ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঘুষ না দেওয়ায় ঋণ আটকে গেলো অগ্রণী ব্যাংকে

শাহেদ ইরশাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
ঘুষ না দেওয়ায় ঋণ আটকে গেলো অগ্রণী ব্যাংকে

ঢাকা: ঘুষ না দেওয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনুমোদন হওয়া ঋণ আটকে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মেসার্স নুর পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশারিজ মালিক সাইদুল ইসলাম মালেক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের কাছে দেওয়া এ অভিযোগের বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আব্দুল হামিদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।



অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স নুর পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশারিজ মূলধন যোগানে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল কর্পোরেট শাখায় দুই কোটি টাকা ঋণের আবেদন করে। ব্যাংক ২০১৪ সালের ২৮ জুন এক বছর মেয়াদে দুই কোটি টাকা সিসি হাইপো ঋণ মঞ্জুর করে।

মঞ্জুরিপত্রের শর্তাবলী পূরণ করে কাগজপত্র জমা দেন মালেক। পরিচালনা পর্ষদের সভায় সেটি অনুমোদনও দেওয়া হয়। পরে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভালুকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে মঞ্জুরিপত্রে বর্ণিত তফসিলি জমি ব্যাংকের নামে আম মোক্তারনামা দলিল করে দেন তিনি।

আইনগত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঋণ হিসাব থেকে পণ্য আমদানি এলসি মার্জিনের টাকা ডেবিট করার আবেদন করেন সাইদুল ইসলাম মালেক। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সম্মতিতেই ওই শাখায় চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ও ১০ মার্চ দুই দফা এলসি খোলা হয়। যার নম্বর ০০১৩/১৫/০২/০০০৭।

এ সময় শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক জমির হোসেন গাজী ঋণ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা ও আজগর আলী মোল্লার মাধ্যমে ঋণের ২০ শতাংশ (৪০ লাখ টাকা) ঘুষ দাবি করেন। মালেক এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জমির হোসেন টাকা না দিয়ে নানা রকম টালবাহানা করতে থাকেন। দীর্ঘদিন আটকে রাখেন মঞ্জুরিপত্র।

পরবর্তী সময়ে শাখা কর্তৃপক্ষ নিদিষ্ট সময়ে ঋণটি বিতরণ না করে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার অযুহাতে চলতি বছরের ১০ মার্চ মঞ্জুরিপত্র বাতিলের জন্য পরিচালনা পর্ষদের সভায় উত্থাপন করে। ৪২৬তম সভায় পর্ষদ স্মারকটি পর্যালোচনা করে অনুমোদনে অপারগতা প্রকাশ করে। একই সঙ্গে ওই ঋণ প্রস্তাব প্রসেস করার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপককে ব্যাখ্যা তলব করার নির্দেশ দেয়।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জমির হোসেন গাজী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। নুর পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশারিজ’র নামে দুই কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হলেও কিছু কাগজের অভাবে তা ছাড় দেওয়া সম্ভব হয়নি।

সাইদুল ইসলাম মালেক আরও অভিযোগ করেন, চলতি বছরের ১৮ মার্চ অগ্রণী ব্যাংকের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল কর্পোরেট শাখার মাধ্যমে ভুটান থেকে ২০০ মেট্রিক পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়। শাখা কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভুটানের বেনিফিশিয়ারি ব্যাংককে ইমেইল পাঠিয়ে তা বাতিল করে দেন। শাখাটি এ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই বলে অপপ্রচার করে ওই ব্যাংকের কাছে।

দীর্ঘদিন ধরে নানা টালবাহানা করে মঞ্জুরি হওয়া ঋণের টাকা না দেওয়ায় ও ঋণ সংক্রান্ত নানা রকম কাগজপত্র প্রস্তুত করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। এ কারণে তার বাবার দীর্ঘদিনের ব্যবসায় ঠিকমত সময় দিতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, অভিযোগ মালেকের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আব্দুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাখ্যার জবাব দেওয়া হয়েছে। নুর পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশারিজের কাগজপত্রের ত্রুটির কারণেই মঞ্জুরি হওয়া ঋণ ছাড় করেনি সংশ্লিষ্ট শাখা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
এসই/আরএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।