ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ড. আতিউর রহমান

আমি গরিবের ব্যাংকার, তবে ধনীদের আক্রান্ত করি না

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৫
আমি গরিবের ব্যাংকার, তবে ধনীদের আক্রান্ত  করি না ড. আতিউর রহমান / ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘সারা পৃথিবী জানে, আমি গরিবের অর্থনীতিবিদ এবং গরিবের গভর্নর। কিন্তু গরিবের গভর্নর হতে গিয়ে আমি ধনীদের আক্রান্ত করিনি।

কারণ আমি নিজেও জানি, ধনী এবং গরিব মিলেই একটা দেশ। ’ –এ মন্তব্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এর। সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক‍ান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তার এই দীর্ঘ সাক্ষাতকারে উঠে আসে দেশের চলতি অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ উন্নয়ন ও সম্ভাবনার নানা দিক। সদ্যঘোষিত মুদ্রানীতি, মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর প্রসঙ্গও উঠে আসে গভর্নরের বিশ্লেষণে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিভার্জ কি করে কাজে লাগানো যায় সাক্ষাতকারে তারও একটা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ড. আতিউর রহমান।   এছাড়াও তার বক্তব্যে উঠে এসেছে হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারিসহ সমসাময়িক অর্থনীতির বিচিত্র সব বিষয়।

পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাতকারটি হুবহু প্রকাশ করা হলো।  

দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাই
 
ড. আতিউর রহমান : আমাদের অর্থনীতির সব সূচকই স্থিতিশীল। এটা খুবই আনন্দের বিষয়; এ কারণে যে, সাধারণত সব সূচক কখনই স্থিতিশীল থাকে না। সব সূচক একসঙ্গে স্থিতিশীল রাখাটা কষ্টকর। কিন্তু এই সময়ে সব সূচকেই স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। এর একটা বড় কারণ হলো যে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকলে হয়তো সব সূচক একসঙ্গে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হতো না।
 
Governorঘোষিত মুদ্রানীতির মধ্য দিয়ে মূল্যস্ফীতি কতোটা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে?
 
ড. আতিউর রহমান : সামষ্টিক অর্থনীতির যেটা নিয়ে আমার সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা, সেটা হলো মূল্যস্ফীতি। মোটামুটি জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক অবস্থায় এটাকে আটকে রাখা সম্ভব হয়েছে। এক সময় মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ ছিলো। তারপর ধীরে ধীরে বিচক্ষণ মুদ্রানীতি দিয়ে আমরা এটিকে কমিয়ে এনেছি। এ কাজে আমাদের কৃষিখাতের বিপুল উৎপাদন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কর্মতৎপরতা এবং শিল্পপ্রবৃদ্ধি সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিলো, সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখবো। সেজন্য কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক নজর দিয়েছে। সরকারও কৃষিতে ভর্তুকি বাড়িয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কৃষি ঋণ বাড়িয়েছে। এমনকী বর্গাচাষীদেরও আমরা কৃষিঋণ দিয়েছি। ফলে সরবরাহ বাড়ায় জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে। খাদ্য-মূল্যস্ফীতি এখন একেবারেই স্থিতিশীল। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিতেও আমরা হস্তক্ষেপ করেছি। ব্রড মানি ও রিজার্ভ মানি দিয়ে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করছি। আমাদের মুদ্রানীতি যে এক্ষেত্রে কাজ করছে, তার বড় প্রমাণ হলো খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও কমতে শুর করেছে। গত মাসে আমরা লক্ষ্য করি যে, খাদ্য ও জ্বালানি বাদে অন্যক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি (কোর ইনফ্লেশন) কিছুটা মাথা উঁচু করার চেষ্টা করছে। সে পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা সংযত মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছি। না হলে মুদ্রানীতিতে আরও নমনীয় হওয়ার সুযোগ ছিলো। আমাদের সিদ্ধান্ত হলো, যখনই কোর ইনফ্লেশন মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, তখনই তা নিয়ন্ত্রণ করবো। তবে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, ঘোষিত মুদ্রানীতির সময়কালেই এ ধরণের মুল্যস্ফীতি কমতে শুরু করলেই আমরা মুদ্রানীতিতে সংশোধন এনে আরও নমনীয় হবো। যারা সাধারণ মানুষ, গরীব মানুষ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যস্ফীতি বাড়লেও ধনীরা গ্রহণ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু যখন খাবারের দাম বাড়ে, কাপড়ের দাম বাড়ে ও বাড়িভাড়া বাড়ে, গরিবেরা তা বহন করতে পারে না। মূল্যস্ফীতি গরিবের সবচেয়ে বড় শত্রু ।
 
মূল্যস্ফীতি কমাতে জ্বালানি তেলের দাম কমাতে সরকারকে সুপারিশ করবেন কি?
 
