ঢাকা: তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণের দাবিতে তিন বছর ধরেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। এই যখন পরিস্থিতি তখন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য গঠিত তাজরীন ট্রাস্ট ফান্ডের ৪ কোটি টাকা ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে দাতারা।
তিন মাস ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নাজেহাল হয়ে তাই দাতারা ক্ষতিপূরণের জন্য পাঠানো অর্থ ফিরিয়ে নিতে চাইছেন। এমনটাই জানা গেছে শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে।
শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সহায়তা দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও দাতা সংস্থাগুলো আইএলও’র সহায়তায় গঠিত তাজরীন ট্রাস্ট ফান্ডে প্রায় ৪ কোটি টাকা পাঠায়। ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা পাঠানো হয়।
নিয়মানুযায়ী এই টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। তাই আবেদন আসে শ্রম মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঝামেলা ভেবে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। গত প্রায় তিন মাস ধরে সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই টেবিল থেকে সে টেবিলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হয়রানির শিকার হচ্ছেন দাতারা। তাই দাতারা প্রাথমিকভাবে সেই অর্থ ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্র।
১৯৮২ সালের ‘দি ফরেন কনট্রিবিউশন অরডিন্যান্স’ অনুযায়ী বৈদেশিক সহায়তা গ্রহণ ও প্রদান উভয় ক্ষেত্রে ব্যুরোর বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমোদন গ্রহন করতে হবে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্রের নির্দেশ অনুযায়ী এনজিও বহির্ভূত ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রচলিত নিয়ম মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই পরিপত্রের নির্দেশ অনুযায়ী তাজরীন ট্রাস্টের বিদেশি সহায়তার ছাড়পত্র শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কোনো কারণ নেই বলে জানান শ্রম আইন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাজরীন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ কেবল শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমতির মাধ্যমেই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর নেতৃবৃন্দ। বিজিএমইএ এর পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাতে দাতারা সহায়তা করতে চাইলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পিছিয়ে যান। তাজনীর ট্রাস্ট ফান্ডের টাকাগুলো এখনো ছাড় করানো যাচ্ছে না। এই টাকা ছাড় পেলে নিহত শ্রমিকের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা আরো বেশি কিছু অর্থ সহায়তা পেতেন। কিন্তু এই বিষয়ে মালিকপক্ষ থেকে কথা বলতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নানা বিপাকে ফেলতে পারেন। তাই এ বিষয়ে আমরা কিছুই বলতে পারবো না।
এসব বিষয় জানতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিঞা আবদুল্লাহ মামুন বাংলানিউজের কাছে ক্ষতিপূরণের ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা স্বীকার করে নেন।
তিনি বলেন, গত ১৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি পাঠানো হয়। যেহেতু টাকাটা বিদেশ থেকে এসেছে তাই এর সঠিক গন্তব্য সম্পর্কে আরও যাচাই বাছাই করার জন্যই ফাইলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে সরকারি হিসেব অনুযায়ী ১১১ জন শ্রমিক নিহত হন। তাদের মধ্যে ১০৯ জন শ্রমিকের মরদেহ চিহ্নিত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
ইউএম/আরআই