ঢাকা, বুধবার, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যয় বাড়ছে দ্বিগুণ

মংলা সাইলো নির্মাণে মন্থর গতি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
মংলা সাইলো নির্মাণে মন্থর গতি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাগেরহাটের মংলায় ৫০ হাজার মেট্রিকটন অত্যাধুনিক নৌ-বন্দরভিত্তিক খাদ্যগুদাম (কনক্রিট গ্রেইন সাইলো) নির্মাণ কাজ শেষই হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে এক ধরনের গড়িমসি শুরু করেছে খাদ্য অধিদফতর।

প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধিসহ মূল অনুমোদিত প্রকল্প থেকে অতিরিক্ত ৩৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা দ্বিগুণেরও বেশি।

বর্তমানে সাইলো নির্মাণে মন্থর গতি দেখা যাচ্ছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা তৈরি ও পুষ্টি জোরদার করার লক্ষ্যে সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি নিয়ে হতাশা ও সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
 
খাদ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আনুষঙ্গিক সকল সুবিধাসহ সবুজে ঘেরা সুন্দরবন ঘেঁষে মংলা বন্দরের জয়মনিতে ৫০ হাজার মেট্রিকটন ক্যাপাসিটি’র সাইলো নির্মাণ করা। এর মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্যশস্য বিতরণের সুবিধা সৃষ্টি, আমদানি করা খাদ্যশস্য বিষক্রিয়া ছাড়া মজুদ ও দ্রুততম সময়ে খালাস, মংলা বন্দরে খাদ্যশস্যের সংকট কমিয়ে আনা এবং সিডর, আইলা ও সাইক্লোনপ্রবণ এলাকায় দ্রুততম সময়ে খাদ্য সরবরাহ করা।
 
সূত্রে জানা গেছে, ‘কনস্ট্রাকশন অব এ কনক্রিট গ্রেইন সাইলো অ্যাট মংলা পোর্ট উইথ অ্যানসিলিয়ারি ফ্যাসিলিটিজ’ শীর্ষক ৫০ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ সাইলো নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। এ মেয়াদে মূল অনুমোদিত প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর পর ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সালের জুন পযর্ন্ত বাড়ানো হয়। ওই সময়েও প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। পরে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ছয়মাস বাড়ানো হয়।
 
দীর্ঘদিন পর এ প্রকল্পের মেয়াদ আবারও দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পযর্ন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু মেয়াদই বাড়ানো হয়নি মূল প্রকল্প থেকে অতিরিক্ত ৩৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ১৯৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রকল্পের ব্যয় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৫৩৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকায়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(প্রশাসন ও উন্নয়ন) মানবেন্দ্র ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আরও বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যে কারণে ব্যয় ও সময় বাড়ানো হচ্ছে। মূল প্রকল্পের বাইরে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইটেম সংযোজন করা হবে। এ কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে আরও অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন।
 
তবে প্রকল্পের অস্বাভাবিক ব্যয় ও সময় বাড়ানোর বিষয়টি এড়িয়ে যান অধিদফতরের মহাপরিচালক আতাউর রহমান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আপনি পিডি’র (প্রকল্প পরিচালক) সঙ্গে কথা বলুন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকালে বিভিন্ন কাজের আইটেমের ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন নতুন আইটেমের প্রয়োজন হওয়ার কারণে সময়মতো কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সে লক্ষ্যে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল প্রকল্প থেকে অতিরিক্ত ৩৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
 
এতো বিপুল পরিমাণে ব্যয় বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পটি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে কেবলমাত্র চট্টগ্রাম বন্দরেই জাহাজ থেকে সরাসরি সাইলোতে খাদ্যশস্য খালাসের সুবিধা রয়েছে। ফলে আমদানিকৃত খাদ্যশস্য আনুপাতিক হারে মংলা বন্দরে খালাস না করে চট্টগ্রামে খালাস করা হয়। এরপর স্থল ও জলপথে যশোর ও খুলনা অঞ্চলে খাদ্যশস্য আনা হয়। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণে অর্থের অপচয় হচ্ছে। এ কারণেই ব্যয় ও সময় যাই বৃদ্ধি হোক না কেন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে।
 
খাদ্যশস্য চলাচল নীতিমালা অনুযায়ী আমদানিকৃত খাদ্যশস্যের ৪০ শতাংশ মংলা বন্দরে খালাস হওয়ার কথা। কিন্তু বন্দরে জাহাজ থেকে খাদ্যশস্য খালাস করার পদ্ধতি ম্যানুয়াল ও অতি পুরনো হওয়ায় যথাযথভাবে আমদানিকৃত খাদ্য খালাস হয় না।
 
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে নিরাপদে খাদ্য খালাস হতে পারে। চট্টগ্রাম থেকে মংলায় জল ও স্থলপথে খাদ্য পরিবহনে প্রতি বছর সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। মংলা সাইলোটি নির্মাণ করা হলে বছরে প্রায় ৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
 
তবে এতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও এটি বাস্তবায়নে মন্থর গতি দেখা গেছে।
 
খাদ্য অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতি, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, যন্ত্রপাতির পরিবহন ও নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন আইটেম সংযোজন ইত্যাদি হালনাগাদ করার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।
 
সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে বৈদেশিক আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সহায়তা না পাওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ে তারতম্য হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২০০০ সালে পরামর্শক সংস্থার সমীক্ষা প্রতিবেদন ও প্রাক্কলিত ব্যয়ে সাইলো নির্মাণের জন্য বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির(একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০০০ সালে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করে প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে এটি আবারও সংশোধন করা হয়। এ সময় প্রকল্পের কিছু আইটেম বাদ পড়ে। পরবর্তীতে বাদপড়া আইটেমগুলো ফের সংযোজন করায় অতিরিক্ত ব্যয় বাড়ছে বলে দাবি করেছে খাদ্য অধিদফতর।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।