যশোর: যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্যান্য ফসলের চেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে সবজি চাষ।
সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষ হচ্ছে বাহারি সবজির।
গ্রীষ্মের এ মৌসুমে এসব এলাকার বিরান মাঠে এখন সবজির চাষ হচ্ছে পুরোদমে। যেদিকে চোখ যায়, মাঠের পর মাঠ শুধু সবুজের সমারোহ।
স্থানীয় কৃষি কর্তারা জানালেন, যশোরের আট উপজেলার মধ্যে শুধু সদর উপজেলাতেই চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ হয়েছে। এসব জমিতে উৎপাদিত করলা, পটল, বেগুন, কুমড়া, লাউ, ঝিঙে, কাকরোল, বেগুন, কাঁচা মরিচ, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি স্থানীয় সাতমাইল বাজারে বিক্রি হয়। এরপর সেগুলো হাত ঘুরে ট্রাকে করে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সদর উপজেলায় ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বেগুন, ৪৭৫ হেক্টর জমিতে পটল, ২৫ হেক্টর জমিতে কাকরোল, ৪৪ হেক্টর জমিতে চিচিঙ্গা, ৪০ হেক্টর জমিতে ঝিঙা, ২৪০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া, ১১০ হেক্টর জমিতে উস্তে, ১১০ হেক্টর জমিতে ডাঁটা, ২৫৮ হেক্টর জমিতে করলা, ৯৫ হেক্টর জমিতে পুঁইশাক, ৪৫ হেক্টর জমিতে ঢেঁড়শ, ৩৫ হেক্টর জমিতে লতি কচুঁ, ১৬০ হেক্টর জমিতে মুখী কচুঁ, ১০৫ হেক্টর জমিতে খিরাই, ৪০ হেক্টর জমিতে চালকুমড়া, ৯৫ হেক্টর জমিতে লাউ, ৭৫ হেক্টর জমিতে কাচ কলা, ৬০ হেক্টর জমিতে বিচি কলা, ১১০ হেক্টর জমিতে সবুজ শাক, ২৫ হেক্টর জমিতে মেটে আলু, ১৫ হেক্টর জমিতে শঁসা, ৭৫ হেক্টর জমিতে ওল কচুঁ, ৬০ হেক্টর জমিতে পেঁপে ও ১২০ হেক্টর জমিতে লাল শাকের চাষ করা হয়েছে।
জানা যায়, সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে চলতি মৌসুমে ২৫৮ হেক্টর জমিতে করলার চাষ হয়েছে। এসব জমিতে ফলনও হচ্ছে বেশ। অন্য সময়ের তুলনায় এবার গরমের প্রকোপ বেশি থাকায় করলার চাহিদাও বেশি। ফলে করলা চাষিরা এবার বেশ লাভের মুখ দেখছেন।
এছাড়াও এ এলাকার পটল, বেগুন, কাকরোলসহ অন্যান্য সবজিরও তুলনামূলক ভালো চাহিদা রয়েছে। বাজারে এর দাম পাওয়া যাচ্ছে ভালো।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর সদর উপজেলার প্রতিটি মাঠেই রয়েছে অসংখ্য করলা খেত। এসব খেতে বাঁশের তৈরি মাচানের উপর করলা গাছের ডগায় পর্যাপ্ত ফলন হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি মাঠেই আবাদ হয়েছে পটল, বেগুন, কাকরোলসহ বিভিন্ন ধরণের নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি।
এসব এলাকার কৃষকরা জানান, বর্তমান বাজারে সবজির ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। আসন্ন রমজান মাসে দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে। এতে তারা লাভের মুখ দেখতে পাবেন।
সদর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের করলা চাষি ইউসুফ আলী বলেন, এবার ৫০ হাজার টাকায় ২৩ শতক জমি বন্ধক নিয়ে তিনি বিভিন্ন চাষাবাদ করেন। তবে চলতি মৌসুমে ওই জমিতে তিনি হাজার দশেক টাকা খরচ করে করলা চাষ করেছেন। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে তিনি কমপক্ষে ১৫ মণ করলা তুলে হাটে বিক্রি করছেন। গাছে ভাইরাস কিংবা অন্যকোনো দুর্যোগ না হলে আগামী শ্রাবণ মাস পর্যন্ত তিনি একটানা ফলন পাবেন।
শুধু ইউসুফ আলী নয়, স্থানীয় নাজমুল, আসাদুল, তৌহিদুলসহ অর্ধশতাধিক কৃষক করলা চাষ করেছেন। তারা জানান, মাচান তৈরিসহ প্রতি বিঘা জমিতে করলা চাষ করতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন শুরু হলে কমপক্ষে তিন মাস একটানা ফলন হয়। এতে কমপক্ষে একলাখ টাকা লাভ হবে তাদের।
এছাড়াও অন্যান্য সবজি চাষও ধানের তুলনায় অনেক লাভজনক মনে করেন এ কৃষকরা।
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার খালিদ সাইফুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সদর উপজেলার ২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে করলা চাষিরা হেক্টরপ্রতি ২৪ মেট্রিকটন ফলন পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫
এসআর