ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কুমিল্লায় চামড়া নিয়ে বিপাকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা

রনবীর ঘোষ কিংকর, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৫
কুমিল্লায় চামড়া নিয়ে বিপাকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চান্দিনা (কুমিল্লা): ঈদ‍ুল আজহা এলেই তৎপরতা শুরু হয় মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের।

বছরের নির্ধারিত এই মৌসুমে বাড়তি আয়ের আশায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ধার-দেনা করে আবার কেউ কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যে যার মতো ঈদের দিন পশুর চামড়া সংগ্রহ শুরু করেন।



আর সংগৃহীত ওই চামড়া রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন আড়ত বা ট্যানারিতে বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা আয় করে থাকেন।

এ বছর ঈদুল আজহা শেষ হলো প্রায় এক সপ্তাহ। কুমিল্লার অধিকাংশ মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা তাদের সংগৃহীত চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। রাজধানীর চামড়ার আড়ত বা ট্যানারিতে চামড়ার দর পতনের কারণে লাখ লাখ পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় চামড়া ব্যবসায়ীদের সংখ্যা সঠিকভাবে নির্ধারণ না থাকলেও মহানগরসহ ১৬ উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা জেলার বাহিরে থেকেও চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন।

জানা গেছে, কুমিল্লা মহানগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী প্রত্যেকেই গড়ে ৫/১০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছেন। সেই হিসাব মতে ব্যবসায়ীরা প্রায় সাড়ে ৪/৫ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন।

তারা প্রতিটি চামড়া গড়ে ১৬/১৭শ’ টাকায় কিনলেও পরিবহন, শ্রমিক ও দুই দফা লবণ মাখাসহ প্রতিটি চামড়ার খরচ দাঁড়িয়েছে গড়ে ১৮শ’ থেকে দুই হাজার টাকা।

কিন্তু চামড়ার আড়তদাররা ট্যানারির নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে রাজি হচ্ছেন না। ট্যানারির নির্ধারিত প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৪০/৪৫ টাকা নির্ধারণ করলেও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের অনির্ধারিত কেনায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮০/৯০ টাকা।

অপরদিকে, ট্যানারি মালিকরা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ না করে দেওয়ায় ঢাকা থেকে বড় ব্যবসায়ীরাও চামড়া কিনতে আসছেন না।

ফলে ওই চামড়াগুলোকে তাদের নিজস্ব গুদাম ঘরে বা বাইরে সনাতন পদ্ধতিতে লবণ মেখেই রাখতে হচ্ছে। তবে, সপ্তাহ খানেক লবণ মেখে রাখার পর পরবর্তীতে তা কি করবেন তা নিয়ে বিপাকে আছেন তারা।

জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ বাজারের মৌসুমী চামড়ার ব্যবসায়ী ইব্রাহীম মিয়া বাংলানিউজকে জানান, আমি প্রতি বছর কোরবানির ঈদে ১০/১৫ হাজার গরুর চামড়া কিনি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় নিয়োজিত এজেন্টের মাধ্যমে এ বছর আমি সাড়ে ছয় হাজার চামড়া কিনেছি। আর প্রতিটি চামড়া সর্বনিম্ন ১৩শ’ থেকে সর্বোচ্চ ২২শ’ টাকায় কিনে সেগুলোর পরিবহন, শ্রমিক খরচ ও দুই দফা লবণ মাখার ফলে গড়ে প্রতি চামড়ায় প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিটি চামড়া গড়ে ২৫ বর্গফুট। সেই হিসাব মতে প্রতি বর্গফুটের খরচ দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকা। কিন্তু আড়তদারা ট্যানারির বেধে দেওয়া প্রতি বর্গফুট চামড়া ৪০/৪৫ টাকার চেয়ে বেশি দামে কিনতে রাজি হচ্ছেন না। আর যদি সেই দামে আমরা বিক্রি করি তাহলে প্রতিটি চামড়ায় আমাদের লোকসান হবে প্রায় সাতশ’/আটশ’ টাকা।

চান্দিনা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের চামড়া ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দু’জন পার্টনার প্রায় তিন হাজার চামড়া কিনেছি। প্রতিটি চামড়ায় গড়ে সাতশ’/আটশ’ টাকা লোকসান হলে ব্যক্তিগতভাবে আমরা প্রায় ২০/২২ লাখ টাকা লোকসান হবে। আর আমার মতো জেলায় সব ব্যবসায়ীদের একই পরিস্থিতি হলে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মতো লোকসান হবে সবার।

লাকসাম উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান মুন্সি জানান, আমি প্রতি বছর কোরবানির ঈদে ১৫/২০ হাজার গরুর চামড়া কিনি। কিন্তু এ বছর ভারতে চামড়া পাচারে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে আমি কোনো চামড়াই কিনি নাই। যদি ভারতে চামড়া পাঠানো যেতো তাহলে ট্যানারি মালিকরাও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে বাধ্য হতো।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মান্নানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৫
এএটি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।