ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মানবপাচার

২ মাসে রাজস্ব ক্ষতি ২৫ কোটি টাকা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
২ মাসে রাজস্ব ক্ষতি ২৫ কোটি টাকা

ঢাকা: হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (হাব) নেতাসহ অর্ধশতাধিক এজেন্সির ওমরাহর নামে মানবপাচারের কারণে দেশিবিদেশি বিমান কোম্পানির গত দু্ই মাসে সোয়া তিনশ কোটি টাকার ব্যবসা হয়নি। আর এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ২৫ কোটি টাকা।

 
 
হাব নেতাসহ অর্ধশতাধিক ওমরাহ এজেন্সির মানবপাচারের কারণে দুই মাস আগেই ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব। এ দু’মাসে দেশি-বিদেশি বিমান কোম্পানি থেকে টিকিট বিক্রি হতো ৫০ হাজারের বেশি। ইকোনমি ও বিজনেস ক্লাস মিলিয়ে গড়ে প্রতিটি টিকিট বিক্রি হতো প্রায় ৬৫ হাজার টাকায়।
 
বিমান মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এই হিসাবে ৫০ হাজার ওমরাহ যাত্রীর টিকিটের মূল্য প্রায় ৩২৫ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ বিমান টিকিট বিক্রি করতে পারতো ২০ হাজারের বেশি; যার মূল্য ১৩০ কোটি টাকা।
 
মধ্যপ্রাচ্যের বিমান যাত্রীর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নির্ধারিত আবগারী শুল্ক জনপ্রতি ১ হাজার টাকা। এই হিসাবে ৫০ হাজার টিকিটে আবগারী শুল্ক দাঁড়ায় ২৫ কোটি টাকা।

এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের টিকিট থেকে লভ্যাংশও যোগ হতো বিমান বা সরকারি কোষাগারে।
 
অন্যদিকে, সৌদি আরবে ওমরাহ পালনকারীদের জন্য বিভিন্ন এজেন্সির হোটেল ভাড়া বাবদ শতকোটি টাকার বিনিয়োগ পুরোটাই হজে যাচ্ছে এবার। আরবি মহরম মাস থেকে রমজারের শেষ সময় পর্যন্ত দেশের স্বনামধন্য এজেন্সিগুলো ওমরাহ পালনকারীদের জন্য আগে থেকেই হোটেল ভাড়া করে থাকে।
 
এবার হোটেল ভাড়া নিয়েছে, বলাকা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, এমকেআর ট্যুরস, ইউনাইটেড মক্কা-মদিনা ট্রাভেল, ডাইনেস্টি ট্রাভেলস লিমিটেড, ভার্সেটাইল ট্রাভেলস, নর্থ সাউথ ট্রাভেলস লিমিটেড, তানভীর ট্রাভেলস, রিমাল ট্রভেলস, শাহজালাল ওভারসিজ, আল-রাইয়ান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সিলেটের আল-মনছুর ট্রাভেলস, কক্সবাজারের চ্যালেঞ্জার ট্রাভেলস এবং চট্টগ্রামের হজ কাফেলাসহ ৩৫টির বেশি এজেন্সি।
 
এসব এজেন্সির মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার প্রায় ১০০ কোটি টাকা অগ্রিম বিনিয়োগ রয়েছে তাদের। আগে থেকে হোটেল ভাড়ার জন্য এই টাকা সৌদি আরবে পাঠানো হয়। কিন্তু এবার হোটেলগুলো খালি পড়ে আছে কোনো ওমরাহ পালনকারী নেই সেখানে।
 
চট্টগ্রামের হজ কাফেলার মালিক খোরশেদ আলম সুজন জানান, প্রতি বছর এ সময় ওমরাহর জন্য স্পেশাল ফ্লাইটও প্রয়োজন পড়তো ৩০ থেকে ৪০টি। এবার বাংলাদেশ বিমান ফাঁকা যাচ্ছে।  
 
সৌদি আরবের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে ওমরাহর নামে মানব পাচারের কারণে। শুধু তাই নয়, সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে স্থায়ীভাবে ওমরাহ ভিসা বন্ধ হবে বাংলাদেশিদের জন্য।
 
মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত চার মাসে হাবের নেতাসহ অর্ধশতাধিক এজেন্সির প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি ওমরাহর নামে সৌদি আরব গিয়ে আর ফেরত আসেননি। এ কারণে মানব পাচারের অভিযোগ এনে দুই মাস আগে ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব। বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ সব এজেন্সির তালিকা পাঠায় দেশটি।
 
এ মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে, হাবের সভাপতি মো. ইব্রাহিম বাহার, সিনিয়র সহসভাপতি মো. হেলাল, সহসভাপতি ফরিদ আহমদ মজুমদার, যুগ্মমহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন কামালের এজেন্সির বিরুদ্ধে।

অভিযোগের তালিকায় রয়েছেন হাবের নির্বাহী সদস্য এন এম এইচ খাদেম দুলাল, আবু বকর সিদ্দিকী, আবুল মালেক, হাব চট্টগ্রামের সহসভাপতি মো. ইলিয়াস, সংগঠনটির বিতর্কিত নির্বাচন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল খায়েরের জামাতা মাহবুব মান্নাও।

এছাড়াও অভিযুক্তদের তালিকায় আরো অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।      
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
এসএমএ/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।