ঢাকা: সরকারের তরফ থেকে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে সব গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পরও সে নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হয়েছে দেশের ৫০ ভাগ গার্মেন্টস কারখানা।
পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে সরকারের এ বিশেষ নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন।
ফেডারেশন বলছে, শ্রম আইন অনুযায়ী মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের কথা বলা থাকলেও সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ১০ জুলাই পর্যন্ত গার্মেন্টস মালিকদের সময় বেঁধে দেন। কিন্তু ১০ জুলাই পার হয়ে গেলেও দেশের ৫০ ভাগ কারখানাই বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী উৎসব-ভাতা ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশনা দিলেও তা শ্রমিকরা নির্দিষ্ট সময়ে পাবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কিত সবাই।
ঈদের আর ক’দিন মাত্র বাকি থাকলেও প্রাপ্য বেতন না পাওয়া নিয়ে রাজধানীর মালিবাগের আরএম ফ্যাশন গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিক পলি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের বেতন এখনও দেওয়া হয়নি। বলছে ১৩ জুলাই বেতন দেবে। বোনাসের কথা এখনও কইতে পারি না। তবে মালিক বলছে, ১৩ তারিখে বেতনের সঙ্গেই বোনাস দেবে’।
ঢাকার কারখানাগুলোর মতো বেতন পরিশোধে ব্যর্থ নারায়ণগঞ্জের কারখানাগুলোও। সেখানকার হাশেম টেক্সটাইলের শ্রমিকরা ১১ তারিখ পর্যন্ত বেতন পাননি বলে জানিয়েছেন এক শ্রমিক। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেন, ‘মালিক তো মাসের শুরু থেকেই বেতন আজ দেবে- কাল দেবে বলে টালবাহানা করছেন। ১১ তারিখ চলে যাচ্ছে। কবে বেতন দেবে? ঈদের কেনাকাটা আর করা যাবে বলে মনে হয় না’।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন’র সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দাবি ছিল, যেন ২০ রোজার মধ্যে বেতন-বোনাস দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার মালিকদের কথা মতো ১০ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছিলো। মালিকরা ১০ জুলাইয়েও বেতন দেয়নি। প্রায় ৫০ ভাগ কারখানা শ্রমিকদের মজুরি দেয়নি এখনও। ঈদের আগে বেতন-বোনাস না হলে শ্রমিকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন'র সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা বলেন, সরকার মালিকদের কথা রাখলেও মালিকরা সরকারের কথা রাখলেন না। ১০ জুলাই পর্যন্ত অনেক কারখানারই শ্রমিকরা বেতন পাননি। বোনাস তো অনেক দূরের কথা, এই শ্রমিকরা কীভাবে ঈদের কেনাকাটা করবেন সে বিষয়ে যেন কোনো মাথা ব্যথাই নেই কারখানা মালিকদের। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে শ্রমিকরা চুপ করে থাকবে না।
নির্দিষ্ট সময়ে অনেক কারখানাই শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি বলে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মো. আতিকুল ইসলামও। তবে ৫০ ভাগ কারখানাই যে এ ব্যর্থতা দেখিয়েছে তা মানতে নারাজ তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি বাংলানিউজকে বলেন, কারখানাগুলোকে তো আর আমরা ১০ জুলাইয়ের মধ্যে বেতন পরিশোধের নির্দেশনা দেইনি। সব কারখানার আর্থিক অবস্থা এক নয়। অনেক কারখানা তাদের শ্রমিকদের বেতন দিয়েছে। তবে, কিছু কারখানা এখনো তাদের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি।
তিনি দাবি করেন, ৮৫ ভাগ কারখানাই তাদের শ্রমিকদের ১০ জুলাইয়ের মধ্যে বেতন পরিশোধ করেছে। বাকি কারখানাগুলোও শিগগির শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করবে এবং ঈদের আগেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
ইউএম/এইচএ/