ড. আতিউর রহমান : মূল্যস্ফীতি আরও কমানো সম্ভব হতো, যদি অবকাঠামো পরিস্থিতি আরও উন্নত থাকতো। বাজার-ব্যবস্থাপনা যদি আরও উন্নত হতো, তাহলে গ্রামের মানুষের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ঢাকায় আসতো, আরও কমদামে শহরের মানুষকে দিতে পারতাম। তবে আমাদের পক্ষে একটা বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেক কমেছে। তবে আমরা এখনও কম দামে তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। সরকারের নীতির কারণেই আমরা এটা পারিনি। সরকার চাচ্ছিলো যে, জ্বালানি তেলে সরকারের যে ভর্তুকি আছে, তা আস্তে আস্তে কমিয়ে ফেলবে। কিন্তু  বলতে গেলে এখন আর কোনো ভর্তুকি নেই। তাই এখন সরকার কিন্তু ইচ্ছা করতে পারে জ্বালানি তেলের দাম কমাতে।
 আবার আরেকটি বিষয় হলো, জ্বালানি তেল পরিবেশ দূষণ করে। তাই এর দাম কমালে পরিবেশবান্ধব সৌর প্যানেল বা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার কমে যায় কি-না, সে আশঙ্কাও রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত মত হলো, দু’টার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। প্রচলিত জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমানো উচিত। তবে এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করতে পারে না। অর্থ, মুদ্রা ও মূল্যস্ফীতি বিষয়ে সরকারের নীতি-নির্ধারণী পরিষদ কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের আগামী বৈঠকে এ সুপারিশ করবো। একইসঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ভর্তুকি বাড়ানো উচিত। এই দু’টো একসঙ্গে চললে আমরা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাবো। সরকারও এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তারা তো ইঙ্গিত দিলো যে ,বিদ্যুতের দাম এখন বাড়াবে না। এমন কী গ্যাসের দামও বাড়াবে না। আমার মনে হয়, তারা ভোক্তাদের একটু ছাড় দেবে। Atiur rahman
 
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলুন
 
ড. আতিউর রহমান: আমরা বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে বেশ ভালো করছি, গতবছর আমরা ৭.৫ শতাংশের মতো রেমিটেন্স বাড়াতে পেরেছি। ১৫.৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে, যা আমাদের মতো দেশের জন্য রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স। গত ৬ বছরে রেমিটেন্স-প্রবাহ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। আরেকটি দিক হলো, রপ্তানি। গতবছর মূলত রাজনৈতিক কারণে তিন মাসের মতো আমাদের অর্থনীতি একদম স্থবির হয়ে পড়েছিল। সহিংসতার কারণে বিদেশিরা আসার সাহস পাচ্ছিলো না, অনেক রপ্তানি অর্ডার বাতিল হয়েছিল। ফলে রপ্তানিতে এক সময় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিও দেখা যাচ্ছিলো। বছর শেষে রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে কম হয় কি-না, এমন ভয় আমরাও পেয়েছিলাম। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৪ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগামী বছর ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছি। তবে সুখের কথা হলো, আমদানি বাড়ছে। আমদানির ৬৫ শতাংশই মূলত মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল। তাতে আগামী দিনের জন্য আমাদের রপ্তানি সক্ষমতা বাড়ছে। তবে যেহেতু আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ আর রপ্তানিতে ৪ শতাংশের মতো, তাতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ভারসাম্যে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এটা নিয়ে আমি এতোটা উদ্বিগ্ন না। কারণ, এটা আমাদের ভবিষ্যৎ সক্ষমতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভারতের বাণিজ্যঘাটতি আমাদের চেয়েও বেশি। সাত মাসের আমদানিব্যয় মেটানোর সক্ষমতা আমাদের রয়েছে, তাই আমরা ঘাটতি সত্ত্বেও স্বস্তিতে রয়েছি।
 
