ঢাকা: বেসরকারি খাতের ডাচবাংলা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিন সদস্যের সদস্য পদ বাতিল হচ্ছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই তিন পরিচালক হলেন-উদ্যোক্তা পরিচালাক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, মো. আব্দুস সালাম ও ইকোট্রিম হংকং লিমিটেড নামের একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান।
সাহাবুদ্দিনের ধারণ করা শেয়ারের পরিমান ২২ দশমিক ২১ শতাংশ। সালামের ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও ইকোট্রিমের নামে রয়েছে ২৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
দেশের প্রচলিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হতে পারবেন না। কিন্তু উল্লেখিত তিন পরিচালকের মোট শেয়ারের পরিমান ৬১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
অভিযোগ রয়েছে, ডাচবাংলা ব্যাংকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শেয়ার তিন পরিচালকের কাছে থাকায় অন্য পরিচালকরা নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। তিন পরিচালকের প্রভাবই বেশি রয়েছে। তারা যা খুশি তাই করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের কোনো পরিচালক যদি ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক থাকেন, তাহলে তাদের কাছে ব্যাখা চাওয়া হবে, কেন তারা আইন লঙ্ঘন করে বেশি শেয়ার ধারণ করেছেন। ব্যাখা প্রদান ও শেয়ার না ছাড়লে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য পদ বাতিল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুটি কয়েক ব্যক্তির হাতে থাকা ডাচবাংলা ব্যাংকের শেয়ার না ছাড়ায় বোনাস বা রাইট শেয়ার দিচ্ছে না ব্যাংকটি। মুক্তবাজার অর্থনীতির অযুহাতে কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, রাইট শেয়ার দেওয়ার বিষয়টি শেয়ারহোল্ডারের উপর নির্ভর করে।
ডাচবাংলা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪শ’ কোটি টাকা রাখার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র দুইশ’ কোটি। রিজার্ভ তহবিলে ১ হাজার ১শ’ ৭১ কোটি থাকলেও পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে রাজি নয় ডাচবাংলা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার নেই।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও স্বতন্ত্র ২জন, বিদেশি কোম্পানির একজন ছাড়া বাকি তিন পরিচালকই মালিকপক্ষের লোক। ডাচবাংলা ব্যাংকের এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অনেক চেষ্টা ও নিয়মের মধ্যে আনতে পারেনি। উল্টো ধমক খেতে হয়েছে বলে এক কর্মকর্তা জানান।
তিন পরিচালকের কাছে অধিকাংশ শেয়ার থাকায় নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠান পরিপন্থি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠান বিরোধী জেনেও অনেক বিষয়ে প্রতিবাদ করতে পারেন না স্বতন্ত্র দুই পরিচালক।
চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রায় এক হাজার ক্যাশ অফিসারের বেতন কমিয়ে অর্ধেক করেছে ডাচবাংলা। ক্যাশ কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রী, গর্ভনর, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে অভিযোগ করেও কোনো ফল পায়নি। উল্টো যাদের দিয়ে সন্দেহ হয়েছে। তাদেরকে বদলি করা হয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শাখায়।
ডাচবাংলা ব্যাংক বাৎসরিক ১শ’ ২ কোটি টাকার শিক্ষা বৃত্তি দেওয়ার নামেও করেছে প্রতারণা। বছরে মাত্র ১৭ কোটি টাকা দিয়ে গণমাধ্যম ও বিভিন্নস্থানে বিলবোর্ড টানিয়ে প্রচার করা হতো, ডাচবাংলা ব্যাংকের ১০২ কোটি টাকার শিক্ষা বৃত্তি হোক দীপ্তিময় জীবনের স্বপ্ন পূরণের সেতু বন্ধন।
বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আসায় শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে চলতি বছরের ১৭ মার্চ একটি চিঠি দেয়। পরে এবার শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার প্রচারণায় আর উল্লেখ করা হয়নি বাৎসরিক ১০২ কোটি টাকার কথা।
এদিকে নিজেদের ইচ্ছেমত একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিদের্শনাগুলোকে অনেকটা অবহেলা করছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নির্বাহী পরিচালক জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের সিদ্ধান্তে কোনোভাবেই কর্ণপাত করে না ডাচবাংলা ব্যাংক।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না বলে মোবাইল ফোনে জানান ডাচবাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএস তাবরেজ।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৫
এসই/জেডএম