ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সরেজমিন হাজারীবাগ

ট্যানারিতে চামড়া নিয়ে অস্বস্তি

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৫
ট্যানারিতে চামড়া নিয়ে অস্বস্তি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘গতবছরের চামড়া স্টকে রয়ে গেছে। তারওপর বিদেশি অর্ডার কম বলে এবার কম দামেও চামড়া সংগ্রহ করতে আমরা অস্বস্তিবোধ করছি।



এ মন্তব্য হাজারীবাগ বৌ বাজার এলাকার এক্সিম লেদার কর্মকর্তা আবদুর রশিদ এর।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গতবছরের চেয়ে এবার চামড়ার মান অত্যন্ত খারাপ। ভালো চামড়ার বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য ফড়িয়ারা দায়ী।

চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার দায় ফড়িয়াদের ওপর চাপিয়ে রশিদ বলেন, ভালো চামড়ায় ১২-১৪ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। কিন্তু গ্রামে লাখ লাখ চামড়ায় ২০-৩০ ঘণ্টা পর লবণ দেওয়া হয়েছে বলে নষ্ট হয়েছে।
Hazaribag_Tanari
ফড়িয়াদের প্রক্রিয়াজাতকরণে বিলম্ব, লবণের দাম বেশি ও অতিরিক্ত গরমের কারণেও লাখ লাখ চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

চামড়ার দাম প্রসঙ্গে রশিদ বলেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে গতবছরের চামড়া এখনো ট্যানারি মালিকরা বিক্রি করতে পারেনি। এজন্য এবার কম দামে চামড়া সংগ্রহ করেছে।

স্টক সম্পর্কে রশিদ বলেন, গতবছরের প্রায় ৫ লাখ বর্গফুট চামড়া এখনো স্টকে পড়ে আছে। বিদেশি অর্ডার অত্যন্ত কম বলে মালিকরা নতুন চামড়া সংগ্রহ করতে অস্বস্তিবোধ করছেন।

তিনি বলেন, গতবছর একই সময় ৬০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করা হলেও এবার হয়েছে ৩০ হাজার। আরও এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ২০ হাজার সংগ্রহ করা হবে।

রশিদ জানান, সারাবছর চামড়া সংগ্রহ করলেও ঈদুল আজহায় ৫০-৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হয়। তবে এবারের চামড়ার মান খারাপ বলে সবাই সংগ্রহ কম করছে।

প্রগতি লেদার কমপ্লেক্সের লেদার টেকনোলজিস্ট মো. নাজমুল বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে- যা গতবছরের একই সময়ে সংগ্রহ করা চামড়ার চেয়ে অনেক কম।
Hazaribag_Tanari_
গতবছরের কয়েক লাখ বর্গফুট চামড়া এখনো স্টকে পড়ে রয়েছে। বিদেশি অর্ডার নেই বললেই চলে। বিক্রি অনিশ্চয়তায় এবার চামড়ার দাম কম হলেও সংগ্রহ করতে ভয় লাগছে।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে যে চামড়া বিক্রি করেছি ২ ডলার ২০ সেন্টে, গতবছর তা বিক্রি করতে হয়েছে ১ ডলার ৮০ সেন্টেরও কম দামে।

নাজমুল বলেন, গতবছরের চামড়ার মান এবছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভালো হলেও ক্রেতারা নানা অযুহাতে চলে গেছে। তাই এবার আমরা কম চামড়া সংগ্রহ করবো।

প্রগতি লেদার কমপ্লেক্সে নারায়ণগঞ্জ থেকে চামড়া বিক্রি করতে এসে দাম শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল ব্যবসায়ী আমির হোসেনের।

আমির হোসেন বলেন, প্রতিবছর ৫ হাজার চামড়া ঈদের কয়েকদিন পর বিক্রি করি। এবার অত্যধিক গরমের কারণে কিছু চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে।

এখানে প্রতি বর্গফুট চামড়ার যে দাম বলেছে তার থেকে ২০-৩০ টাকা বেশি দাম কেনা আছে। তার ওপর এবার লবণের দাম বেশি, লেবার ও প্রক্রিয়াজাত খরচও বাড়তি।

তিনি বলেন, বিক্রি নেই, স্টকে আছে, চামড়ার মান খারাপ এসব অযুহাতে পরিচিত ট্যানারিও চামড়া নিতে ভয় পাচ্ছে। কি করব জানি না।
 
হাজারীবাগের ট্যানারি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঈদুল আজহায় সংগ্রহ করা চামড়া ট্যানারির সামনের সড়কে তাবু টানিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হচ্ছে।

প্রক্রিয়াজাতকরণ শেষ হলে তা ট্যানারিতে স্থানান্তর, সেখানে মেশিনের সহায়তায় মূল চামড়া আলাদা, শুকানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

ট্যানারিতে চামড়া বিক্রি করতে অনেক ব্যবসায়ী এলেও হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ট্যানারিতে গতবছরের চামড়া স্টকে রয়েছে বলে মালিকরা জানিয়ে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৫
আরইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।