রিজার্ভের অর্থ কিভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংকের
 
ড. আতিউর রহমান: উচ্চ রিজার্ভের কারণে আমি এখন অনেক নতুন নতুন ভাবনা ভাবতে পারছি। রপ্তানি ও শিল্পখাতকে আরও সহায়তা করার জন্য ইতোমধ্যে রিজার্ভ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার (২০ কোটি ডলার) আলাদা করে রেখেছি, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে গ্রিন  ফাইন্যান্সিং করার জন্য। এই তহবিল থেকে অর্থায়ন করে নারায়ণগঞ্জে একটি গ্রিন টেক্সটাইল করেছি। প্রয়োজন হলে এ তহবিলে আরও অর্থ দেবো। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নতুন ও পুরনো কারখানার জন্য মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে আরও ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি)  ডলার দিয়েছি। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বিশেষ করে বস্ত্রখাতের কারখানার জন্য জাইকার সহায়তায় ১০০ কোটি ডলারের একটি তহবিল চালু রয়েছে। আমরা শুধু নিজেরা অর্থ দিই না, শিল্পখাতকে নানাভাবে সহায়তা দিই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিজিএমইএ মুন্সিগঞ্জে একটি গার্মেন্টপল্লী করছে। সংগঠনটির সভাপতি আমাকে জানালেন যে, ওই প্রকল্পের জন্য কোনো জায়গা থেকে টাকা জোগাড় করতে পারছেন না। আগের দিন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নৈশভোজে আমার কথা হয়েছিলো, রাষ্ট্রদূত বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। বিজিএমইএ’র সভাপতির কথা শোনার পর আমি নিজে রাষ্ট্রদূতকে ফোন করে কথা বলেছি। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে বিজিএমইএ গার্মেন্টপল্লী নির্মাণে চীনা বিনিয়োগ পেয়েছে।   বাংলাদেশ ব্যাংক এভাবে পেছন থেকে অনেক কাজ করে দিচ্ছে।   মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবার আমরা অর্জন করবোই।
 
সভ্রেন ওয়েলথ ফান্ড গঠন প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি কতদূর ?
 
ড. আতিউর রহমান: এ তহবিল গঠনের জন্য ইতোমধ্যে আমরা একটা কমিটি করে দিয়েছি। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী হবে। এটি এক থেকে দুই বিলিয়নের ডলারের মধ্যে হবে। আর ‘অফশোর টাকা বন্ড’ নামে এক বিলিয়ন ডলারের আরেকটি বন্ড আমরা চালু করবো। এজন্য আইএফসির সঙ্গে কাজ করছি। এ তহবিলের অর্থ অবকাঠামো খাতে ব্যয় করবো, সরকার-বেসরকারি খাত যে আগ্রহী হবে, সে-ই পাবে। গাভী পালনের জন্য ২০০ কোটি টাকা এবং নতুন চা-চাষীদের জন্য এক শ’ কোটি টাকার পুন-অর্থায়ন তহবিল করছি। মুদ্রানীতিতেও স্পষ্ট করে বলেছি যে, আমরা শিল্পখাতকে সহায়তা করবো। আমার ধারণা, দিনের শেষে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা খুব সম্ভব। আগামী ৬ মাস বা এক বছরে আমি বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছি না। ফলে ব্যবসার আস্থা বাড়তেই থাকবে। আমার মনে হয়, এবার প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের উপরেই থাকবে।
 
Atiur rahmanবাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ফাইন্যান্সিং কার্যক্রম সম্পর্কে বহির্বিশ্বের সাড়া কতোটুকু?
 
ড. আতিউর রহমান: গ্রিন ফান্ডের জন্য ইতোমধ্যে আমরা ২০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছি। বিশ্বব্যাংক যে ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি) ডলার দেবে, তারও একটা অংশ অবকাঠামো খাতে ব্যবহার করবো। অন্য এজেন্সি এগিয়ে এলে, তা-ও আমরা গ্রহণ করবো। পরিবেশবান্ধব কাজে ঋণ দেবার যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তা খুব প্রশংসিত হচ্ছে। জিইএফ নামে পরিচিত বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ উইং ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে এক্রিডিটেশন দিয়েছে, বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে। ফলে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের জন্য সেখান থেকেও আমরা টাকা পাবো। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন উন্নয়নমুখি (ডেভেলপমেন্টাল) কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমাদের কাছ থেকে চীন এখন শিখছে, তবে তারা আমাদের মতো এতোটা পথ এগুতে পারেনি। ডেভেলপমেন্টাল সেন্ট্রাল ব্যাংক ধারণাটাই নতুন। বাংলাদেশের কাছ থেকেই সবাই শিখছে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বের কাছে পথ প্রদর্শক।
 
আবাসন খাত দীর্ঘদিন ধরে আলাদা তহবিল গঠনের দাবি করছে, গৃহায়ন তহবিলেও অর্থ নেই। এটা চালুর কোন উদ্যোগ আছে কি?
 
