ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জমেনি বরিশালের ঈদ বাজার, বেতন-বোনাসের অপেক্ষা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
জমেনি বরিশালের ঈদ বাজার, বেতন-বোনাসের অপেক্ষা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল: ১১ রমজান অতিবাহিত হলেও তেমন ভাবে জমে ওঠেনি বরিশালের ঈদ বাজার। চাকরিজীবীরা বেতন-বোনাস পেলেই বাজার জমবে বলে আশাবাদ ব্যবসায়ীদের।



নানা ধরনের ফ্যাশনের পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের স্বাগত জানানোর সব প্রস্তুতি ব্যবসায়ীরা বহু আগে সম্পন্ন করলেও নগরীর মার্কেটগুলো অনেকটাই ক্রেতা শূন্য। আর যারাও বা আসছেন তারা শুধুই ঘুরে দেখছেন।

বরিশাল নগরীর, বটতলা, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, সদর রোড, গির্জা মহল্লা, চক বাজার, কাটপট্টি, পোশাক বাজার, জাহানারা মার্কেট, ভেনাস মার্কেটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোজার আগ থেকে শুরু করে ৫ম রোজা পর্যন্ত শাড়ি, কাপড়, মেয়েদের ও ছেলেদের বিভিন্ন পোশাকের ব্যবসায়ীরা তাদের বিপণিবিতানগুলোতে লাখ লাখ টাকার সামগ্রী উঠিয়েছেন।

শুরু থেকেই যাতে ঈদ বাজারের ব্যবসাটা ধরা যায় এবং ক্রেতারা বিমুখ হয়ে ফিরে না যায় সে লক্ষে।

কিন্তু বিপণিবিতানগুলোতে এখনও কেনা-বেচা চলছে অন্য সব স্বাভাবিক দিনের মতোই। যার প্রভাব অনেকটাই পড়ছে টেইলার্সগুলোতে। ঈদের উপচে পড়া ভিড় এখনও ব্যবসায়ীরা অনুভব করছেন না।

একই অবস্থা বিরাজ করছে নগরীতে বছর দু’এক ধরে আগত ব্যাঙ, টেক্সমার্ট, স্মার্টটেক্স, চন্দ্রবিন্দু, সপ্ন, রিচম্যান-লুবনানসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের পোশাকের দোকানগুলোরও।

পাশপাশি ক্রেতা নেই, লোটো, বাট, অ্যাপেক্সসহ দেশী-বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের জুতোর দোকানগুলোতেও।

তবে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্মজীবী নগরবাসী চলতি মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পেলেই মার্কেটগুলো জমতে শুরু করবে। বাড়বে ক্রেতাদের ভিড় ফিরে আসবে ঈদের বেচা-কেনার পরিবেশ।

বরিশাল নগরীর কাটপট্টি এলাকার ম্যাচিং কর্ণার অ্যান্ড ওরনা হাউজের প্রোপাইটর আসাদুজ্জামান শামীম বাংলানিউজকে জানান, রোজার আগ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় কয়েক লাখ টাকার মালামাল তুলেছেন তিনি। তবে, এখনও স্বাভাবিক দিনের মতোই বেচা-কেনা করছেন। আশানুরুপ ক্রেতা পাচ্ছেন না।

একই কথা জানালেন থান কাপড়ের দোকান নজরুল ব্রাদার্সের সত্ত্বাধিকারী শেখর সাহা। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে একত্রে অনেক টাকার কাপড় ক্রয় করলেও আশানুরূপ বেচা-বিক্রি হচ্ছে না। তবে, দিন যতো এগুচ্ছে মার্কেটে ক্রেতাদের আগমন ঘটছে।

ফ্যাশন ভিউ’র নিপু কর্মকার বাংলানিউজকে জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মার্কেটগুলো ক্রেতা থাকে না বললেই চলে। তবে, বিকেল ও রাতে কিছু ক্রেতারা মার্কেটে আসনে। তবে, বেচা-বিক্রি এখনো ভালো অবস্থানে যায়নি। কারণ মার্কেটে এখন যারা আসছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই দেখে চলে যাচ্ছেন।

