ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নিবন্ধন হারাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স!

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
নিবন্ধন হারাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স!

ঢাকা: পুনর্বিমায় অনিয়ম করার কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র নিবন্ধন সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

রোববার (১৫ নভেম্বর) অথবা সোমবার (১৬ নভেম্বর) চিঠির মাধ্যমে কোম্পানিটিকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিবে আইডিআরএ।

তবে আইডিআরএ’র এই সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত বাতিল হবে না স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র নিবন্ধন সনদ।

বিমা আইন ২০১০’র ১০ (৭) ধারা অনুযায়ী, আইডিআরএ’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে আপিল করতে পারবে। যদি স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স আইডিআরএ’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে, তবে সরকারের সিদ্ধান্তেই প্রতিষ্ঠানটির ভাগ্য নির্ধারিত হবে।

আর আপিল না করলে আইডিআরএ’র সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন সনদ বাতিল হওয়ার ৬ মাস পর আইডিআরএকে আদালতে কোম্পানিটির অবসায়নের (কোম্পানির কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া) জন্য আবেদন করতে হবে। এর মধ্য দিয়েই চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে যাবে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র নিবন্ধন সনদ।

যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, অনিয়মের কারণে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র নিবন্ধন সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যেই কোম্পানিটিকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে।

এর মাধ্যমে কী স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র নিবন্ধন সনদ চূড়ান্ত বাতিল হয়ে যাবে এমন প্রশ্ন করা হলে এম শেফাক আহমেদ বলেন, আইন অনুযায়ী কোম্পানিটি আইডিআরএ’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে আপলি করতে পারবে।

স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অমর কৃষ্ণ শাহ্’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আইডিআরএ’র সিদ্ধান্ত আমরা এখনও পায়নি।

আইডিআরএ’র সিদ্ধান্ত জানালে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আইডিআরএ সূত্র জানায়, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স পুনর্বিমা সংক্রান্ত অনিয়মনটি করে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পলিসিতে। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর কোনাবাড়িতে গ্রুপটির বহুতল একটি ভবন আগুনে পুড়ে যায়। এরপর এই অগ্নিকাণ্ডের বিমা দাবির টাকা তুলতে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠে গ্রুপটির বিরুদ্ধে।

অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা করপোরেশন ও ক্ষয়ক্ষতি জরিপকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর পারস্পরিক যোগসাজশের চিত্র উঠে আসে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুণ্ঠনের চেষ্টা চালানো হয়।

এ কারণে গত ২১ জুন থেকে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন সনদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আইডিআরএ। একই সঙ্গে বিবন্ধন সনদ কেন বাতিল করা হবে না ৩০ দিনের মধ্যে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়।

পাশাপাশি নিবন্ধন সনদ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নতুন বিমা কাভার নোট, বিমা সার্টিফিকেট বা বিমা পলিসি জারি (ইস্যু) না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ২১ জুনের আগে জারিপকৃত বিমা পলিসির কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ রাখা হয়।

এর আগে গত ৩১ মে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স আইডিআরএকে দেওয়া এক চিঠিতে স্বীকার করে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কিছু বিমা পলিসির ক্ষেত্রে মোট ৪৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ঝুঁকি পুনর্বিমা করা হয়নি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। এ বিষয়ে আইডিআরএ বলছে, পুনর্বিমা ব্যবস্থা হচ্ছে সাধারণ বিমার অন্যতম মূলনীতি। পুনর্বিমা ব্যবস্থায় কোনো ব্যত্যয় হলে তা কোম্পানির মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

এ জন্য বিমা কোম্পানিকে নিবন্ধন সনদ প্রদানের অন্যতম শর্ত হিসেবে ২০১০ সালের বিমা আইনের ৯ ধারায় পুনর্বিমা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনের ১০ ধারায় সন্তোষজনকভাবে পুনর্বিমা সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানির নিবন্ধন সনদ বাতিল বা স্থগিত রাখার বিধান করা হয়েছে।

নিবন্ধন সনদ স্থগিতের বিষয়ে আইডিআরএ স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সকে জানায়, সন্তোষজনকভাবে পুনর্বিমা ব্যবস্থা গ্রহণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে বিমা আইন, ২০১০ এর ১০(১) (ঝ) ধারার বিধান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সনদ বাতিল যোগ্য। কোম্পানি চাইলে নির্দেশের বিষয়ে বিধি মোতাবেক শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।

এরপর আইডিআরএ’র নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে ২৯ জুন স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স হাইকোর্টে রিট (নম্বর-৬৫৮০) করলে আদালত স্থগিতাদেশ দেন। পরে এই আদাশের বিরুদ্ধে আইডিআরএ আপিল করলে ৬ জুলাই হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত।

একই সঙ্গে চার সপ্তাহের মধ্যে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে যাওয়ার অনুমতি দেন।

এরপর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আপিল করলে আদালত ৩০ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জুলাই প্রধান বিচারপ্রতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বে চার সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি শেষে চেম্বার আদালতের রায় বহাল রাখেন।

একই সঙ্গে হাইকোর্টে রিট মামলাটি (নম্বর-৬৫৮০) নিস্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।

তবে পরবর্তীতে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স হাইকোর্টে না গিয়ে মামলাটি তুলে নেয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় আইডিআরএ প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন সনদ আরও দুই মাস স্থগিত করে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র নিবন্ধন সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিআরএ।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
এএসএস/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।