ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নিত্যপণ্যের দাম আগেভাগেই বেড়েছে, আরও আশঙ্কা ভোক্তাদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৫
নিত্যপণ্যের দাম আগেভাগেই বেড়েছে, আরও আশঙ্কা ভোক্তাদের

ঢাকা: রমজানের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। অন্যান্য বছর এ সময় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর হিড়িক পড়ে।

কিন্তু এবার রোজা উপলক্ষে বিগত বছরের চেয়ে আগেভাগেই কয়েক দফা বেড়েছে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম।

এ বিষয়ে ভোক্তাদের অভিযোগ, এবার রমজানের এক থেকে দেড়মাস আগেই নিত্যপণ্যের দাম কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে। এরপরও রোজা শুরু হলে ভোগ্যপণ্যের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ক্রেতারা।

আর বিক্রেতারা বলছেন, রমজান উপলক্ষে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হয়নি। কিছু পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বাড়ার কারণে এক থেকে দুই মাস আগেই বেড়েছে।

বিক্রেতাদের এমন মন্তব্যে রমজানের মধ্যে ভোগ্যপণ্যের দাম ফের বাড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান ক্রেতা ও ভোক্তারা।
রোববার (১৪ জুন) রাজধানীর মালিবাগ বাজার, শান্তিনগর বাজার, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক মাস আগেই প্রতি কেজি ছোলার দাম ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বাজারে ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। একই সময়ে সব ধরনের ডালের দাম প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বাড়ানো হয়। বর্তমানে মশুর ডাল (দেশি) প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, তুরস্ক ও কানাডার বড় দানার মশুরি ১০৫ টাকা, নেপালি ডাল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি কেজি আদার দাম হঠাৎ করে ১০/১২ টাকা বেড়েছে। সব ধরনের রসুনের দামও প্রতি কেজিতে ৮/১০ টাকা বেড়েছে। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও ভারতের রসুন ৯০ থেকে ১১০ টাকা।

এছাড়া চিনিতে এক মাস আগেই প্রতি কেজি ২/৩ টাকা বেড়েছে। আলুর দামও বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা। অন্যদিকে মাছ, মুরগির মাংস ও কাঁচাবাজারের বিভিন্ন পণ্যের দামও বেড়েছে।

মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, রুই, বোয়াল, শিং, পাবদা ও ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দাম প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। নিয়ম থাকলেও বিভিন্ন বাজার ঘুরে কম সংখ্যক দোকানেই পণ্যের মূল্য তালিকা পাওয়া যায়। মালিবাগ বাজারের গাজী স্টোরের বিক্রেতা মো. রুবেল জানান, একবার জরিমানা করায় এখন প্রতিদিন মূল্য তালিকা টানিয়ে পণ্য বিক্রি করেন তারা। এ বাজরে কেবল তাদেরই মূল্য তালিকা দেখা যায়।

নিত্যপণ্যের দাম

গাজী স্টোরের মূল্য তালিকায় দেখা যায়, পণ্যের পাইকারি ও বিক্রয় মূল্য দেওয়া আছে। এতে প্রতি কেজি চিনির ক্রয় মূল্য ৩৬ টাকা ও বিক্রয় মূল্য ৪০ টাকা, মশুর ডাল ১১০ টাকা কেনা মূল্য ও বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

অ্যাংকর ডালের ক্রয় মূল্য ৩৭ টাকা ও খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা, ছোলা পাইকারি মূল্য ৫৮ টাকা ও বিক্রয় মূল্য ৬৫ টাকা, পেঁয়াজ প্রতি কেজি (দেশি) ৩৯ টাকা কিনে বিক্রয় করছে ৪২ টাকায় ও ভারতের পেঁয়াজ ৩৫ টাকা ক্রয় মূল্য ও খুচরা মূল্য ৩৮ টাকা।

আদা প্রতি কেজি ১২০ ক্রয় মূল্য ও বিক্রয় মূল্য ১৪০ টাকা, রসুন (দেশি একদানা) পাইকারি মূল্য ২২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৫০ টাকা, ভারত থেকে আমদানি করা রসুন পাইকারি মূল্য ৮৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ৯৫ টাকা এবং দেশি রসুন ৭০ টাকা পাইকারি মূল্য ৮০ টাকায় বিক্রয় করতে দেখা যায়। অন্যদিকে, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮০/৮২ টাকা, বোতল লিটার ৮৮ থেকে ৯৮ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল প্রতি পাঁচ লিটার বোতল সাড়ে ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

গাজী স্টোরের বিক্রেতা রুবেল বাংলানিউজকে জানান, গত এক সপ্তাহে উল্লেখ করার মতো নিত্যপণ্যের দাম না বাড়লেও এক মাস আগেই বহু পণ্যের দাম বেড়েছে। এবার রমজান শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন পণ্যের দাম আবারও বাড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন।

মাছের বাজার
শান্তিনগর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. স্বপন জানান, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ইলিশ মাছ প্রতিটি (এক কেজির কাছাকাছি) ৮০০/১,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাবদা প্রতি কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, শিং মাছ ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের বাজার দর
মালিবাগ ও শান্তিনগর বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, খাসি ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা ও লেয়ার মুগরি ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা ও দেশি মুরগি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গরুর মাংস ব্যবসায়ী জামাল খান বলেন, মাংসের দাম নতুন করে বাড়ানো হয়নি। রমজান উপলক্ষে দুই/এক দিনের মধ্যে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বাজারে পণ্যমূল্য তালিকা বসাবে। আমরা সেই অনুসারে বিক্রি করবো।

যেহেতু গত কয়েক সপ্তাহে গুরুর মাংসের দাম বাড়েনি, ভারত থেকে গুরু না আসার কারণে রমজানের মধ্যে দাম বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি। রোববার শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা মাজিদুর রহমান বাজারে কেনাকাটা করছিলেন। তিনি বলেন, প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম এক/দুই মাস আগে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে। হয়তো রোজা শুরু হলে আবারও বাড়তে পারে।

কাঁচাবাজার

বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু ২০/২২ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, পটোল ৩০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০/৩২ টাকায়, করলা ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ঢেড়স ৩৫ টাকা, লেবু প্রতি হালি ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা কামরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনে সবজি দাম বাড়েনি। তবে উজানের পানি নেমে আসা শুরু হওয়ায় রমজানে কাঁচামরচি ও বেগুনের দাম কয়েকগুণ বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৫
টিএইচ/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।