ড. আতিউর রহমান: গৃহায়ন তহবিল চালু আছে। এক সময় মূল্যস্ফীতি একটু কমানোর জন্য মুদ্রানীতি কঠোর করতে হয়েছিল। সেই সময় গৃহায়ন তহবিল আমরা বন্ধ রেখেছিলাম। তবে এখন আমরা সত্যি সত্যি ভাবছি যে, একেবারে নিচের দিকে যারা, গরিবদের জন্য ৬০০ থেকে ১০০০ বর্গফুটের বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য কিছু করা যায় কি-না। এটা মূল্যস্ফীতির উপর নির্ভর করে। মূল্যস্ফীতি যখন আরেকটু কমবে, তখনই আমরা এটা করবো।
 
অনেক সাফল্যের মধ্যেও হলমার্ক, বিসমিল্লাহর ঋণ কেলেঙ্কারি ব্যাংকিংখাতের অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে পেছনে টানছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনিয়ম না হয়, সেজন্য কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
 
ড. আতিউর রহমান: এগুলো ব্যাখ্যা করার সময় কম। তবে এ ধরনের ঘটনা আর যেন না ঘটতে পারে, সেজন্য যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছি। সুপারভিশন বা তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করেছি, মোটামুটিভাবে ডিজিটাইজ করে ফেলেছি। ফলে সশরীরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় না। এখানে বসেই তথ্য আসছে যে, কোন শাখায় ওলটপালট হলে সে-তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পারে, তখন ওইখানে চলে যাচ্ছে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও কমপ্লায়েন্সে আগে সমস্যা ছিলো, এমডি ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কিছু খেয়াল করতো না যে, একটি শাখায় এতো টাকা যাচ্ছে, অন্য শাখা থেকেও এনে দিচ্ছে, টাকাগুলো কোথায় কিভাবে যাচ্ছে।   নিশ্চয়ই কারও না কারও জানা দরকার। এখন এমন ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে প্রতি তিন মাস পর পর এমডি এবং অডিট কমিটির চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করে আমাকে জানাতে হয়, তারা কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক কোন না কোন ব্যাংককে জরিমানা করছে। কত শত ছেলের চাকরি গেল এই কয়েক বছরে, তার হিসাব নেই। এসব পদক্ষেপের কারণে ব্যাংকগুলোতে এক ধরনের শৃঙ্খলা ফিরে আসছে। আমাদের সুপারভিশন শক্ত করেছি বলেই এখন আর আইবিপি’র কথা এখন আর শোনা যায় না। সোনালী ব্যাংকের কথাই বলা যাক, হলমার্ক ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য ব্যাংকের বিল যে এরা আটকে রেখেছিলো, আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে তা পরিশোধ করতে বাধ্য করেছি। এখন বিদেশিরাও বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে চিন্তা করে না।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের একজন ব্যবসায়ী আমাকে বলেছেন, একটি বিদেশি ব্যাংকের সিইও তাদের বলেছেন যে, সময়মত এলসির টাকা পাওয়া না গেলেও চিন্তা নেই, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক কঠোর। তাই অর্থ নিয়ে চিন্তা নেই। এ কারণেই কান্ট্রি রেটিং-এ এক ধাপ আগালাম। পাকিস্তান ৭ এ, আমরা ৫ নম্বরে। সুপারভিশনের জন্য আমরা ৫ টা ডিপার্টমেন্ট খুলেছি। প্রত্যেকটা ব্যাংকের জন্য ডিজিএম লেবেলের একজন স্পেশালিস্ট নিয়োগ করেছি। কোনো তথ্যে গড়মিল হলে আগে ওই ডিজিএমকে ধরি। Atiur rahman
 
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বললেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না, আপনি কি বলবেন?
 
