিপ করে তা বের করা হবে। উপজেলায় কর আদায়ে মনোযোগী হতে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে সব উপজেলায় কর অফিস করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পরিকল্পনা মাফিক বছরের প্রথম থেকে কীভাবে জাম্প দেওয়া যায় এবং করদাতাদের ধরা যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাবিলাসী বলে স্বীকার করে মুহিত বলেন, এ টার্গেট কীভাবে পূরণ করা যায়, সে বিষয়ে কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্যাক্স রেট বাড়ানো হয়নি। নতুন কিছু পণ্যকে ট্যাক্সের আওতায় আনা হয়েছে। তবে আয়কর ও করপোরেট থেকে বেশিরভাগ কর আদায় করা হবে। ন্যূনতম কর অপরিবর্তিত থাকবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ন্যূনতম কর হার একই রেখে বাকি সিটি করপোশনসহ সব জেলা একই হারে ন্যূনতম কর হার নির্ধারণ করা হবে।
রাজস্ব প্রশাসনে ঘুষ, হয়রানি জিরো টলারেন্সে আসলে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব এমন প্রশ্নে মুহিত স্বীকার করে বলেন, রাজস্ব প্রশাসনে ঘুষ, দুর্নীতি হয়রানি হয়। শুধু রাজস্ব প্রশাসন নয় ঘুষ, দুনীর্তি, হয়রানি জাতীয় ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তবে এর পরিমাণ অনেক কমে গেছে বলেও মন্তব্য তিনি।
তিনি বলেন, রাজস্ব প্রশাসন বর্তমানে কোনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগে একজন রাজস্ব কর্মকর্তাকে দেখলে মানুষ পালিয়ে যেতো। এখন তা হয় না। কর প্রশাসন করদাতাদের মানসিকতা কিছুটা পরিবর্তন করেছেন।
দেশের যথেষ্ট মানুষ বর্তমানে আধুনিক ধারণা ধারক হলেও চারিত্রিক যে অবনতি হচ্ছে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রাজস্ব আদায়ের ‘ধাক্কা’ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আদায়ে ‘ধাক্কা’ ওয়ান অব দি স্টেপ। রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়াতে কর্মকর্তাদেরও ‘ধাক্কা’ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৫ (আপডেট: ১৮৩৭)
আরইউ/টিআই