রাজশাহী: রেশমনগর বলে কথা! রাজশাহীর মানুষের ঈদ আর সিল্ক তাই একই সুতোয় গাঁথা। রেশমি পোশাক ছাড়া যেনো ঈদের খুশিই বেমানান।
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর সামনে রেখে রাজশাহী মহানগরের বিসিক শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠা সিল্ক বাজার এখন ক্রেতায় ঠাসা। কেনা-বেচা নিয়ে পুরোদমে জমে উছেছে রাজশাহীর সিল্ক হাউসগুলো। চোখ ধাঁধানো রং আর বাহারি ডিজাইনের অভিজাত রেশমি পোশাকের টানে সেখানে ছুঁটছেন তরুণীরা।
তাই রেশমপল্লির শ্রমিকরা এখন বছরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন। বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় দিনরাত সমানতালে চলছে তাঁত মেশিন। টানা কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ঈদের মৌসুমে এবার ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার সিল্ক পণ্য কেনা-বেচা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বলাকা কারচুপি, সুই-সুতা কাতান, কোটি সিল্ক, জয়শ্রী, সিল্ক কাতান, এনডি, থ্রি স্টার কাতান, ওয়াটার কাতান, জামদানি কাতান, র-কাতান, ধুপিয়ানা, ঝরনা কাতান, কারুচুপিসহ হরেক নামের শাড়ি-কাপড়, থ্রিপিস, ওড়না, পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট, ফতুয়া, স্কার্প ও টাই থরে থরে সাজানো বিভিন্ন সিল্কের শোরুমে। লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি- বর্ণিল সব রঙের আলোয় ঝলমল করছে নতুন পোশাক।
পোশাকেই যেনো আলোর ঝিলিক। এসব কাপড়ের মধ্যে যাচাই বাছাই করে নিজেদের জন্য সেরা ও স্বতন্ত্র পোশকটি পরখ করে নিচ্ছেন ক্রেতারা। তবে সিল্ক কাপড় কিনতে এসে বাহারি রং, ঐতিহ্য আর গুণাগুণের কারণে কোনটা রেখে কোনটা কিনবেন এমন দুশ্চিন্তায়ও ভুগছেন অনেক ক্রেতা।
কারণ তরুণ-তরুণীদের চাহিদা পূরণে এবারের ঈদে নতুন নতুন ডিজাইন আর নজরকাড়া সব পোশাক নিয়ে এবার ঈদে বিশেষ আয়োজন নিয়ে সেজে উঠেছে নগরের সিল্ক হাউসগুলো। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে নিজেদের নিয়মিত ডিজাইনের সঙ্গে ঈদের জন্য তৈরি করা হয়েছে নতুন নতুন পোশাক।
সোমবার (০৬ জুলাই) মহানগরের বিসিক শিল্প এলাকায় বিভিন্ন সিল্ক কারখানা ঘুরে দেখা যায়, মেশিনচালিত একটি তাঁতও এখন বসে নেই। সবগুলোতে টানা কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। ঈদ সামনে রেখে শোরুমের কালেকশন সব সময়ের জন্য ভরপুর রাখতেই মাসজুড়ে চলছে তাদের বিশাল এ কর্মযজ্ঞ।
রাজশাহীর বিসিক শিল্প নগরীর প্রধান পাঁচটি রেশম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সপুরা সিল্ক, ঊষা সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন, আমেনা সিল্ক ও মহানন্দা সিল্ক সারা বছরই ঈদ-উল-ফিতরের জন্য আধুনিক মানের নতুন নতুন নকশার পোশাক তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্র্যান্ডেই পোশাক তৈরি করে শোরুমে নিয়ে বিক্রি করে। রাজশাহী ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বাইরেও এ নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক শো-রুম রয়েছে। তবে প্রতিটি শো-রুমই নিয়ন্ত্রিত হয় রাজশাহী থেকে।
রাজশাহীর জনপ্রিয় সিল্ক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সপুরা সিল্ক। ঈদ সামনে রেখে এ প্রতিষ্ঠান এবার নানা ডিজাইন ও দামের পোশাক বাজারে এনেছে। থ্রি-পিস, শাড়ি-জামা থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ-শিশু সবার জন্যই বিভিন্ন ডিজাইন ও দামের পোশাকে সমৃদ্ধ এ শোরুমটি।
সপুরা সিল্কের শোরুমে কেনাকাটা করতে আসা শামীম আফরোজ শিলা বাংলানিউজকে জানান, তিনি এবার ঈদের জন্য বলাকা সিল্কের ওপর কাথাস্টিচ করা শাড়ি কিনেছেন। দাম পড়েছে সাড়ে ছয় হাজার টাকা। ঢাকায় এ ধরনের শাড়ির দাম অনেক বেশি।
রাজশাহীর সিল্কের জগতে অনন্য স্থান করে নেওয়া সপুরা সিল্ক শোরুমের ইনচার্জ সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এবারের ঈদে তাদের বড় আকর্ষণ মসলিনের ওপর অ্যাম্ব্রয়ডারি, বলাকা সিল্কের ওপর কাথাস্টিচ, তষর সিল্কের ওপর স্কিন প্রিন্ট, অ্যান্ডির ওপর প্রিন্ট ও আর্টপ্রিন্ট ডিজাইনের শাড়ি। এ বছর প্রথমবারের মতো শোরুমে আনা স্বতন্ত্র ডিজাইনের রেকর্ড সংখ্যক শাড়ি বিক্রি হচ্ছে।
সাইদুর রহমান জানান, শাড়িগুলোর দাম রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা। মসলিনের ওপর কারচুপির কাজ করা ডিজাইনের শাড়িও এবার নতুনভাবে থাকছে সপুরা সিল্কে। এসব শাড়ির দাম পড়ছে ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। সপুরার অ্যান্ডি ও সিল্কের ওপর স্ট্রাইপ ও আর্ট করা নতুন ডিজাইনের শাড়িও বেশি বিক্রি হচ্ছে এবার। নতুন পাঞ্জাবিও রয়েছে। সপুরা সিল্কের শোরুম সংলগ্ন কারখানায় এখন পুরোদমে চলছে শেষ মুহূর্তের পাঞ্জাবি তৈরির কাজ।
সপুরা সিল্কের পরিচালক সাজ্জাদ আলী সুমন বাংলানিউজকে জানান, ক্রেতাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মাথায় রেখেই তাদের নিত্য নতুন সব কালেকশন। ঈদ উপলক্ষে এবার শোরুম সাজানো হয়েছে বাহারি ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবি আর থ্রিপিস দিয়ে। সিল্কপণ্য ছাড়াও একই ছাদের নিচে সব ধরনের কেনাকাটার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে সপুরা সিল্কে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৫
এসএস/এএ