ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কমছে জামদানি রফতানি ও কারিগরের সংখ্যা

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৫
কমছে জামদানি রফতানি ও কারিগরের সংখ্যা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে জামদানি শাড়ির কদর বিশ্বজুড়ে। কারিগরদের নিজস্ব নকশায় তৈরি আরামদায়ক এ শাড়ি দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়।

দুই থেকে আড়াই মাসে তৈরি হওয়া একেকটি শাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কারিগরদের নানা গল্প।
 
তবে অনেকটা অশনি সঙ্কেতই যেন ভর করেছে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বাহক হিসেবে পরিচিত এ শাড়ির ওপর। প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে রফতানির পরিমাণ ও কারিগরদের সংখ্যা।

অভিযোগ রয়েছে, ‍সঠিক ব্যবস্থাপনা, পদক্ষেপ ও কারিগরদের সঠিক মজুরি নিশ্চিত করতে না পারার কারণেই হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প।
 
বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড সূত্র জানায়, সবসময়ই নারীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা এ শাড়ি গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে একটিও রফতানি হয়নি। এছাড়া ২০১০-১১ অর্থবছরে জামদানি শাড়ি রফতানি হয় সাড়ে চার হাজারটি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার দুইশ’। আর ২০১১-১২ অর্থবছরে তিন হাজার ২শ’ ৫০টি ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে মাত্র ৪শ’ ৭৩টি শাড়ি রফতানি হয়েছে।
 
একসময় একাধিক রফতানিকারক জামদানি শাড়ি রফতানির সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে শুধু মেসার্স লাকী জামদানি উইভিং ফ্যাক্টরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন এটি ধরে রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ উইভার প্রডাক্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।
 
মো. সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, জামদানি শাড়ির সিংহভাগই রফতানি হয় ভারতে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চার শতাংশ ও স্থানীয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছয় শতাংশ, মোট ১০ শতাংশ কর আরোপ করেছে জামদানি শাড়ির ওপর। এছাড়া ভারতে এখন অনেকেই নকল জামদানি শাড়ি তৈরি করছে। এ দুই কারণেই কমে গেছে রফতানি।
 
রফতানি বাড়াতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

সালাউদ্দিন জানান, ভারতের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি রফতানিকারকদের কমপক্ষে শতকরা ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দিতে হবে। তবেই জামদানি শাড়ি আবার নগদ সহায়তামুখী হয়ে উঠবে।
 
আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. ইলিয়াস হোসেন বলেন, জামদানি শাড়ির দাম অনেক বেশি। তাই দেশের বাইরেও ক্রেতা তৈরি করতে হবে। নইলে উৎপাদন কমে যাবে। আর উৎপাদন কমে গেলে এর সঙ্গে জড়িত কারিগররা সঙ্কটে পড়ে যাবেন। সরকারের উচিত সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।
 
যেহেতু রুচিসম্পন্ন নারীরা এ শাড়ি পরেন, তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নকশায়ও পরিবর্তন আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
 
নতুন করে আর কেউ জামদানি শাড়ি তৈরির পেশায় আসছেন না বলে জানালেন প্রায় ৩০ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত কারিগর জয়নাল আবেদিন।
 
সোনারগাঁও উপজেলার গঙ্গাপুর এলাকার এ কারিগর জানালেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। যারা যুগের পর যুগ ধরে জামদানি শাড়ি তৈরি করেছেন তাদের অনেকেই এখন কাজ করতে পারেন না। ভালো মজুরি না পাওয়ায় নতুন কর্মীও এ পেশায় আসছেন না।
 
তিনি জানান, তার এলাকায় প্রায় ৪শ’ জনের মতো কারিগর ছিলেন। বর্তমানে আড়াই থেকে ৩শ’তে নেমে এসেছে। প্রায় সব এলাকারই অবস্থা একই রকম।

এ ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. এরশাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী তাঁতের কাপড় তৈরি হচ্ছে না এটা ঠিক। বিশেষ করে ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে জামদানি শাড়ির রফতানি কমে যাওয়াটা আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। তবে তাঁত শিল্পকে আরও গতিশীল করতে সরকারের পক্ষ থেকে নিরন্তর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
 
কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই থেকে আড়াই মাস ধরে কারিগররা নিজের মতো করে নানা নকশায় তৈরি করেন জামদানি শাড়ি। সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয় একেকটি শাড়ি।
 
একসময় রাজা-বাদশা ও জমিদার পরিবারের নারীরা পরতেন জামদানি। বর্তমানে ধনী ও অভিজাত ঘরের নারীরা এ শাড়ি পরে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি রফতানি হয়ে থাকে।
 
এক একটি শাড়ির পেছনে লুকিয়ে থাকে এক একজন তাঁতির শ্রমের ইতিহাস। প্রতিটি সুতার ফাঁকে-ফাঁকে রয়েছে তাদের ঘাম, কষ্ট, বেদনার কাহিনী। তাই জামদানি শাড়ির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি কারিগরদের মজুরি বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৫
একে/এসএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।