ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঋণ বিতরণের স্বেচ্ছাচারিতা কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
ঋণ বিতরণ, আদায় ও দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন সময় নেওয়া পদক্ষেপকে পাত্তা দিচ্ছে না এসব ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য জারি করা বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সব ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে পরিচালনা পর্ষদকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবে চেয়ারম্যান, এমডি ও পর্ষদ গঠন করায় এসব ব্যাংক নিয়মকানুন মানছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খেলাপী ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, মূলধন ঘাটতি ও লোকসানি শাখা বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর সংসদীয় কমিটি ব্যাংকগুলোকে নতুন শাখা না খোলার পরামর্শ দিয়েছিল।
কিন্তু ওই পরামর্শের পরেই সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক মোট ৪৯টি নতুন শাখা খুলেছে। জুন মাসের মধ্যে (বেসিক ব্যাংক ব্যতীত) খোলার কথা রয়েছে ১১টি শাখা।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদ না চাইলেও অনেক সময় বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপিদের তদবিরে নতুন শাখা খোলা হচ্ছে। এসব শাখায় পর্যাপ্ত গ্রাহক না পাওয়া লোকসান হচ্ছে।
দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা ও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অর্থ-মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল রাষ্ট্রায়ত্ত ১৪টি ব্যাংকের চুক্তি হয়। চুক্তির পরও ব্যাংকগুলো বিধান ভঙ্গ করে ঋণ বিতরণ করছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি ঋণ না দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে ২০০৭ সালে। কিন্তু চুক্তি লঙ্ঘন করে বেশ কয়েকটি ব্যাংক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিপুল পরিমান ঋণ দিয়েছে। এ কারণে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত এসব ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৯শ’ ৮ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবে পরিচালিত হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা মানে না।
চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখা দাঁড়িয়েছে মোট ২শ’ ৯৬টিতে। এর মধ্যে সোনালীর ৭৭টি, অগ্রণীর ৮৬টি, জনতার ৯৫টি ও রূপালীর ৩৬টি। যা ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল মাত্র ১৪৮টি।
খেলাপী ঋণ আদায়, লোকসানি শাখা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যকর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস বাংলানিউজকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ইচ্ছেমত ঋণ বিতরণ করছে। কিন্তু খেলাপী ঋণ আদায় করতে পারছে না। এ কারণে মূলধন সংকটে পড়ছে। নতুন করে ব্যাংকগুলোকে মূলধন যোগান দিতে হচ্ছে। সবকিছু হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ যথাযথভাবে না মানার কারণে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৫
জেডএম/