ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইলিশের বংশ বিস্তারে ‘হিলশা কনজারভেশন ফাউন্ডেশন’

সুকুমার সরকার, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৫
ইলিশের বংশ বিস্তারে ‘হিলশা কনজারভেশন ফাউন্ডেশন’

ঢাকা: ইলিশে’র নাম শুনলে সব বাঙালির হৃদয় আপনা থেকেই নেচে ওঠে। যদি মেলে স্বাদের একটি ইলিশ।

আর পদ্মার ইলিশ হলে তো কথাই নেই। স্বাদের গ্যারান্টি শতভাগ। ইলিশ শুধু হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষাই নয়- এর বংশ বৃদ্ধি করে দেশের মানুষের পাতে আরও বেশি বেশি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ‘ইলিশ কনজারভেশন ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ’ 

বিশ্বে বাঙালির পরিচয় ঘটে ইলিশ উদাহরণ টেনে। ইলিশ দিয়েই চেনা যায় বাঙালিকে। পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা বাংলাদেশ বলতে বোঝে শুধু ইলিশ। তারা সর্বক্ষণ হা-পিত্যেশ করেন পদ্মার একটি ইলিশের জন্য। যে কারণে গত ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইলিশ রপ্তানির আবেদন জানান।

এদিকে বাংলাদেশ সরকার তথা মৎস্য অধিদপ্তর গত কয়েকবছর যাবৎ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় মেঘনা ও পদ্মা নদীতে শরীয়তপুর জেলা থেকে ভোলা জেলা পর্যন্ত মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস এবং পটুয়াখালির আন্ধারমানিক নদীতে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস অভয়াশ্রমের ঘোষণা দিয়ে জাটকা (ইলিশের পোনা- ২৫ সেঃমিঃ দৈর্ঘ্য পর্যন্ত) সহ সকল ধরণের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া ভরা প্রজনন মৌসুমে প্রধান প্রজনন ক্ষেত্রে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমার আগে ও পরে মোট ১১ দিন মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সব কার্যক্রমের ফলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে কর্মহীন মৎস্যজীবীদের ক্ষতিপূরণ/প্রণোদনা হিসাবে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় প্রতি মৎস্যজীবী পরিবারে প্রতিমাসে ৪০ কেজি হিসেবে ৪ মাস চাল প্রদান করার পাশাপাশি মৎস্য অধিদপ্তরের জাটকা সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে হতদরিদ্র মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা হয়।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি দেশি-বিদেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের “ডারউইন ইনেসিয়েটিভ” এর আর্থিক সহায়তায় International Institute for Environment and Development (IIED) UK, Bangladesh Centre for Advanced Studies (BCAS) & Bangladesh Agricultural University (BAU) মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় “ইকোনোমিক ইনসেটিভ টু কনসার্ভ হিলসা ফিস ইন বাংলাদেশ” নামে প্রতিষ্ঠানটি গত তিন বছর যাবৎ গবেষণা/সমীক্ষা পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রণোদনামূলক ইলিশ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও টেকসই কারণসহ ইলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা এ সমীক্ষার উদ্দেশ্য।

এই সমীক্ষার আওতায় ইলিশের সার্বিক উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য “হিলসা কনজারভেশন ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে সরকারের কাছে।

গত জুন মাসের ১১ তারিখে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে হিলসা কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের ওপর এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওই সেমিনারে মৎস্য ও পশুসম্পমন্ত্রী মুহাম্মদ ছায়েদুল হক প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ সেমিনারে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. লিয়াকত আলী (বর্তমানে বিসিএএস’র কর্মরত), অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল ওয়াহাব (টিম লিডার ইকোফিশ প্রজেক্ট), আইআইইডি’র ড. এসাম ইয়াসিন মোহাম্মদ (ডারউইন হিলসা প্রজেক্ট’র টিম লিডার), অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. কৃষ্ণ গায়েন,  মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাহের, পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান ড. শাহ্জাহান খন্দকার, ড. জি সি হালদার, ইলিশ বিশেষজ্ঞ, রঞ্জিত চন্দ্র সরকার, যুগ্ম সচিব পরিবেশ মন্ত্রণালয়- এমএস শামিমা হক, যুগ্ম সচিব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়,  বিসিএএস’র সিনিয়ার ফেলো খোন্দকার মাইনউদ্দীন, ড. দ্বিজেন মল্লিক, ইলিশ কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক মোকাম্মেল হোসেন এবং ড. চৌধুরী ছালেহ্ আহমেদ।

ওই সেমিনারে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী ‘হিলসা কনজারভেশন ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। তিনি একে সময়োপযোগী একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসাবে মন্তব্য করেন।

এই সেমিনারে জানানো হয়- বিশ্বে ইলিশের মোট উৎপাদনের ৬০ ভাগ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। ২৫ ভাগ মায়ানমার, ১৫ ভাগ ভারত ও বাকি অংশ অন্যান্য দেশে। একক প্রজাতি হিসাবে দেশের মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সবচেয়ে বেশি- প্রায় ১২% এবং জাতীয় আয়ে ইলিশের অবদান ১%। দেশের প্রায় ৫ লক্ষ মৎস্যজীবী সার্বক্ষণিকভাবে এবং প্রায় ২৫ লক্ষ লোক জীবিকার জন্য খণ্ডকালীন ইলিশ আহরণসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত।

‘ডারউইন হিলসা’ প্রকল্পের পাশাপাশি আরও কয়েকটি সংগঠন ইলিশের বংশ বিস্তারে ব্যাপকভাবে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। এসব প্রতিষ্ঠানের গবেষকগণ ইলিশপ্রবণ নদীসমূহে সমীক্ষাও করেছেন। এতে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে মৎস্য বিভাগ এবং মৎস্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় ওয়ার্ল্ডফিশ কর্তৃক ২০১৪ সাল থেকে ৫ বছরের জন্য বাস্তবায়িতব্য ইকোফিশ প্রকল্প বিশেষ উল্লেখযোগ্য।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৫
এসএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।