ঢাকা: ঋণ বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরও অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবদুল হামিদের মেয়াদ বাড়িয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
চলতি বছরের ৯ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মতিয়ার রহমান অগ্রণী ব্যাংকের এমডি আবদুল হামিদের মেয়াদ বাড়াতে করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছিল।
দীর্ঘ একমাস পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ ছাড়াই বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) আবদুল হামিদের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের এমডির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো চিঠিও দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সানমুন গ্রুপের কর্ণধার মিজানুর রহমান মিজান ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ৩শ’ কোটি টাকা ঋণ বিতরণে অনিয়মের সঙ্গে এমডির জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, অগ্রণী ব্যাংক এমডির জ্ঞাতসারে ও ইঙ্গিতে ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার একটি জালিয়াত চক্র পর্ষদকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিজানুর রহমানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
এতে আমানতকারীর টাকা ঝুঁকিগ্রস্ত হয়েছে। এর জন্য ব্যাংকের এমডিই দায়ী।
দিলকুশার যে ভবনটির জন্য ‘মুন বাংলাদেশ লিমিটেড’কে ঋণ দেওয়া হয়েছে, তার নকশা ১৯৯৮ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অনুমোদন দিলেও ২০০২ সালে তা বাতিল হয়ে যায়।
নকশা বাতিলের ১০ বছর পর ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুন গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব পর্ষদের কাছে উপস্থাপন করেন এমডি।
এছাড়াও সরবরাহ করা নকশা অনুযায়ী সাতটি ভবন বিশিষ্ট কমপ্লেক্সে তিনটি ভবন নির্মাণ করার কথা। নিমার্ণাধীণ একটি ভবন ছাড়া আর কোনো ভবন নির্মাণের কাজ বা জায়গা খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি প্রিন্সিপাল শাখার ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান খান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাজধানীর কল্যাণপুরে নির্মাণাধীন সানমুন স্টার প্লাজার ঋণের জন্য দাখিল করা নথিতে জমির কোনো মূল দলিল নেই।
ঋণ দেওয়ার আগে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করেই পর্ষদের কাছে উপস্থাপন করেতও এমডি সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক ও বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান খানসহ ওই শাখার ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশ দিলেও এমডি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
উল্টো চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ৮ কর্মকর্তাকে অব্যহতি ও শাখা ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান খানকে পদোন্নতি দিয়ে উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক করা হয়েছে।
আর এতেই প্রমাণ হয়, এমডিকে সবকিছু অবগত করেই মুন গ্রুপকে ঋণ দিতে সব অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। এসব কারণে আবদুল হামিদের মেয়াদ বাড়াতে সুপারিশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম লঙ্ঘন করেই কয়েকশ’ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। আর এসব ঋণ বিতরণে এমডি আবদুল হামিদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ ছাড়া কোনো ব্যাংকের এমডি মেয়াদ বাড়ানো যায় কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোকুল চাঁদ দাস বাংলানিউজকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এমডি নিয়োগ ও পদায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ প্রয়োজন হয়। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য না হলেও চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
এসই/জেডএস