ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ম্যাগিকে না বলুন, বিএসটিআই নীরব কেন?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৫
ম্যাগিকে না বলুন, বিএসটিআই নীরব কেন?

ঢাকা: রাজধানীর সব পর্যায়ের বাজারে ম্যাগি বিক্রি কমেছে। সচেতন ক্রেতারা ছেড়েছেন ম্যাগি কেনা।

তবে ম্যাগিতে সীসা ধরা পড়ায় ভারতে নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশের বাজারে ম্যাগি বাজারজাত করে চলছে নেসলে বাংলাদেশ। তড়িঘরি করে বিএসটিআই’র সনদ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।

তবে এতে শেষ রক্ষ‍া হচ্ছে না। বাজার ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতারা নিজেরাই ছেড়েছে ম্যাগি কেনা।

শুক্র ও শনিবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি দোকানে ম্যাগি বিক্রির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে বিক্রি কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি।

সুপারশপ থেকে শুরু করে গলির দোকানেরও একই চিত্র।

একটি প্রথম শ্রেণির সুপারশপে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিকে মাত্র কয়েক প্যাকেট ম্যাগি নুডলস বিক্রি করেছে তারা। আর একই সুপারশপে শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত বিক্রি হয়নি একটি প্যাকেটও।

একজন বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করে বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের ম্যাগিতে সীসা পাওয়া গেছে এই তথ্য জানার পর বাংলাদেশেও তেমন সম্ভাবনা রয়েছে এই আশঙ্কাতেই বন্ধ হয়েছে ম্যাগির ইনস্ট্যান্ট নুডলস কেনা।

তিনি বলেন, প্রতিদিন যেখানে শত শত প্যাকেট নুডলস বিক্রি হতো সেখানে কোনও কোনও দিন বিক্রি শুণ্যের কোটায়ও পৌঁছে যায়।

ক্রেতারা কেউ কি বিষয়টি উত্থাপন করেন? এমন প্রশ্নে ওই বিক্রেতা বলেন বলা যায়, ক্রেতারা সচেতনভাবেই ম্যাগি এড়িয়ে চলছে।

রাজধানীর মগবাজার এলাকায় একটি সুপারশপে দেখা গেলো যেসব শেলফে আগে ম্যাগি নুডলস সাজিয়ে রাখা হতো, সেগুলোতে অপেক্ষাকৃত গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে অন্যান্য ব্র্যান্ডের নুডলস।

একই চিত্র দেখা গেছে কারওয়ানবাজারেও। সেখান থেকে খুচরা বিক্রেতারা ম্যাগি নুডলস কম কিনছেন। আর খুচরা ক্রেতারাও নুডলস হিসেবে ম্যাগি ঘরে নিতে চাইছেন না।

কারওয়ানবাজারের একজন ক্রেতা জানালেন, বাচ্চাদের নুডলস পছন্দ। কিন্তু ম্যাগি নুডলস আর দিতে চান না।

এই ক্রেতা বলেন, যখন ভারতে ম্যাগি নুডলসে ক্ষতিকর সীসা পাওয়া গেছে তখন ‍বাংলাদেশের নুডলসেও তা থাকতে পারে সে আশঙ্কা ক্রেতাদের থাকবেই। কিন্তু ম্যাগি কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্য দিয়ে কোনওভাবেই নিশ্চিত করতে পারেনি তাদের পণ্যে এই সীসা নেই।

এছাড়াও তড়িঘরি করে বিএসটিআই’র পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট আনায় সন্দেহ বেড়েছে বলেই মত এই ক্রেতার।

তিনি বলেন, বিএসটিআই নিজেও ভোক্তার আস্থা অর্জন করতে পারে নি, ফলে তাদের সনদের খুব একটা মূল্য নেই।

উপরন্তু নতুন নতুন বিজ্ঞাপণ দিয়ে, তিন প্যাকেটের দামে চার প্যাকেট বিক্রি করার অফার দিয়ে ক্রেতা ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে ক্রেতার সন্দেহ আরও ঘণীভূত হচ্ছে।
 
নিজেদের বিবেচনা থেকেই ম্যাগি কেনা বন্ধ রেখেছি, বলেন এই সচেতন ক্রেতা।

তবে এটাও জানা গেছে কিছু কিছু ক্রেতা বিএসটিআই’র সনদের পর ম্যাগি কিনতে শুরু করেছেন।

বাংলাদেশে ম্যাগি সীসামুক্ত কি না তা নেসলেকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সকল পরীক্ষা সম্পন্ন করে সংবাদমাধ্যমে জানাতে হবে। তাহলেই এর ওপর মানুষের আস্থা ফিরবে বলে মনে করছেন অপর এক ক্রেতা।

শিশুদের প্রিয় খাবার নুডলস। সেখানে এমন একটি খাবার নিয়ে নেসলে বাংলাদেশ স্রেফ মুনাফালোভী দৃষ্টিভঙ্গী দেখাচ্ছে বলেই মনে করেন ক্রেতারা।

শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে নেসলে বাংলাদেশ, এই অভিমত দিয়ে তারা আশা প্রকাশ করছেম সরকার বিষয়টিতে আরও গুরুত্ব দেবে।

শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর বলে ভারত সরকার এই নুডলস গোটা দেশেই নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ম্যাগি ভালো বলে যে প্রচার চলছে তাতেও আস্থা পাচ্ছেন না ক্রেতারা।

ভারতেও নেসলে এখনো স্বীকার করে নেয়নি তাদের নুডলসে সীসা রয়েছে, তারপরেও দেশটির সরকার তা নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও তারা একইভাবে একই দাবি করছে কিন্তু সরকার বিষয়টিতে যথযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেই অভিযোগ অনেক ক্রেতার।

বাংলাদেশ সময় ১৩১৪ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৫
এমএমকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।