জাহানারা মার্কেটর মেয়েদের পোশাকের দোকান নিউ আধুনিক ফ্যাশন হাউজের প্রোপাইটার একে রিয়াজ জানান,  যারা এসে বিভিন্ন পোশাক দেখে যাচ্ছেন তারা সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন। এখন বাজারে পোশাক ও দরদামের ব্যাপারটি জেনে যাচ্ছেন।

এরাই আবার চলতি মাসের বেতন কিংবা বোনাস পেয়ে ঈদের কেনা-কাটা শুরু করবেন। তাই এককথায় বেতন-বোনাসের অপেক্ষায় রয়েছে বরিশালের ঈদ বাজার জমজমাট হওয়ার ব্যাপারটি।

এদিকে, বোনাসের কারণেই এখনও ঈদ বাজার জমে না ওঠায় ট্রেইলার্সগুলোতে সর্বোচ্চ কাজের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে না বলে জানালেন কাটপট্রি রোডের ঝুমকা টেইলার্সের সুব্রত কর্মকার।

আর যারা এ বাজারগুলোতে প্রতিবছরই ক্রেতা হন তারাও জানালেন একই কথা।

বরিশাল মাদ্রাসা বোর্ডের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সেকশন অফিসার মীর খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এখন মাসের শেষ, হাতে তেমন কোনো অর্থ-কড়ি নেই। তাই আগামী মাসের বেতন-বোনাস পেয়েই স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয়স্বজনদের ঈদের পোশাক কিনে দেবেন।

আর সিটি কর্পোরেশনের কর নির্ধারক বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে জানালেন, তিনি হয়তো বেতনের অর্ধেক বোনাস পাবেন। যা দিয়েই ঈদ বাজার সারতে হবে। কারণ বেতনের টাকা দিয়ে বাসাভাড়াসহ মাসিকখরচের হিসেব মেটাতে হবে।

বরিশাল নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, এবারে ছেলে-মেয়েদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সরবরাহ করা হয়েছে। যেখানে শাড়ির মধ্যে রয়েছে খাদি কাতান যার মূল্য ৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, একই দামে রয়েছে হায়দারাবাদ সিল্ক ও কাবলি বরণ শাড়ি। ব্যাঙ্গোলর কাতান শাড়ির মূল্য ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা, জামদানি শাড়ির মূল্য ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ও সুতি টাঙাইল শাড়ির মূল্য ৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আধুনিকতা ছোয়া এনে দিয়েছে ব্রান্ড শপ টেক্সমার্ট, স্মার্টটেক্স, চন্দ্রবিন্দু, সপ্ন, রিচম্যান-লুবনানসহ বিভিন্ন ব্রান্ড শপ। যেখানে বাহারি ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

আর বিভিন্ন পোশাকের দোকানে ভারতীয় সিরিয়ালের পোশাকের সংখ্যাই বেশি। যার মধ্যে রয়েছে- ৪ হাজার ২শত টাকা থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা মূল্যের কিরণমালা, সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার পর্যন্ত টাকা মূল্যের বজ্রমালা, ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যের মায়া। এছাড়া সূতি কাপড়ের ত্রি-পিস রয়েছে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।

মেয়েদের ক্ষেত্রে রয়েছে ইন্ডিয়ান চুনট সূতি, পিওর প্রিন্ট, পিওর পাইপিং, জর্জেট পাইর, জর্জেট ব্রাশ, কাশমিরি সিল্ক প্রিন্টের ওড়না। যার মূল্য ৩ শত৫০ থেকে ১২ শত ৫০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

মার্কেটে ছেলেদের পোশাকের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি রয়েছে ১৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা মূল্যের ,শার্ট রয়েছে ১৫০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা মূল্যের, বাহারি ডিজাইনের প্যান্টের মূল্য প্রকারভেদে দেড় হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।