ঢাকা: কর্ণফুলী টানেল ও ন্যাশনাল বার্ন ইউনিট প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রী জানান, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। আর ন্যাশনাল ইউনিট ফর বার্ন অ্যান্ড ট্রাস্টেড সার্জারি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ দু’টি প্রকল্পসহ একনেক সভায় মোট ১৬ হাজার ৯৭৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার ১২টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
কর্ণফুলী টানেল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এটি বাংলাদেশের স্বপ্নের প্রকল্প। এর মাধ্যমে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে যানবাহন যাতায়াত করবে। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের জুন মাসে।
অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ইন্দ্রপুল থেকে চক্রশালা পযর্ন্ত বাঁক সরলীকরণ প্রকল্প। ৭৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ব্যয়ে বাস্তবায়িত হবে ‘কন্সট্রাকশন অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং অ্যান্ড সেইলর’ প্রকল্প। বাস্তবায়ন করা হবে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে।
‘খুলনা শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প’টিতে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
‘তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজসমূহের উন্নয়ন প্রকল্প’। সংশোধিত এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৪৭
কোটি টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
‘ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ঢাকা প্রকল্প’। ৫২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
‘৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্প’। প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৩১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, মেয়াদকাল ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
‘খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো সুবিধাদি উন্নয়ন প্রকল্প’। সংশোধিত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত।
‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল- উন্নয়ন-১ম পর্যায়’ প্রকল্পের ব্যয় ১২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। মেয়াদকাল
২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত।
‘পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা বিভাগীয় অঞ্চলে প্রি-পেইড ই-মিটার স্থাপন (১ম পর্যায়) প্রকল্পে’ ব্যয় হবে ৪৩৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ’ প্রকল্পের ব্যয় ২৬৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সাল মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে বর্তমানে চালু দু’টি ব্রিজের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের চাপ কমানো হবে টানেল নির্মাণের মাধ্যমে। চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘One City two Town’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু সেতু নয়, সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে চট্টগ্রাম শহরের যানজটে আটকা পড়তে হবে না। একইভাবে কক্সবাজার থেকে ঢাকা আসতে চট্টগ্রাম শহরের যানজট এড়িয়ে চলা যাবে।
প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২০ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, মূল ডিপিপি থেকে সংশোধিত ডিপিপি’তে কিছু কাজ বাড়তি যোগ করায় টানেল নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার এবং ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ২০০ বর্গমিটার সার্ভিস সুবিধা, ২৮ দশমিক ৯৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়া, ৭টি জিপ, ২২টি মোটরসাইকেল, ৩৩টি ডেক্সটপ, ১৭টি ল্যাপটপ, ৫টি ফটোকপি মেশিন, দু’টি ফ্যাক্স মেশিন এবং একটি প্রজেক্টর কেনা হবে। পাশাপাশি পরিবেশ ব্যবস্থাপনার জন্য নানা ধরনের কাজ হাতে নেওয়া হবে।
চীনের সাংহাইয়ের আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থল হিসেবে চট্টগ্রামের ভূমিকা শক্তিশালী করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম কক্সবাজারের জাতীয় মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। যাতে করে দেশের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে স্বক্ষম হয় দেশের বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম।
রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মানের ১৭তলা বিশিষ্ট বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে দু’টি বেজমেন্টসহ ১০ তলা ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি, মেডিসিন, ফার্নিচার ও যানবাহন কেনা হবে।
প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৫২ শতাংশ যন্ত্রপাতি কেনা ও ৩৮ শতাংশ অবকাঠামো নির্মাণ বাবদ ব্যয় করা হবে বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রাজধানীর চানখাঁরপুলের টিবি হাসপাতাল ও এর পাশে প্রায় দুই একর জমিতে আন্তর্জাতিক মানের বার্ন ইউনিট হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে বর্তমানে দুই তলা
বিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল ভেঙে ফেলা হবে।
ইতোমধ্যে টিবি হাসপাতালের কাছের পেট্রোলপাম্পের জমিও উদ্ধার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের ১৭ তলা হাসপাতালটি তিন ইউনিটে বিভক্ত করা হবে।
বিশাল ভবনের প্রথম ইউনিট হবে বার্ন চিকিৎসার জন্য। ঢাকাসহ সারা দেশের বার্ন রোগীদের আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা দেওয়া হবে এখানে।
দ্বিতীয় ইউনিট হবে প্লাস্টিক সার্জারির জন্য। এর ফলে প্লাস্টিক সার্জারির জন্য রোগীদের সিঙ্গাপুরসহ অন্য কোনো দেশে পাড়ি দিতে হবে না। দেশেই প্লাস্টিক সার্জারির জন্য আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা ব্যবস্থার পথ খুলে যাবে।
তৃতীয় ইউনিটটি হবে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের জন্য। সারাদেশে মাত্র ৫২ জন চিকিৎসক রয়েছেন, যারা বার্ন রোগীদের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসা দিতে সক্ষম। অথচ প্রতি বছর নানা কারণে প্রায় ৬ লাখ মানুষ আগুনে পুড়ছেন।
প্রতিটি ইউনিট হবে আন্তর্জাতিক মানের এবং অগ্নিদগ্ধ মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ৬০টি আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) থাকবে। এ সকল আইসিইউ পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবলও নিয়োগ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৫
এমআইএস/আরএইচ/এএসআর