ঢাকা: রাজস্ব আয় বাড়ানো, জনগণের মধ্যে করভীতি দূর ও করসেবা পৌঁছে দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।
‘জনকল্যাণে রাজস্ব’-এ নীতিকে সামনে রেখে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সংস্থাটি।
রাজস্ব আয় বাড়াতেই নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে এনবিআর কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।
এরই অংশ হিসেবে সারাদেশে রাজস্ব কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও নতুন করদাতাদের সঙ্গে ‘রাজস্ব সংলাপ’ সংলাপ শুরু করেছে এনবিআর।
জনগণের মধ্যে কর সচেতনতা তৈরিতে উৎসাহ প্রদান ও কর দিতে উৎসাহিত করতে জনঅংশগ্রহণ (Community Participation) নিশ্চিতে এ সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ সংলাপ ঢাকাসহ সারাদেশে অনুষ্ঠিত হবে। সম্প্রতি, দেশের দুটি জেলায় রাজস্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় ব্যয় বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর প্রতিনিয়ত অভ্যন্তরীণ রাজস্বের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর ‘হয়রানি’, ‘দুর্নীতি’ রোধ করে করদাতাদের নতুন এনবিআর দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে। রাজস্ব যে জনকল্যাণে ব্যয় হয়, সে বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে সরাসরি করদাতাদের মধ্যে কর-সচেতনতা তৈরি হবে।
সূত্রটি জানায়, করদাতা বৃদ্ধি ও কর-সচেতনতা তৈরিতে এর আগে এনবিআর ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনার করলেও রাজস্ব সংলাপ এবারই প্রথম। কর সচেতনতা বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতিবছর ঢাকাসহ প্রতি জেলায় আয়কর মেলার আয়োজন করে আসছে। চলতি বছর উপজেলা পর্যায়েও এ মেলার আয়োজন করা হবে।
এবারই প্রথম সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে এ সংলাপের আয়োজন করছে এনবিআর। এ সংলাপের ফলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি সিলেট ও যশোর (বেনাপোল কাস্টমস) জেলায় রাজস্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জনসচেতনতা বাড়াতে যে সংলাপের আয়োজন করা হবে, তাতে রাজস্ব কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ অংশ নেবেন। প্রতি তিন মাস পর পর সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষেত্র বিশেষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সংলাপ করবে এনবিআর।
সংলাপের ফলে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে এনবিআরের যোগাযোগ বাড়বে। মাঠ প্রশাসনে গতি আসবে ও রাজস্ব আদায় বেড়ে যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছর ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে করদাতা ও করজাল (নেটওয়ার্ক) ক্ষেত্র প্রসারিত হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব নয়। এর পাশাপাশি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রও বের করতে হবে।
কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। কারণ, রাজস্ব আদায়ের বেশকিছু সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তাদের সামনে রয়েছে। এর একটি সব মানুষকে করজালে আনা।
সংলাপ বিষয়ে এনবিআরেরর এক সিনিয়র সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, কর জরিপ অব্যাহত রয়েছে। তাতে করদাতা বৃদ্ধি ও করজাল বৃদ্ধির বহু ক্ষেত্র বেরিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, নতুন ও পুরনো সব করদাতা কর দিতে আগ্রহী। বাধা শুধু করভীতি, হয়রানি আর দুর্নীতি। এসব কাটিয়ে উঠতে এ সংলাপের আয়োজন।
সিলেটে রাজস্ব সংলাপে চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, এ সংলাপ মানুষকে সচেতন করবে। মানুষ যত বেশি সচেতন হবে, রাজস্ব আদায়ও তত বাড়বে।
তিনি বলেন, সারাদেশে এ সংলাপ আয়োজন করা হবে। এ ধরনের সংলাপ নিয়মিত করলে রাজস্বের পাশাপাশি করদাতা ও কর কর্মকর্তাদের মধ্যে দূরত্ব কমে আসবে।
চেয়ারম্যান বলেন, দূরত্ব কমে আসলে হয়রানি ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকবে না। নতুন এনবিআর ক্ষেত্রে এ সংলাপ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
আরইউ/এবি