সিলেট: ‘রাজস্ব সংলাপ নিয়মিত করতে পারলে দেশের রাজস্ব আয় বাড়বে, ব্যবসায়ী ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে এবং রাজস্ব আদায়ের জটিলতা ও হয়রানি কমবে। তাই রাজস্ব সংক্রান্ত এমন সংলাপ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
শনিবার (১ আগস্ট’২০১৫) দুপুরে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির হলরুমে ‘রাজস্ব সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা’(রাজস্ব সংলাপ) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন কথা বলেন।
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতেই এনবিআর’র উদ্যোগে এমন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আর এই সংলাপের শুরু হলো বিভাগীয় নগরী সিলেট থেকে।
সিলেট চেম্বারের সভাপতি সালাহ উদ্দিন আলী আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন- ‘এটি রাজস্ব সংক্রান্ত মতবিনিময় হলেও প্রথম রাজস্ব সংলাপ। এই সংলাপ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এতে লাভবান হবে দেশের জনগণ, বাড়বে রাজস্ব আদায়। ফলে সরকার জনগণের জন্য বেশি বেশি সেবামূলক কাজ করতে পারবে। ’
প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর সংলাপ আয়োজন করা হবে। এছাড়া মাঝে মধ্যে ভিডিও কনফানেন্সের মাধ্যমে নিজে এই সংলাপে অংশ নেবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বদলে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে নতুন এনবিআর কনসেপ্ট হাতে নিয়ে কাজ শুরু করেছি। গত অর্থবছরে এর প্রয়োগ করে করে এত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
বিগত অর্থবছরে যেভাবে সিলেটসহ সারা দেশে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে ব্যবসায়ীরা সরকারকে অতিরিক্ত প্রবৃদ্ধি দিতে সক্ষম হয়েছেন সেভাবে আগামী বছরও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিলেটের ব্যবসায়ীরা বরাবরই ভ্যাট, ট্যাক্স প্রদানে আন্তরিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অংশিদারিত্ব ছাড়া যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য ও দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় তেমনি সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ দায়িত্ব পালন না হলে সবকিছু ব্যর্থতায় হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ ও আন্তরিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
এনবিআর চেয়ারম্যান সরকারের ‘গুড গভার্নেন্স পলিসি’ বাস্তবায়নে তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের ব্যাপারে ‘দুর্নীতি’ ও ‘হয়রানি’ এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা জানান। এমন অভিযোগ থাকলে অনলাইন ও রাজস্ব সংলাপে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া তিনি দেশের সর্বোচ্চ করদাতাদের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা, তাদের সম্মানিত করা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান।
সভায় কাস্টম্স, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট, সিলেট এর কমিশনার ড. এ. কে. এম. নুরুজ্জামান এবং কর অঞ্চল-সিলেট এর কর কমিশনার মোঃ মাহমুদুর রহমান ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
এসময় কাস্টম্স কমিশনার বলেন, আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে আমদানি-রপ্তানীকারকদের সুবিধার্থে প্রতি শুক্র ও শনিবার শুল্ক স্টেশন সমূহ খোলা থাকবে এবং আন্তর্জাতিক নিয়মে রোববার বন্ধ থাকবে।
সভায় ব্যবসায়ী নেতারা বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। প্রস্তাবনা গুলোর মধ্যে রয়েছে- নিয়মিত কর প্রদানকারীগণকে অবসরকালীন আর্থিক সুবিধা প্রদান, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত করদাতাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, শুল্ক স্টেশন সমূহে ওয়্যার হাউস নির্মাণ, কৃষি যন্ত্রপাতির খুচরা যন্ত্রাংশ আমদারির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক হ্রাসকরণ, কর বিভাগ কর্তৃক অডিটের ক্ষেত্রে ব্যবসার বর্তমান অবস্থা ও ফাইলপত্র সঠিকভাবে পর্যালোচনাক্রমে কর নির্ধারণ, রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাগুলোর জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কাস্টম্স, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেটের কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামান, কর অঞ্চল সিলেটের কমিশনার মো. মাহমুদুর রহমান, সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন কিবরিয়া সুমন, অভ্যন্তরীণ বাজার সাব-কমিটির আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম, সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, সাবেক সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহ, পরিচালক হিজকিল গুলজার, সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন, চেম্বারের পরিচালক বশিরুল হক, আভ্যন্তরিণ ব্যাংক সাব-কমিটির আহ্বায়ক জিয়াউল হক, কর আইনজীবি এম. শফিকুর রহমান, সিলেটের ছয়বারের সর্বোচ্চ করদাতা মোনায়েম খান বাবুল, বিসিক মালিকদের পক্ষ থেকে আলীমুল এহসান চৌধুরী প্রমুখ।
ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন চেম্বারের সহ-সভাপতি মাসুদ আহমদ চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৫
এএএন/এনএস/