ঢাকা: ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে কেনাকাটার ভিড় ততই বাড়ছে। রাজধানী ঢাকার মেগা শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাত পর্যন্ত সে ভিড় লেগেই আছে।
তবে ভিড়, ঠেলাঠেলি থেকে কারো নিস্তার নেই। সে ভয়েই হয়তো অনেকে মাঝরাতে কেনাকাটা করে থাকে। তবে সেখানেও আছে নিরাপত্তাহীনতার ভয়! সাধের কেনাকাটা করা হলো ঠিক, কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে মারণাস্ত্রের মুখে সেগুলো খোয়া গেলো!
মাঝরাতে কিংবা দিনের যে কোনো সময় কেনাকাটা করতে সে আপনি ফুটপাতেই যান বা মেগা শপিংমলে, বাসা থেকে বেরিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে যেতে হবে তো? তখনই পড়তে হচ্ছে ভয়াবহ বিড়ম্বনায়। দুঃসহ যানজট, সে আপনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতেই থাকুন বা রিকশায়, যানজটে আপনাকে পড়তেই হবে। ফুটপাত ধরে নির্বিঘ্নে হেঁটে যাওয়ারও জো নেই।
তবে এত্তোসব ঝক্কি-ঝামেলা, দুর্ভোগের কাছে হার মেনে প্রিয়জনদের জন্য ঈদের কেনাকাটা তো আর বন্ধ রাখা যায় না। তাই ঘরে বসেই কেনাকাটা করছেন অনেকে। রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে নানা নামে অনলাইনে আপনার অপেক্ষায় আছে দেশের অসংখ্য অনলাইন শপ কিংবা মেগা শপিংমল।
সেখানেও ক্রেতাদের জন্য থাকছে বিশেষ ছাড়, উপহারসহ নানা অফার। তাছাড়া নির্দিষ্ট পণ্য কেনার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সেসব পণ্য সামান্য খরচে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ডাক কিংবা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত অনলাইন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান ১৬৫টি। দেশের প্রথম সারির অনলাইন শপগুলোর প্রায় সবকটি ই-ক্যাবের সদস্য।
দেশের প্রথম সারির অনলাইন শপের মধ্যে রয়েছে- দরাজ.কম.বিডি, প্রিয়শপ.কম, আপনজোন.কম, ব্রান্নো.কম, রকমারি.কম, সেলসবিডি, আমার গ্যাজেট.কম, চালডাল.কম, মুঠোবাজার.কম, যেমনতেমনকম, বিডিহাট.কম ইত্যাদি। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে প্রত্যেকটি অনলাইন শপই মূল্যছাড় দিচ্ছে বিভিন্ন পণ্যে। তাছাড়া ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’র সুবিধা তো আছেই।
ফলে ক্রেতা ঘরে বসেই ঘুরে আসতে পারেন এসব অনলাইন শপ এবং পছন্দ মতো কিনে নিতে পারেন প্রিয় পণ্যটি।
আসন্ন ঈদ উপলক্ষে দেশের বৃহত্তম অনলাই শপ ‘প্রিয়শপ.কম’ এ সব ধরনের পোশাকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে ঘড়ি, বেল্ট, ব্যাগ, ওয়ালেট ইত্যাদি ফ্যাশনেবল পণ্যে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে প্রিয়শপ।
সব ধরনের পণ্যে ক্রেতা পাচ্ছেন ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ সুবিধা। অর্থাৎ প্রিয়শপের কর্মীরা বাসায় নির্দিষ্ট পণ্য পৌঁছে দেওয়ার পর মূল্য পরিশোধ করবেন ক্রেতা। এক্ষেত্রে একজন ক্রেতা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রিয়শপে যত কেনাকাটাই করেন না কেন পণ্য পরিবহন খরচ হিসেবে দিতে হবে মাত্র ৪০ টাকা।
এছাড়া বিকাশ, মাস্টারকার্ড, ভিসাকার্ড, ডিবিবিএল কার্ডের মাধ্য মূল্য পরিশোধের সুবিধাও রয়েছে। এখানেও রয়েছে ছাড়। মাস্টারকার্ডে মূল্য পরিশোধ করলে ২০ শতাংশ এবং বিকাশে মূল্য পরিশোধ করলে ক্রেতা ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক পাচ্ছেন। এছাড়া প্রিয়শপ থেকে ৫০০ টাকার উপরে কেনাকাটা করলে ক্যাশভাউচারও রয়েছে ক্রেতার জন্য।
ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে ‘প্রিয়শপ.কমে’র নির্বাহী পরিচালক আশিকুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে ‘ই-কমার্স’ এখনো বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে। তবে খুব দ্রুত এর সম্প্রসারণ ঘটছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অনলাইনে কেনাকাটা উল্লেখযেযাগ্য হারে বেড়েছে।
তিনি বলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে মানুষ ব্যবসায়িক, অফিসিয়াল ব্যস্ততার মধ্যে থাকে। এর মধ্যেই একটু নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে চায় সবাই। আর এখন বর্ষাকাল চলছে। ফলে রোদ-গরমের পাশাপাশি বৃষ্টির ঝামেলা তো আছেই। আর ঢাকা শহরের অবস্থাতো যাচ্ছেতাই। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, জ্যাম লেগে যায়। ফলে এসব কারণেও মানুষ কেনাকাটার জন্য অনলাইন শপিংকেই বেছে নিচ্ছে। আশা করি ঈদে প্রচুর ক্রেতা অনলাইন শপিং করবে।
দৈনিক সাড়ে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ ডেলিভারি দেওয়া হলেও ঈদ শপিংয়ে ডেলিভারির পরিমাণ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন আশিকুল আলম।
ইলেক্ট্রনিক পণ্যের অনলাইন শপ ‘আমার গ্যাজেট.কম’র নির্বাহী সাইফুল ইসলাম বলেন, সাধারণত মোবাইল-কম্পিউটার কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতারা দোকানে গিয়েই কিনতে পছন্দ করেন। ফলে অনলাইনে এই পণ্যগুলোর বিক্রি খুবই সামান্য।
তবে আমাদের গ্যাজেট পণ্যে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছি। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে সর্বোচ্চ কেনাকাটা করা ক্রেতার জন্য উপহার হিসেবে থাকছে একটি ড্রোন।
‘আমার গ্যাজেট.কম’-এ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন মধ্যে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ বা পণ্য পরিবহন খরচ মাত্র ৩০ টাকা। ঢাকার বাইরে হলে সেটা পণ্যের পরিমাণের উপর নির্ভর করবে। তবে ঈদ উপলক্ষে এক হাজার টাকার উপরে কেনাকাটা করলে ক্রেতাকে পণ্য পরিবহণ খরচ দিতে হচ্ছে না।
ঈদে ঘড়ি, টি-শার্ট, শার্ট, শাড়ি, পারফিউমে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ মূল্যছাড় দিয়েছে দেশের ক্রেতাপ্রিয় অনলাইন শপ ‘আপনজোন.কম। ’ এখানে এক হাজার টাকার পণ্য কিনলে কোনো রকম পণ্য পরিবহণ খরচ ছাড়াই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতার ঘরে। এছাড়া বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে মাত্র পণ্য পরিবহনের খরচ নেওয়া হচ্ছে মাত্র ৫০ টাকা।
এ অনলাইন শপের ব্যবসা উন্নয়ন ব্যবস্থাপক আবু তাহের সাদ্দাম বাংলানিউজকে বলেন, ডিবিবিএল মোবাইল ব্যংকিং, বিকাশ, মাস্টারকার্ডে ক্রেতা মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।
ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে বলেও জানান তিনি।
সদ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া দেশের একমাত্র ই-কমার্স সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)’র সভাপতি রাজিব আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ই-ক্যাবকে অনুমোদন দেওয়ায় দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হলো। এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবারের ঈদে অনলাইনে কেনাকাটা কয়েকগুন বেড়েছে। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে অনলাইন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এ খাতটি সম্ভাবনাময় খাতে হিসেবে বিবেচিত হবে।
তবে এ খাতটির ব্যববস্থাপনায় আরো উন্নতি করতে হবে এবং ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ বাড়াতে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
এমএইচপি/জেডএম