ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটে দেশিয় ও বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানির সুবিধা অব্যাহত রয়েছে এবং সিগারেটের মূল্যস্তর নিয়ে রাজনীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
সোমবার (২২ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘তামাক কর-তামাক রাজনীতি: ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
তামাক বিরোধী সংগঠন এইচডিআরসি, প্রজ্ঞা, আত্মা ও সিটিএফকে যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এইচডিআরসি’র প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, তামাকের অপরাজনীতির কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর জটিল করা হয়েছে। এতে কর ফাঁকি বাড়বে। এর থেকে কোম্পানিগুলো যে সুবিধা পাচ্ছে, ভবিষ্যতে তা অব্যাহত থাকবে ও সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, সিগারেটের মূল্যস্তর বাতিল তো হয়নি, বরং মহাশক্তির অদৃশ্য হাতে নতুন মূল্যস্তর নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিগারেটের মূল্যস্তর নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্য নিয়ে মহারাজনীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ড. বারকাত।
তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবাজেটে চারটি মূল্যস্তর ছিল। প্রত্যেক পরবর্তী মূল্যস্তরের শুরুর স্তরের সঙ্গে ঠিক আগের মূল্যস্তরের শেষ স্তরে পার্থক্য ছিল ১৫-৩৬ টাকা।
এ পার্থক্যের কারণে এক মূল্যস্তর থেকে অন্য মূল্যস্তরে লাফ দেওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্তরভিত্তিক পার্থক্য মাত্র এক টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেট কোম্পানিকে এসব সুযোগ করে দেওয়া এফসিটিসি নীতিমালা পরিপন্থী, যা পরিকল্পিতভাবে সরকার ও জনগণকে ধোঁকা দেওয়া।
প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের তিনটি মূল্যস্তর নির্ধারণ করে ধীরে ধীরে তা বাতিল করে একটিতে নামিয়ে আনার দাবি জানান অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত।
একই সঙ্গে স্তর ভেদে স্পেসিফিক এক্সসাইজ ট্যাক্স আরোপের দাবিও জানান তিনি।
বিড়ির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ট্যারিফ মূল্য ‘যৌক্তিকীকরণের’ নামে যে নামমাত্র ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হয়েছে, তা রাজস্ব বৃদ্ধি ও বিড়ির ভোগ কমাতে কোনো ভূমিকা রাখবে না।
ধোঁয়াবিহীন তামাক জাতীয় পণ্য সম্পর্কে ড. বারকাত বলেন, এসব পণ্যের করের হার আগের মতোই রাখা হয়েছে। কিন্তু নিবন্ধনহীন পণ্য থেকে কর আদায় কঠিন হবে।
তামাক কর নীতিমালা গ্রহণ করে রাজস্ব বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত তামাক কর নীতিমালা-২০১৫’ গ্রহণ করা হলে সরকার আগামী তিন বছরে বিপুল পরিমাণ বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
সেক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে ১৩ হাজার সাতশ কোটি, পরবর্তী অর্থবছরে ১৮ হাজার সাতশ কোটি ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৬ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে বলে জানান ড. বারকাত।
২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হলেও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ আট হাজার হেক্টর। তামাক চাষে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতি বিবেচনা ও রফতানি নিরুৎসাহিত করতে রফতানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার সুপারিশ করেন বারকাত।
তামাক-মহামারী রোধ ও দেশের মানুষের জীবন সমৃদ্ধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে চূড়ান্ত বাজেটে তামাকজাত পণ্যের ওপর উচ্চহারে কর আরোপসহ ১০টি সুপারিশ করেন তিনি।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- একক শলাকা বিড়ি-সিগারেট বিক্রয় নিষিদ্ধ, তামাকজাত পণ্যে ডিউটি-ফ্রি বিক্রি নিষিদ্ধ করা, ভ্রমণকারীদের বিদেশ থেকে নিয়ে আসা তামাকজাত পণ্য দুইশ শলাকার বেশি না করা ও হেলথ সারচার্জ দুই শতাংশ করা।
বারকাত বলেন, তামাকের অপরাজনীতি থেকে এদেশের মানুষ মুক্তি চায়। তামাকজাত পণ্যের ভোগ কমলে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত মানুষসহ শিশু ও নারীরা উপকৃত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রজ্ঞার পরিচালক মনোয়ার হোসেন, আত্মা’র আহ্বায়ক লিটন হায়দার, নাদিরা কিরন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৫
আরইউ/এসএন/এবি