ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেড়েই চলছে পিঁয়াজের দাম, আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৫
বেড়েই চলছে পিঁয়াজের দাম, আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম /ফাইল ফটো

ঢাকা: গত এক বছরে দেশে পিঁয়াজের উৎপাদন ও চাষ বেড়েছে। প্রতি বছরের মতো গড়ে আমদানির পরিমাণও ঠিক আছে।

মজুতেও নেই কোনো ঘাটতি। কিন্তু হঠাৎ করেই পিঁয়াজে লেগেছে আগুন!

গত সাতদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দেশি ও বিদেশি পিঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। অস্বাভাবিক হারে এই দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।

রাজধানীর দক্ষিণ শাহজাদপুর কাঁচাবাজারে দেখা যায়, দেশি ও বিদেশি পিঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

ভারতের পিঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাইকারদের দাবি, দেশটি রপ্তানি মূল্য বাড়িয়েছে। আর এ কারণে দেশি পিঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে জানান তারা।
 
এদিকে দেশি পিঁয়াজের দাম বাড়লেও তার সুফল পাচ্ছেন না দেশের পিঁয়াজ চাষিরা। আর অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আমদানিকারক ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই পিঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখা যাচ্ছে না।
 
খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের দাবি, ভারত থেকে আসা পিঁয়াজের দাম বাড়ার পরপরই দেশি পিঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এটা অবশ্যই মজুত ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজি।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ উ‍ৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। গত (২০১৪-১৫) অর্থবছরে এক লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন।
 
আর গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণও বেড়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে পিঁয়াজ আমদানি হয়েছে পাঁচ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে চার লাখ ৩৯ হাজার ৩১২ মেট্রিক টন। গত অর্থবছর (২০১৪-১৫) আমদানি হয়েছে পাঁচ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন।
 
বাজারে পিঁয়াজের দাম বাড়লেও এই দাম পাচ্ছেন না তৃণমূল পর্যায়ের চাষিরা। এমনটিই অভিযোগ করলেন বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ভাটরা গ্রামের চাষি মামুনুর রশিদ।
 
তিনি বলেন, চাষিদের অধিকাংশই ঋণ করে চাষাবাদ করেন। আবার অনেকেই জমি থেকে তোলার এক মাসের মধ্যে পিঁয়াজ বিক্রি করে দিয়ে অন্য ফসল চাষাবাদের খরচ যোগান। চাষিরা জমি থেকে পিঁয়াজ সংগ্রহের পরই বাজারে বিক্রি করে দেন।
 
মামুনুর রশিদ জানান, মজুদ করে রাখার জন্যও কোনো সুযোগ সুবিধা পান না কৃষকরা। ফলে আজ বাজারে পিঁয়াজের দাম বেশি হলেও তাতে তাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। এর সুবিধা ভোগ করছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।
 
রাজধানীর বড় পাইকার বাজার শ্যামবাজারের পাশে আলু বাজারের পিঁয়াজ আমদানিকারক মডেল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকার আবদুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে পিঁয়াজের দাম ভারত সরকার বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদিনই এই দাম বাড়ছে। গত তিনদিনের ব্যবধানে টন প্রতি দু’শ ডলার বেড়েছে।
 
আশঙ্কা করে এই ব্যবসায়ী বলেন, ভারতে বিভিন্ন পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে এই দাম আরও বাড়বে। আর এভাবে পিঁয়াজের দাম বাড়তে থাকলে দেশে পিঁয়াজের দামের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। কেজিপ্রতি ১০০ টাকাও দাম হতে পারে। সহজে এই সঙ্কট কাটবে না। বিকল্প বাজার খুঁজছেন বলেও জানান অনেক ব্যবসায়ী।
 
ওই বাজারের খুচরা পিঁয়াজ বিক্রেতা হাসান বলেন, হঠা‍ৎ গত পাঁচ থেকে ছয় দিন ধরে পিঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তবে কি কারণে দাম বাড়ছে তা জানা নেই।

এ সময় তিনি দাবি করেন, ভারতের পিঁয়াজের দাম বাড়ার কয়েক ঘণ্টার পরই দেশি পিঁয়াজের দাম প্রায় একই পরিমাণ বেড়েছে।
 
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাজার তদারকি সেলের কোনো ভূমিকা নেই বলে অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ বাজার তদারকির মূল দায়িত্বে থাকা এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে আলোচনা ও সভা চলছে। শিগগরিই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পিঁয়াজের মজুদেও কোনো সমস্যা নেই।
 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইলিয়াছ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে হয়তো ভারতের পিঁয়াজের দাম বেড়েছে। আর আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। যদিও বৃষ্টির কারণে সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। তবে এতো বেশি পরিমাণ বাড়াটা অস্বাভাবিক। এতে অবশ্যই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট রয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৫
একে/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।