ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

শান্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম-সাভার-নারায়ণগঞ্জে সহিংসতা

হাসান জামিল শিশির | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১০
শান্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম-সাভার-নারায়ণগঞ্জে সহিংসতা

ঢাকা: ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকা ঘোষণার দাবিতে সোমবার সাভার ও নারায়ণঞ্জে পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলেও ঢাকার পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক, শান্ত।


সরেজমিনে রাজধানীর তৈরি পোশাকশিল্প-প্রধান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকরা নিত্যদিনের মতোই দল বেঁধে কাজে যোগ দিয়েছেন।

মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে সংঘটিত শ্রমিক বিক্ষোভের বিন্দুমাত্র আলামত আর নেই।

তবে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে অন্যরকম এক সিন্ডিকেটের খোঁজ। পোশাকশিল্পকে অস্থিতিশীল করে তুলতে জুলাই মাসের শুরু থেকেই শুরু হয়েছিল গোপন তৎপরতা। তাদের টার্গেট ছিল রাজধানীর মিরপুর এলাকা। তবে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর ওই চক্রের উদ্দেশ্য ভেস্তে যায়।

কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্রও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

এসব সূত্র জানায়, ঘটনা প্রবাহ তাদের ইচ্ছামতো না গড়ানোয় ওই সিন্ডিকেটটি রাজধানীর ভিআইপি সড়ক বলে খ্যাত বিমানবন্দর সড়ককে বেছে নেয়। এর একটি উদ্দেশ্য ছিল বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ। মজুরি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ৩০ ও ৩১ জুলাই ওই সড়কে অবরোধ করে পরিস্থিতি অশান্ত করে তোলার চেষ্টা চালায়। তবে প্রশাসন ও সরকার গার্মেন্ট সেক্টরে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের কঠোর ভাবে দমনের ঘোষণা দিলে রাজধানীর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

রাজধানীর মহাখালী, তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর, রামপুরা এলাকার গার্মেন্টস কারখানার কর্মরতদের সবার মুখেই ছিল- ‘আমরা সংঘর্ষে জড়াইনি। ’

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার অন্যতম কারখানা নাসা মেইনল্যান্ড নামের গার্মেন্টসের সিকিউরিটি ইনচার্জ মো. মাহবুব বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, শ্রমিকরা সংঘর্ষে জড়ায়নি, স্বাভাবিক ভাবেই তারা দায়িত্ব পালন করছে।

পদ্মা পলিকটন গার্মেন্টসের সিকিউরিটি ইনচার্জ মো. নজরুল ইসলাম জানান, তাদের গার্মেন্টসে শ্রমিকদের ভেতর কোন প্রকারের বিক্ষুব্ধ আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

অবশ্য তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার উত্তর বেগুনবাড়ীতে জলকামান এবং অন্যান্য দাঙ্গা ভঙ্গকারী সরঞ্জামসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।

সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মো. ফারুক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, এ এলাকার শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছে এবং তাদের ভেতর কোন ধরনের বিক্ষোভ সৃষ্টির চেষ্টা দেখা যায়নি।

তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে মহাখালী এলাকায় ঘুরে দেখা যায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সত্ত্বেও সেখানে কোন পুলিশ মোতায়েন নেই।

সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান গ্লোরি ফ্যাশনস লিমিটেড, ইউনিভার্সাল টেক্সটাইল অ্যালায়েন্স লিমিটেডসহ বেশ ক’টি কারখানার কর্মকর্তারা।          

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হক মোবাইল ফোনে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘পোশাকশিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি সাধারণ শ্রমিকরা আন্তরিকতার সঙ্গে মেনে নিয়েছে। এক্ষেত্রে গুটিকয়েক বহিরাগত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও মহনগর পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের যৌথ তৎপরতার কারণে গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছে। ’

অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টাকারীদের তালিকা প্রস্তুত আছে এবং যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলেও জানান কমিশনার শহীদুল হক।

সাধারণ শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে এ সময় তিনি বলেন, ‘সাধারণ শ্রমিকদের হয়রানি বা গ্রেপ্তারের কোন ভয় নেই। বরং সাধারণ শ্রমিকরা যেন নির্বিঘেœ তাদের কর্মতৎপরতা চালাতে পারে সে ব্যাপারে পুলিশ তাদের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে। ’

এদিকে, গার্মেন্ট শিল্প সম্পৃক্ত বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা গত রোববারের বৈঠকে বেতন কাঠামো মেনে যৌথ ঘোষণা দিলেন, এরপরও কেন সোমবারও সাভার-আশুলিয়া ও ফতুল্লায় শ্রমিকরা ভাঙচুর চালিয়েছে, কেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে কাজকর্ম সব বন্ধ করে দেয়, সোমবার দিনভর এ প্রশ্নই ঘুরেছে মানুষের মুখে।

এ ব্যাপারে সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানা গেছে।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল হক আমিন জানান, সোমবার গার্মেন্টসে যে অনাকাক্সিত ঘটনা ঘটেছে তার জন্য বহিরাগতরাই দায়ী। তারাই সুকৌশলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উস্কানী দিয়ে এই সেক্টরে অরাজগতা সৃষ্টি করেছে।

সরকার নির্ধারিত তিন হজার টাকা শ্রমিকেরা পাবে কিনা- সে আশঙ্কা থেকে এ ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে বলেও তিনি জানান।
 
জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেত্রী সাফিয়া খাতুন জানান, আট ঘণ্টা ডিউটি করার কথা থাকলেও বাস্তবে শ্রমিকদেরকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। অতিরিক্ত চার ঘণ্টার জন্য তাদের অতিরিক্ত কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। হঠাৎ করে কোনো শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসা তো দূরের কথা ছুটিও দেওয়া হয় না। শ্রমিকদের কোন ঈদ বোনাস দেওয়া হয় না। এমন কি যাতায়াত খরচ দেওয়া হয় না।

কিছু কিছু গার্মেন্টসে মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং বেতন ভাতা দেওয়া হলেও ৯০ শতাংশ গার্মেন্টসে তা দেওয়া হয় না বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১০


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।