ড. আতিউর রহমান: আমাদের এখানে ওই ধরনের কোনো সমস্যা নেই। আমরা চোখ-কান বন্ধ রেখে কাজ করি। রাজনৈতিক প্রভাব সব দেশেই থাকে, আমাদের দেশেও হয়তো আছে। তবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে না। উনি সরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদকে বোঝাতে চেয়েছেন। সেখানেও অনেক উন্নতি হয়েছে। আগে যাকে-তাকে পরিচালক করা হতো। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনেকের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ফেরত দিচ্ছি, প্রশ্ন তুলছি।
 
আপনারা সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা কেটে অন্যদের বিলের পাওনা পরিশোধ করে দিচ্ছেন। কিন্তু সোনালী ব্যাংক তো হলমার্কের কাছ থেকে কোন টাকা আদায় করতে পারছে না।
 
ড. আতিউর রহমান: সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক যেভাবে টাকা নিয়েছে সেটা ঋণই ছিলো না। যেটা ঋণই না সেটা ঋণ হিসেবে কিভাবে আদায় হবে! ওটা চুরি হয়ে গেছিল। জালিয়াতি হয়ে গিয়েছিল। ঋণের জন্য একরকম ব্যবস্থা; আর জালিয়াতির জন্য আরেক রকম ব্যবস্থা। কোনো নিয়ম মেনে হলমার্ককে ঋণ দেওয়া হয়নি। যারা আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ তারা যদি এটাকে চুরি হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আদায় করার চেষ্টা করে তাহলেই কেবল এই টাকা আদায় করা সম্ভব। তবে টাকা উদ্ধার হয়নি বলে তো আর ব্যাংক খাতকে বসিয়ে রাখবো না। আমরা ব্যাংকখাতে গতি এনেছি, আর যাতে এরকম চুরি না হয়। গত দুই তিন বছরে এ রকম বড় চুরি আর কোথাও হয়েছে ? একটা আইবিপি জালিয়াতি হয়েছে? সব কলকব্জা বন্ধ করে দিয়েছি।
 
অনিয়মে কাবু হওয়া বেসিক ব্যাংক আর সোনালী ব্যাংক কতোটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

ড. আতিউর রহমান: বেসিক ব্যাংকের রক্তক্ষরণ আমরা বন্ধ করিনি? সেখানে শুরুতেই আমরা পর্যবেক্ষক দিয়েছিলাম। আস্তে আস্তে ব্যাংকটাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলাম। এরপর আমরা ব্যাংকটির পর্ষদে পরিবর্তন এনেছি। এমটিকে অপসারণ করেছি। এখন ব্যাংকটি উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে।   আমার ধারণা, পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকটি দাঁড়িয়ে যাবে। দুই এক জায়গাতে আমরাও শিথিলতা দেখাচ্ছি। যেমন ব্যাংকটির কিছু ঋণ পুন:তফসিল করে দিচ্ছি। অনেক ভাল ভাল উদ্যোক্তা আমাকে এসে বলে আমি তো ভেবেছিলাম বেসিক ব্যাংকে টাকা দিচ্ছি। কিন্তু গিয়ে দেখি আমার টাকাটা অন্য কোথাও জমা হয়ে গেছে। বেসিক ব্যাংকে টাকাটা জমা হয়নি। এধরনের উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের কষ্ট হয়। তারপরও আমি তাদের বুঝিয়ে বলি, যেটা হারিয়ে গেছে গেছে। এখন যতটুকু আছে সেটা নিয়ে আপনি যদি আবার পুন:তফসিল করে আবার কাজ করতে চান করেন। আপনার ব্যাংকের জন্য আমরা বিশেষ সহানুভুতি দেখাবো। এবং এটা করছি কিন্তু। করে আবার সবাইকে ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যে নিয়ে আসছি। নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আবার ব্যাংকটিকে এর পায়ের ওপর দাঁড় করাতে চেষ্টা করছে। তার মানে এই নয় যে, চোরেরা এমনিই পার পেয়ে যাবে। এটাতো হতে পারে না। এটা আইন শৃংখলা কর্তৃপক্ষ, দুর্নীতি দমন কমিশনে আমাদের পরির্দশন প্রতিবেদন দিয়েছি, তার ভিত্তিতেই তারা ব্যবস্থা নেবেন। এটাই আমরা আশা করবো।
 
আপনি সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে বলেছেন, দুদকে সব তথ্য প্রমাণাদি দিয়েছেন। দুদক সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
 
ড. আতিউর রহমান: সেদিনও আমি বলেছি এটা আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান। এর একটি আলাদা কর্মকাঠামো আছে। এটা নিয়ে আপনারা তাদের প্রশ্ন করবেন। আমার কাজ আমি করেছি। আমি এটুকুই বলতে পারি।
 
