ঢাকা: মাত্র দু’টি মাছে কেজি, তাও আবার কই মাছ! কীভাবে সম্ভব? নরসিংদী ও ময়মনসিংহে চাষ করা হাইব্রিড কই মাছেই মিলবে দু’টিতে এক কেজি।
এসব কই ওজনে বাড়লেও স্বাদে বাড়েনি।
মানিক মিয়া দেশের সবচে বড় কই মাছের বাজার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মেসার্স খাজা ফিস লাইন’র সত্ত্বাধিকারী। প্রায় ১০ বছর ধরে হাইব্রিড কই মাছের ব্যবসা করছেন মানিক মিয়া।
মানিক মিয়ার ভাষ্য, নরসিংদী ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে হাইব্রিড কই চাষ করা হয়। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের হাইব্রিড প্রজাতির কইও চাষ করা হচ্ছে।
এ দুই জেলার আবহাওয়া ও সুস্বাদু পানি হাইব্রিড কই মাছ চাষের উপযোগী হওয়ায়, মাত্র তিন মাসে এসব কই সর্বোচ্চ আধা কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
মানিক বলেন, রঙও অনেকটা দেশি কই মাছের মতো। তবে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক জলাধারের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় দেশি কই মাছ পাওয়া দুষ্কর।
তিনি বলেন, হাইব্রিড কই খাদ্য ও ওষুধের ওপর বড় হয়। খাদ্য ও ওষুধ পরিমাণ মতো পেলে দ্রুত বাড়ে হাইব্রিড কই। তবে দ্রুত বাড়লেও স্বাদ তেমন নেই।
হাইব্রিড কই মাছের বাজার বিষয়ে মানিক মিয়া বলেন, একসময় প্রতি কেজি কই মাছ তিন থেকে সাড়ে তিনশো টাকাও বিক্রি করা যেত। বর্তমানে ১শ’ ৩০ থেতে ১শ’ ৫০ টাকায় বিক্রি করতেও কষ্ট হয়ে যায়।
আগে চাষিদের হাতে মোবাইল ফোন ছিল না বলে ব্যবসায়ীদের (আড়তদার) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন না। এখন চাষিরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ডেলিভারি দেন।
ফলে চাষিরা লাভবান হলেও মার খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। অনেক ক্ষেত্রে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। তবে চাহিদা বেশি থাকায় লোকসান কিছুটা পুষিয়ে আসে, যোগ করেন মানিক।
একই বাজারের কই মাছ ব্যবসায়ী নুর হোসেন বলেন, হাইব্রিড কই কেজিতে দুই থেকে তিনটি পর্যন্ত হয়। যেখানে দেশি কই কেজিতে থাকে ২০ থেকে ৩০টি। দেশি কই মাছ কেজি প্রতি সাত থেকে আটশো টাকা আর হাইব্রিড কেজি প্রতি ১শ’ ৩০ থেকে ১শ’ ৫০ টাকা। তবে হাইব্রিড কই মাছ সম্পূর্ণ ফরমালিনমুক্ত ও তাজা বলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।
নুর হোসেনের ভাষ্য, নরসিংদী ও ময়মনিসংহের চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কই মাছ কেনা হয়। তারপর রাতে সম্পূর্ণ তাজা এ মাছ পানি ভর্তি ড্রামে করে আড়তে চলে আসে।
প্রতি ড্রামে ৩০ কেজি জ্যান্ত কই মাছ থাকে। প্রতি ট্রাকে ৯শ’ ৬০ থেকে এক হাজার ৫০ কেজি পর্যন্ত মাছ আসে। প্রতি রাতে এ দুই জেলা থেকে রাজধানীতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক কই মাছ আসে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ছাড়াও কারওয়ান বাজার, রামপুরা ও মিরপুর এলাকায় এসব কই মাছ আসে। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বেশ কয়েকটি জেলায় এ কই মাছ যায় বলে যোগ করেন তিনি।
নুর হোসেন বলেন, দাম আর আকার যাই হোক সব শ্রেণীর ক্রেতাই এ মাছ পছন্দ করেন। ফলে দিন দিন বাড়ছে এর চাষ, সম্প্রসারিত হচ্ছে কই মাছের বাজার।
ইয়াসির আরাফাত নামে এক ক্রেতা জানান, কই মাছ পছন্দের বলে কিনতে হয়। সেক্ষেত্রে দেশি কই মাছের দাম আকাশচুম্বী। বাধ্য হয়ে হাইব্রিড কিনতে হয়।
জানা যায়, বাংলাদেশসহ এশিয়ায় ১৭ প্রজাতির কই মাছ পাওয়া যায়। দেশভেদে এসব কই মাছ পুকুর, ডোবা, বিল, ঝিলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে।
দেশি কই বেশ সুস্বাদু। বাংলাদেশে জলাশয় কমে যাওয়ায় দেশি কই নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে ২০০২ সালে থাইল্যান্ড থেকে আনা দ্রুত বর্ধনশীল হাইব্রিড কই মাছের চাষ শুরু হয়।
২০১১ সালে ভিয়েতনাম থেকে আরও এক প্রকার হাইব্রিড কই মাছ বাংলাদেশের মৎস্য চাষে যুক্ত হয়। দু’দেশের কই মাছ দেখতে দেশি কইয়ের মতো।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের কই চাষ হয়।
এর মধ্যে ভিয়েনামের কই তাড়াতাড়ি বাড়ে। কম সময়ে তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার কারণ বেশি পরিমাণে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার, এমন ধারণা ঠিক নয়। এ কই স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে এভাবে কই না এনে আমাদের দেশি কই ভালো জাতের কইয়ের সঙ্গে ক্রস করিয়ে উন্নত জাতের কই উৎপাদন করলে তা মঙ্গলজনক হবে।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ট্যানারি শিল্পের অবশিষ্ট অংশ ও মরা মুরগি কই চাষে ব্যবহার করে। এসব কই মাছ খেলে তা স্বাস্থ্যের মারাত্বক ক্ষতি করে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১১২ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৫
আরইউ/এসএস/আইএ