ময়মনসিংহ: দরজায় কড়া নাড়ছে খুশির ঈদ। কিন্তু পবিত্র মাহে রমজানের শেষ সময়েও ময়মনসিংহে জাকাতের কাপড় বিক্রিতে খুব একটা সাড়া পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ শহরে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২৭ জনের মৃত্যুর পর আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তারা। জাকাত বাবদ গরিব ও দুস্থদের মাঝে দান করছেন নগদ টাকা। ফলে জাকাতের কাপড় ব্যবসায়ীদের মুখ থেকে হাসি উড়ে গেছে। যেভাবে কাপড় বিক্রি হচ্ছে তাতে ঈদের পরেও অনেক কাপড় থেকে যাবে। ফলে মাথায় হাত পড়েছে এসব ব্যবসায়ীদের।
বুধবার (১৫ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহ শহরের জাকাতের কাপড়ের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত তেরি বাজার ও শহরের গাঙ্গিনারপাড়, স্টেশন রোড এলাকার খুচরা বাজারে সরেজমিনে ঘুরে ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সাধারণত ১৫ রোজার পর জাকাতের কাপড় বিক্রির ধুম পড়ে। শহরের ও বিভিন্ন উপজেলার উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ জাকাতের কাপড়ের জন্য শহরের তেরি বাজারমুখী হন। আসতে থাকে অর্ডার। জাকাতের বিভিন্ন দামের কাপড় বিক্রির জন্য এখানে রয়েছে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি দোকান। এখান থেকেই নিজেদের পছন্দসই জাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গি কিনে থাকেন তারা।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতারা তেরি বাজারের পাশাপাশি শহরের গাঙ্গিনারপাড় ও স্টেশন রোড এলাকার বিভিন্ন বস্ত্রালয় থেকে জাকাত কিনতেন। কিন্তু এবার পবিত্র মাহে রমজানের বিদায় মুহূর্তে জাকাতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে অনেক কম। প্রতিবারের তুলনায় মাত্র অর্ধেক শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে।
শহরের তেরি বাজার এলাকার মেসার্স আনসার বস্ত্রালয়, হাবিব ক্লথ স্টোর, ফারুক বস্ত্রালয়, মেসার্স ময়মনসিংহ ক্লথ স্টোর, দি নিউ বিউটি ক্লথ স্টোর, মেসার্স বিআরবি ক্লথ স্টোর, আমিনা ক্লথ স্টোর, বাদল ভৌমিক, শাহীন ক্লথ স্টোর ও জননী বস্ত্রালয় ঘুরে দেখা গেছে জাকাতের কাপড় কেনার ক্রেতা নেই। গত ৫ দিন ধরে ব্যবসা একেবারেই ফ্লপ।
এসব বেশিরভাগ দোকানেই জাকাতের শাড়ি হিসেবে রয়েছে পাপিয়া প্রিন্ট, দীপু প্রিন্ট, তমা প্রিন্ট ও জয়া প্রিন্ট শাড়ি। ১২ হাত লম্বা এসব শাড়ি ২৪০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়। আর সাধারণ মানের লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৭০ টাকায়।
মেসার্স আনসার বস্ত্রালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার জাকাতের কাপড়ের বিক্রি অনেক কম। আমাদের অনেক কাস্টমার কাপড় না কিনে এবার নগদ টাকা দিচ্ছে। ’
দোকানের কর্মচারী গৌতম কুমার ঘোষ জানান, শহরের বড় বাজার এলাকার একজন বিত্তশালী মহিলা প্রতি বছর আমাদের দোকান থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার জাকাতের শাড়ি কিনতেন। এবার তিনি মাত্র ৩ পিস শাড়ি কিনেছেন। গরিব ও দুস্থদের মাঝে নগদ টাকা বিতরণ করেছেন তিনি।
কেন জাকাতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে না, এ প্রশ্ন করতেই লুফে নেন আনসার বস্ত্রালয়ের মালিকের ছোট ভাই রিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ময়মনসিংহে জাকাত ট্র্যাজেডি’র ঘটনা জাকাতের কাপড় বিক্রিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। যারা কাপড় কিনতো তারাও এখন ভয় পাচ্ছে, যদি মানুষ বেশি হয়ে যায়, বড় ধরণের কোন ঝামেলার মুখে পড়তে হয়। এ রিস্ক কেউ না নিয়ে নগদ টাকা বিতরণে ঝুঁকেছেন।
ময়মনসিংহ জাকাত ট্র্যাজেডি’র মর্মান্তিক ঘটনার পর মেসার্স হাবিব ক্লথ স্টোরের প্রায় দেড় হাজার পিস শাড়ি-লুঙ্গির অর্ডার বাতিল করেন এক ধর্নাঢ্য ব্যক্তি। এ বিষয়ে ম্যানেজার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘শামীম সাহেবের ঘটনার পর কেউ আর ঝামেলায় যেতে চায় না। এ কারণে আমাদের ব্যবসাও হচ্ছে না। অর্ধেক কাপড় এবার থেকে যাবে। ’
মেসার্স ফারুক বস্ত্রালয়ের মালিক মো. আখতার ফারুক বলেন, প্রতি বছর ১৫ রোজার পর জাকাতের কাপড় বিক্রি শুরু হলেও এবার ২০ রোজার পর বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু ময়মনসিংহের ওই ট্র্যাজেডি’র ঘটনায় ব্যবসা লাটে উঠেছে। ৩০ হাজার পিস শাড়ি কিনলেও এখন পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছি মাত্র ১৫ হাজার পিস। বাদ বাকি কাপড় হয়তো ঈদের পরেও থেকে যাবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
আরআই/