নতুন চালু হওয়া ব্যাংকগুলো সম্পর্কে এক কথায় মূল্যায়ন করুন।

ড. আতিউর রহমান: এখন পর্যন্ত নতুন ব্যাংকগুলো খারাপ করছে না। কারণ এখন পর্যন্ত তাদের খেলাপি ঋণ শূন্য। এটা একটা ভাল লক্ষণ। সব ব্যাংকই মোটামুটি ভাল করছে। দুই একটি ব্যাংকে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। কর্মী নিয়োগে একটু সমস্যা হয়েছিল। কিছু কিছু জায়গাতে বুঝে উঠতে পারছিল না। হয়তো নতুন বলে এমনটা হয়েছিল। কয়েকটি ব্যাংকে আইন না বুঝেই সব পরিচালক পদত্যাগ করে বসেছেন। পরে আমাদের কাছে এসে বলেছেন, তারা বুঝতে পারেননি। আমরা বলেছি বোঝেননি যখন একবার আমাদের কাছে জানতে চাইতে তো পারতেন! তারা এখন আইনের আশ্রয় নিয়ে ফিরে আসছেন। ছোট ছোট ভুলভ্রান্তি হচ্ছে। নতুন বলে এমনটা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তারা অন্যসব ব্যাংকের চেয়ে খারাপ করছেন না। তারপরও তাদের ওপর আমরা নজর রাখছি। যদি কোনো রকমের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় তাহলে বেসিক ব্যাংকে যা করেছি, সোনালী ব্যাংকে যা করেছি সেরকম ব্যবস্থা নেব। কোনো ছাড় দেব না।
 
বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদা একটা প্রতিষ্ঠান। এর জন্য স্বতন্ত্র পে স্কেল হবে-হবে করেও হচ্ছে না। গত নির্বাচনের আগে তো প্রায় সবই হয়েই গিয়েছিল। শুধু প্রজ্ঞাপনটাই বাকি ছিলো।
 
ড. আতিউর রহমান: এবারও হয়ে গেছে। ফরাসউদ্দিন সাহেব আমাকে বলেছেন যে, তিনি স্বতন্ত্র পে-স্কেলের জন্য প্রস্তাব করেছেন। সরকার বাকি সিদ্ধান্তটা নেবেন। আমরা আশা করি যে, সরকার ফরাসউদ্দিন সাহেবের প্রস্তাব শুনবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের ব্যাংক। সরকার তার পরিবারের সদস্যদের কিভাবে বিচার করবেন সেটা সরকারের বিষয়। তবে আমি সন্তুষ্ট যে ফরাসউদ্দিন সাহেব অন্তত প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি স্বতন্ত্র পে-স্কেলের জন্য। এর আগে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী দুজনেই আমাদের স্বতন্ত্র পে-স্কেলের পক্ষে রায় দিয়েছেন। বিভিন্ন অনুমোদন দিয়েছেন। আইন বিভাগও অনুমোদন(ভেটিং)  দিয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা। আমি আশা করবো, সরকার বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী তার কথা রাখবেন।
 
অন্যান্য দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের যে পদমর্যাদা আমাদের দেশে সেই পদমর্যাদা দেওয়া হয় না।
 
ড. আতিউর রহমান: এটাতো আমার জন্য বলা খুবই বিব্রতকর।   আমি মনে করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সারা পৃথিবীতে স্বাধীন, এটা স্বাধীন থাকাই ভাল। ক’দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন যে রিজার্ভ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতার ওপর কেউ যদি হাত তোলে, সেটা ভারতের অর্থনীতির সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। Atiur rahman

আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যপারে খুব সুনজর রাখেন। তিনিও মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংক যেন স্বাধীন, স্বতন্ত্র হিসেবে পরিচালিত হয়। সরকারপ্রধান যখন ভাবেন এরকম এবং তিনি ভাবেন বলেই কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সাহসের সাথে এতোটা কাজ করে যেতে পারছে। আপনি যেটা বলছেন, সেটা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো।   সেটা তো একদিনে আসবে না। একেক দেশের গর্ভনরের মর্যাদা একেক রকম। ভিয়েতনামের গভর্নরের মর্যাদা অর্থমন্ত্রীর সমান। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানের অবস্থান রাষ্ট্রপতির পরেই। আবার কোনো কোনো দেশে আমাদের চেয়েও নিচে। সুতরাং এটা নির্ভর করবে একেকটা দেশের ওপর, তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। আমি গভর্নর থাকাকালে এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। এই পদের মর্যাদা যদি বাড়ে সেটা যেন আমার চলে যাওয়ার পরে হয়।
 
বিদেশে বিনিয়োগ করতে অনেকই আগ্রহী, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান কি?
 
