খুলনা: বনফুলের ইফতারি আইটেমের মূল্য তালিকায় মোট আইটেম লেখা রয়েছে ৩৯টির। অথচ কিনতে গেলে দোকানে পাওয়া যায় ১৫-২০টি আইটেম।
ক্রেতাদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার (২১ জুন) বিকেলে নগরীর সাত রাস্তার মোড়ের বনফুলের শাখায় সরেজমিনে গেলে তার সত্যতা মেলে।
এম রহমান নামের এক ক্রেতা বনফুলে গিয়ে দু’টি করে শামি কাবাব, কচুরি ও পেঁয়াজুর অর্ডার দেন। এ সময় বিক্রেতারা তাকে জানান, কচুরি তারা চেনেন না। অথচ তাদের মূল্য তালিকার লিফলেটে ৯ নম্বরে এই আইটেমটির নাম রয়েছে। শেষমেষ ক্রেতা শামি কাবাব ও পেঁয়াজু কিনে দাম দিতে গেলে মূল্য তালিকায় শামি কাবাবের দাম ১০ টাকা থাকলেও বিক্রেতা ১৫ টাকা করে রাখেন।
একটি আইটেমের এক পিচেই ৫ টাকা বেশি রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এম রহমান। বনফুলের বিক্রেতা ইব্রাহিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তালিকার মূল্য সারা দেশের শাখার জন্য। এ শাখায় তৈরি করা হয় বলে লিফলেটের চেয়ে দাম বেশি। এছাড়া লিফলেটের সব আইটেম এ শাখায় পাওয়া যায় না।
এদিকে বনফুলের খাবারের মান নিয়েও রয়েছে ক্রেতাদের সন্দেহ। কেননা ২০১৪ সালের জুন মাসে মহানগরীর লবণচরা এলাকায় বনফুল মিষ্টি তৈরির কারখানাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বনফুল মিষ্টির কারখানায় মিষ্টির স্টোররুমগুলোতে ময়লা ড্রেন, পঁচা, বাসি মিষ্টি ও শিরা, ফ্রিজগুলোতে ঘি, মাখন, ময়দা ও মাংস একত্রে পাওয়া যাওয়ায় তাদের ম্যানেজারকে এ জরিমানা করা হয়্।
শুধু বনফুলই নয়, গত বছরের চেয়ে এ বছর ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেল-রেস্তোঁরায়ও বেশি দামে ইফতার সামগ্রী বিক্রির অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
নগরী গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে ফুটপাতে সারি সারি টেবিলে বাহারি সব ইফতার সামগ্রী। বিক্রেতাদের হাঁকাহাঁকি, ক্রেতাদের ভিড়। দাম বেশি বলে রয়েছে দর-কষাকষিও।
রমজানের শুরুর দিন থেকেই আছরের নামাজের পর পরই ইফতার সামগ্রী বিক্রির ধুম পড়ে গেছে। নগরীর ডাক বাংলো মোড়, ফেরিঘাট মোড়, সাত রাস্তার মোড়, ময়লাপোতা মোড়, শিববাড়ি, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে দোকানিদের ব্যবসার ধরনও পাল্টে গেছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই যেগুলো ছিল চা স্টল, জিলাপির দোকান অথবা বেকারি-সেগুলোই এখন ইফতার সামগ্রীর দোকানে পরিণত হয়ে গেছে। বেচা-কেনার হুলস্থুল আর মানুষের ব্যস্ততা উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
সাত রাস্তার মোড়ে ইফতারি কিনতে আসা ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১০-১২ জন কর্মচারী। এতোজনের ইফতার বাসায় বানানো কষ্টসাধ্য। তাই প্রতি বছরই এখান থেকে রকমারি ইফতার কিনি। এবারও কিনতে এসেছি। তবে এবার দাম একটু বেশি।
নিউমার্কেটের ইফতার বিক্রেতা মাইজু মিয়া জানান, তেল, আটা, ময়দা, বেসন সবকিছুর দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে কেরোসিনেরও। তাই দাম একটু বেশি।
নগরীর অভিজাত হোটেলগুলো ইফতার সামগ্রী বিক্রির স্থানের নাম দিয়েছে ইফতার মেলা, ইফতার বাজার। শরবত, খেজুর, ছোলা, মুড়ির সঙ্গে মৌসুমি ফল, জিলাপি দিয়ে সাজানো এসব ইফতারির সঙ্গে আরও রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পাটিসাপটা পিঠা, রকমারি হালিম, চিকেন তন্দুরি, চিকেন রেশমি কাবাব, সুতি কাবাব ও পুডিং।
হোটেল ক্যাসল সালামের ইফতার মেলার বিক্রেতা প্রিন্স রোববার (২১ জুন) বিকেলে বাংলানিউজকে জানান, এখানে অভিজাত শ্রেণীর মানুষ বেশি আসেন। বিক্রি ভালো হচ্ছে। ইফতার মেলায় এবার তাদের ২৩টি আইটেম রয়েছে। ১১টি আইটেমের ইফতার রেডি প্লেট-১ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। ১৪টি আইটেমের ইফতার রেডি প্লেট-২ বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ টাকায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
এমআরএম/এএসআর