ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অসময়ের ইলিশ

চাঁদপুর মাছঘাটে উৎসবের আমেজ

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৬
চাঁদপুর মাছঘাটে উৎসবের আমেজ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চাঁদপুর: ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর মৎস্য আড়তে মৌসুম ছাড়াই প্রচুর ইলিশ আমদানি হচ্ছে। তবে ইলিশগুলো আকারে একটু ছোট।

অন্য সময়ের চাইতে গত দুইদিন ধরে জেলেদের জালে চার গুণ বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে।

ইলিশ আমদানির কারণে জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী, দাদনদার ও শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। তারা কর্মচঞ্চল ও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আড়ৎগুলোতে ইলিশের যে দাম হাকা হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।

সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাঁদপুর মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, চরফ্যাশন, দৌলতখান, হাতিয়া, রামগঞ্জ ও নোয়খালী জেলার নিম্নাঞ্চল থেকে প্রতিদিন এসব আড়ৎগুলোতে সহস্রাধিক মণ ইলিশ আসছে।

আর এসব ইলিশ কোল্ড বাক্সের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে উত্তরবঙ্গের মাওয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, এবং ঢাকা, গাজীপুর, সিলেট, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

মৎস্য ব্যবসায়ী আলী আকবর প্রধানিয়া বাংলানিউজকে জানান, দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইলিশ আমদানি হলেও চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। আর ছোট আকারের যে সব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, সেসব ইলিশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

অপর ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন খান জানান, এ বছর ইলিশের প্রকৃত মৌসুম বৈশাখ থেকে কার্তিক পর্যন্ত কাঙ্খিত ইলিশ পাওয়া যায়নি। তবে মৌসুম না হলেও প্রাকৃতিক ভাবেই এখন ইলিশ ধরা পড়ছে।

জেলে, আড়তদার ও দাদনদাররা ইলিশ মৌসুমে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে নদীতে ও সমুদ্রে ইলিশ ধরতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। ওই সব ব্যবসায়ীরা এখন ইলিশ আমদানির কারণে তাদের সেই সময়ের খরচ অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারছেন বলে এ ব্যবসায়ী জানান।

তিনি আরো জানান, ভরা মৌসুমে ইলিশের আকাল থাকায় প্রতি কেজি বড় সাইজের ইলিশ চার/পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এখন এক কেজি ওজনের ইলিশ দাম কমে তার অর্ধেক হয়েছে।

প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজ চোকদার বাংলানিউজকে বলেন, ৫০ বছরের জীবনে শীতের সময় এ ধরনের ইলিশ আমদানি হতে দেখিনি। এ সময় প্রচুর ইলিশ আমদানি হচ্ছে, দামও তুলনামূলক কম। তবে আকারে একটু ছোট। ২শ’ থেকে ৫শ’ গ্রামের ইলিশেই আমদানিই বেশি হচ্ছে।

মাছ কিনতে আসা ক্রেতা আলম ও আবুল খায়ের মো. রুহুল আমিন জানান, গত বছর শীতে ইলিশ পাওয়া যায়নি। ইলিশ আমদানির খবর পেয়ে কিনতে এসেছি। তিনি বলেন মাছ সাইজে যেমন ছোট, দামও তুলনামূলক কম।

মৎস্য ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন জমাদার (বাবুল হাজী) জানান, এ বছর শীতে যে ইলিশ ধরা পড়ছে, তা ছোট হওয়ায় প্রতি কেজিতে পাঁচটি থেকে তিনটি পাওয়া যাচ্ছে। তিনশ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ১৪ হাজার, পাঁচ/ছয়শ’ গ্রাম ২৪ হাজার, সাত/আটশ’ গ্রাম ৩৫ হাজার, এক কেজি ইলিশ ৬০/৬৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন ৪৫টি আড়তে এসব সাইজের ইলিশ আমদানি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫শ’ মণ। অন্য সময় আমদানি হতো চার/পাঁচশ’ মণ।

ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন গাজী জানান, এখন চাঁদপুর মাছঘাট ঈদের উৎসবের মত লাগছে। শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা দিন-রাত কাজে ব্যস্ত। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের আয় বেড়েছে। আগে শ্রমিকরা প্রতিদিন পাঁচশ’ টাকা রোজাগার করলেও এখন ১৫শ’ থেকে দুই হাজার টাকা আয় করছেন।

ওই ব্যবসায়ী আরো জানান, মৌসুমী ইলিশে যে স্বাদ পাওয়া যেতো বর্তমানে আমদানি হওয়া ইলিশে সেই স্বাদ অনেকটা কম হবে।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মৎস্য বিভাগ থেকে টাস্কফোর্সের যৌথ প্রচেষ্টায় জাটকা মৌসুমে জাটকা নিধন নিয়ন্ত্রণ রাখায় এসব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
আরএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।