ড. আতিউর রহমান: যেসব শিল্প ভাল করছে, যেমন ওষুধশিল্প, তারা যদি বিদেশে বিনিয়োগ করতে চায় আমরা তাদের অনুমোদন দিচ্ছি। সম্প্রতি আমরা ওষুধশিল্পের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছি। মায়ানমারে আমরা একটি প্রতিষ্ঠানকে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে দিয়েছি। ইথিওপিয়াতে আমাদের একটি গার্মেন্টকে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিয়েছি। দেশের বাইরে নয়, আমরা দেশের ভেতরে বিনিয়োগকে বেশি উৎসাহিত করছি। দেশের ভেতরে এতো বিনিয়োগের সুযোগ। বিদেশি মুদ্রার একটি অংশ দেশের ভেতরে কিভাবে বিনিয়োগ করা যায় আমরা তার চেষ্টা করছি। এর জন্যই সার্বভৌম সম্পদ তহবিল করছি, রিজাভ থেকে ২০ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করছি। আমরা দেশের ভেতরটা আগে উন্নত করতে চাচ্ছি। কারণ আমাদের কর্মসংস্থানের এখনো অনেক প্রয়োজন। আর বাইরে যারা খুব ভাল করছে বিশেষ করে ওষুধশিল্প তাদেরকে কেস-বাই-কেস বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত করছি।  
 
ব্যক্তি আতিউর রহমানের ভবিষ্যৎ-ভাবনা এবং গভর্নর হিসেবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকখাত নিয়ে আপনার ভাবনা জানান
 
ড. আতিউর রহমান: আমি খুবই সন্তুষ্ট। আমি একজন শিক্ষক মানুষ, আমার নিজেরও ভয় হয়েছিল, কখনো তো এতো বড় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করিনি। ছয় হাজার কর্মী আমার। মানবসম্পদ সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। আমি অত্যন্ত উদার প্রকৃতির মানুষ। আমি এবং আমার পরিবারও ভয় পেয়েছিল। ভেবেছিলাম পারবো কিনা। কিন্তু সকলের সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীর সর্বাত্মক সহযোগিতা না পেলে আমি এই কাজটি করতে পারতাম না। শুধু তিনি নন, মন্ত্রিপরিষদের সকলেই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আর সহযোগিতা করেছেন এদেশের কৃষক, ক্ষুদে উদ্যোক্তারা। এমনকি বড় উদ্যোক্তারাও। আপনারা আলাপ করে দেখেন বড় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যে আমি কতোটা উদ্যোক্তাবান্ধব।
 Atiur rahman
আজকে সাড়ে ছয় বছরের মাথায় এসে আমি তৃপ্ত মানুষ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে গতানুগতিক, লুকিয়ে থাকা গভর্নর আমি ছিলাম না। আমি ছিলাম জনগণের গভর্নর, সাধারণ মানুষের গভর্নর। সারা পৃথিবী জানে যে, আমি গরিবের অর্থনীতিবিদ এবং আমি গরিবের গভর্নর। কিন্তু গরিবের গভর্নর হতে গিয়ে আমি ধনীদের আক্রান্ত করিনি। কারণ আমি নিজেও জানি, ধনী এবং গরিব মিলেই একটা দেশ। গরিব মানুষ যেন স্বপ্ন দেখতে পারেন যে তিনি নিজেও একদিন ধনী হবেন। আর ধনী যেন বুঝতে পারেন যে , তার সম্পদে গরিবেরও একটি হিস্যা আছে। সিএসআর নিয়ে কথা বলতে পারলাম না। বড় ধরনের সিএসআর কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি। কারণ, আমি মনে করি ধনীদের ধনের ওপরে গরিবের হক আছে। তাদের হকটা কনোন না কোনোভাবে দিতে হবে। সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে, তারা যেন শিক্ষা খাতে এটা ব্যয় করে। ব্যাংকগুলো তাদের সিএসআরের এক তৃতীয়াংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করছে এবং এই ব্যয়ের কারণে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।