ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কমলাপুর আইসিডির হয়রানিতে ক্ষুব্ধ সিঙ্গাপুরের মোস্তফা মার্ট

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
কমলাপুর আইসিডির হয়রানিতে ক্ষুব্ধ সিঙ্গাপুরের মোস্তফা মার্ট

ঢাকা: পণ্য ডেলিভারির সময় তিনদিন-- এই নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক চেইনশপ মোস্তফা মার্ট’র পণ্য চালান মাসের পর মাস আটকে রেখেছে কমলাপুর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি)।

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন এই ডিপোতে পণ্যভর্তি ছয়টি কন্টেইনার আটকে থাকায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে মোস্তফা মার্ট।

     

ঈদ সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ পণ্য এনে বিপাকে পড়েছে জনপ্রিয় এ চেইনশপটি। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এহেন অকারণ হয়রানিতে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে মোস্তফা মার্ট।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোনও যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আইসিডি কর্তৃপক্ষ আটকে রেখেছে মোস্তফা মার্টের পণ্যভর্তি ছয়টি কন্টেইনার।

সোমবার আইসিডিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুধু এই প্রতিষ্ঠানই নয়, দেশের শতাধিক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এই কনটেইনার ডিপোর অনিয়ম-দুর্নীতি ও অযৌক্তিক হয়রানির শিকার হচ্ছে।

পণ্য ছাড়ের নামে ঘুষের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানকে শিপিং বিল, কনটেইনার ভাড়া, বন্দর ভাড়া বাবদ ধাপে ধাপে লক্ষাধিক টাকা গুনতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও রেহাই মিলছে না।

এদিকে, যথা সময়ে পণ্যের সরবরাহ না হওয়ার তা মূল্য হারাচ্ছে, আর খালাস না হওয়ায় পণ্যের গুণগত মানও নষ্ট হচ্ছে। অবস্থা এমনও হয় যে, কোটি টাকা দামের পণ্য পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এর ফলে বড় অংকের ক্ষতি গুনছেন ব্যবসায়ীরা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার আর দুর্নীতির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই আইসিডি।

নথিপত্রে দেখা যায়, তিনদিনের মধ্যে যেসব পণ্য ছাড়ার কথা তা কয়েক মাসেও ছাড়েননি আইসিডির কর্মকর্তারা।

তথ্যসূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক চেইন শপ মোস্তফা মার্টের পক্ষে একটি আমদানিকারক কোম্পানির মাধ্যমে গার্মেন্টস পণ্য বোঝাই চারটি কনটেইনার সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে আসার পর কমলাপুর আইসিডিতে পৌঁছে গত ২৫ এপ্রিল। এতে কয়েক কোটি টাকার পণ্য রয়েছে।
এরপর গত ৭ জুন এই প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা আরো দুই কন্টেইনার কসমেটিক সামগ্রী, ফল ও খাদ্যপণ্য চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আইসিডিতে পৌঁছে।
নিয়ম অনুযায়ী এসব পণ্য তিনদিনের মধ্যে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে ডেলিভারি দেওয়ার কথা। কিন্তু এসব কনটেইনারের কোনো পণ্যই সোমবার পর্যন্ত খালাস করেনি কমলাপুর আইসিডি কর্তৃপক্ষ।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাস্টমস কমিশনারের কার্যালয়ে বার বার যোগাযোগ করেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। এমন কি পরবর্তী সময়ে কমিশনার মাসুদুল কবিরের কাছে লিখিত আবেদন করেও পণ্য ছাড় করাতে পারেনি মোস্তফা মার্টের এজেন্ট কোম্পানি মেট্রো কভারেজ।

ফলে আমদানি করা ফল ও খাদ্যপণ্য পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কনটেইনারের ভেতরেই।

এদিকে, এমন ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সংবাদকর্মীদের।  

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য সোমবার দুপুরে মাসুদুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেড় ঘণ্টা ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রাখার পর তার ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন এ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলবেন না।

এরপর কমিশনার মাসুদুল কবিরের ব্যক্তিগত সহকারী এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অপর কমিশনার শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কিছু বিষয় অনুসন্ধানের প্রয়োজন হওয়ায় মোস্তফা মার্টের কনটেইনার আটক ছিলো। তবে খুব দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমলাপুর আইসিডির এই হয়রানির কারণে রেলপথে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমছে। গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলপথে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে ১৩ শতাংশ।

তবে রেলপথে কনটেইনার পরিবহন কমায় আমদানি পণ্যের জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এই ক্ষতির পাশাপাশি কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যেও ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়ছেন।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন আইসিডিতে কনটেইনার আটকে রাখার কারণে কোনো কোনো পণ্যের মেয়াদ পেরিয়ে যাচ্ছে। আর অন্যসব পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে কন্টেইনারের অতিরিক্ত ভাড়া, বন্দরচার্জ এবং শিপিংচার্জ। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
এডিএ/এমএমকে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Veet