ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আইটিইউসি’র প্রতিবেদন

শ্রম অধিকার লঙ্ঘন বেশি বাংলাদেশে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৫
শ্রম অধিকার লঙ্ঘন বেশি বাংলাদেশে ফাইল ফটো

ঢাকা: শ্রমিকদের অধিকারের রক্ষায় পৃথিবীতে সবচেয়ে অনিরাপদ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এখানে কর্মক্ষেত্রে শ্রম অধিকারের কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি)।



সম্প্রতি সংস্থাটির ‘বৈশ্বিক অধিকার ইনডেক্স-২০১৫’ শীর্ষক জরিপে এমনই এক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাপী ১৪১টি দেশের ওপর ৯৭টি সূচকের ভিত্তিতে পরিচালিত এই জরিপ বুধবার (১০ জুন) প্রকাশিত হয়।

৩০ বছর ধরে শ্রম অধিকারের ওপর কাজ করছে আইটিইউসি। তবে এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো সংস্থাটি তাদের জরিপ প্রকাশ করল। পূর্ববর্তী এক বছরের তথ্যের ভিত্তিতেই জরিপ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে কর্মক্ষেত্রের মানের ওপর ভিত্তি করে দেশগুলোকে পাঁচটি ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিন্ম ক্যাটাগরিটি হলো পঞ্চম ক্যাটাগরি।

বাংলাদেশের সঙ্গে একই ক্যাটাগারিতে রয়েছে বিশ্বের আরও ২৭টি দেশ। এর মধ্যে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান ও কাতার উল্লেখযোগ্য। সবগুলো দেশকে জরিপের পঞ্চম ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ক্যাটাগরির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘অধিকার অনিশ্চিত’।

শিল্প-কারখানা, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি ও যেকোনো মুহূর্তে কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে এসব দেশে শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হতে পারে না। যার ফলে এই দেশগুলোয় শ্রম অধিকার অনিশ্চিত বলে উল্লেখ করা হয় জরিপের প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পঞ্চম ক্যাটাগরির দেশগুলোয় শ্রম আইনে কিছু অধিকার নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তা প্রতিষ্ঠায় কোনো উদ্যোগ নেই। সেই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনদের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ ও শ্রমিকের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে দায়িত্ববোধের অভাবও অনেকাংশে দায়ী।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, জরিপের আওতাধীন দেশগুলোর শতকার ৬০ ভাগই মৌলিক শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। এর মধ্যে ১১টি দেশে শ্রমিক হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। শুধুমাত্র কম্বোডিয়াতেই গত বছর ২২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

আইটিইউসি আরও জানায়, শতকরা ৭০ শতাংশ দেশের শ্রমিকদের ধর্মঘটে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই। এছাড়া দুই-তৃতীয়াংশ দেশ শ্রমের মূল্য নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় যেতে রাজি নয়।

পঞ্চম ক্যাটাগরির নিচেও ‘ফাইভ প্লাস (৫+)’ নামে একটি উপ-ক্যাটাগরি রাখা হয়েছে। এই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত নয়টি দেশে শ্রমের অধিকার অনিশ্চিতের পাশাপাশি জীবনেরও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এগুলোর মধ্যে সিরিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও ফিলিস্তিন উল্লেখযোগ্য।

২৭টি দেশে পদ্ধতিগতভাবে শ্রম অধিকার লঙ্ঘণ করা হয়। এদের মধ্যে পোল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। এই দেশগুলোকে চতুর্থ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ইসরায়েল ও অস্ট্রেলিয়াসহ ৩৬টি দেশে নিয়মিত তবে ছোট পরিসরে অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এই দেশগুলোকে তৃতীয় ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ান কনফেডারেশন (আইটিইউসি)।

২৬টি দেশে নিয়মিত শ্রম আইন ভাঙা হলেও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত রয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে জাপান ও আয়ারল্যান্ড অন্যতম। এদেরকে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ফিনল্যান্ড ও উরুগুয়েসহ ১৬টি দেশে শ্রম আইন অনেকাংশেই নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব দেশেও শ্রম অধিকার ভাঙার খবর পাওয়া যায়, তবে তা আকস্মিক। শ্রমিকরা আইনি সহায়তা পাওয়ার পাশাপাশি নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াইও চালিয়ে যেতে পারে। এই দেশগুলোকে প্রথম ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করেছে আইটিইউসি।

বাংলাদেশকে পঞ্চম ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও শেষ দশ দেশের তালিকায় রাখা হয়নি। এই দেশগুলো হল- বেলারুশ, চীন, কলোম্বিয়া, মিশর, গুয়েতেমালা, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সোয়াজিল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ জুন ১২, ২০১৫
আরএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।