ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে ব্যাংক কর্মকর্তারাই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে ব্যাংক কর্মকর্তারাই

ঢাকা: প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রাহকও ক্রমেই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই প্রযুক্তির সুবিধা নিয়েই জালিয়াত চক্র গ্রাহকের গচ্ছিত অর্থ চুরি করছে ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ থেকে।

এক ব্যাংকের গ্রাহকের অর্থ জালিয়াত চক্র তুলে নিচ্ছে অপর ব্যাংকের বুথ থেকে। এতে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি ইস্টার্ন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ও দ্য সিটি ব্যাংকে কার্ড জালিয়াতির এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্কতা জারি করে এ ব্যাপারে তার উদ্বেগ জানিয়েছে। আন্তব্যাংক এটিএম লেনদেনও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এটিএম বুথে কার্ড স্কিমিং ও পিন ক্যাপচার ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য ও পিন নম্বর সংগ্রহ করেই জালিয়াত চক্র বুথ থেকে গ্রাহকের টাকা তুলে নিয়েছে।

গ্রাহকদের চুরি যাওয়া অর্থ কীভাবে ফেরত আসবে সে নিয়ে অবশ্য কোনও নির্দেশনা এখনো নেই। আর এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি কোন তরফে এই কার্ড জালিয়াতির দায় যাবে। আর কারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাও এখনও খুঁজে বের করা যায়নি। সংবাদমাধ্যমগুলোর কোনওটি বলছে এটিএম কার্ড জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত, আবার অন্য খবরে খুঁজে পাওয়া গেছে বিদেশি চক্রের সম্পৃক্ততা। এখনি নিশ্চিত করা প্রয়োজন কারা প্রকৃতপক্ষে দায়ী।

বলা হচ্ছে ব্যাংকগুলো ও তার গ্রাহকরা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়াতেই তার সুযোগ নিচ্ছে জালিয়াত চক্র।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটিএম কার্ড পাঞ্চ করার স্থানে আগেভাগে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে রাখলে পরে গ্রাহক এটিএমে কার্ড পাঞ্চ করলে এর তথ্য কপি হয়ে যায়। এ ধরনের ডিভাইসের দাম মাত্র ২০০ ডলার।  

বিশ্লেষক ও আইন-শৃঙ্খলারাক্ষাকারী উভয় পক্ষেরই বক্তব্য ব্যাংকের ভেতরকার লোক না হলে বুথের ভেতরে এই ডিভাইস স্থাপন করা সম্ভব নয়। বাইরের কোনও চোর এতটা অল্প সময়ের মধ্যে ডিভাইস স্থাপন করতে পারবে না। প্রাথমিক তদন্তেও এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলেই জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এ বিয়য়ে তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা।

একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে কথা উঠেছে  বিদেশি চক্রও জড়িত থাকতে পারে এই জালিয়াতিতে। সূত্র জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জালিয়াতের ঘটনার শিকার তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও পুলিশ মিলে ওই ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। গত সপ্তাহে চারটি বুথ থেকে টাকা বের করে নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে তাদের হাতে। অন্ততপক্ষে দুই জন বিদেশি ধরা পড়েছে এসব ফুটেজে। ওই বুথগুলো থেকে ২৫ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

বনানী ও গুলশানের তিনটি বুথে একজন বিদেশিকে বড় হুডওয়ালা ক্যাপে মুখ ঢেকে ঢুকে ভেতরে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে দেখা গেছে। ধারনা করা হচ্ছে তখনই কার্ড স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে দেয় ওই বিদেশি। অন্য এক বিদেশি মিরপুরের কালশির অপর একটি ব্যাংকের বুথে ঢুকে পড়ে। ফুটেজ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকটাই নিশ্চিত যে, ওই দুই বিদেশিই জালিয়াত চক্রের হবে।

পুলিশও বিষয়টিতে একই মত পোষণ করছে। তবে কে বা কারা ওই বিদেশি তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন মনে করছে, বিদেশিরা এই চক্রের হোতা হতে পারে তবে তাদের সঙ্গেও অবশ্যেই রয়েছে ব্যাংকের ভিতরকার কারো সম্পৃক্ততা। ব্যাংকের কারো যোগসাজশ ছাড়া এই ডিভাইস স্থাপন সম্ভব নয় বলেই মত সংস্থাটির।

এদিকে সতর্কতা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুরোনো সার্কুলার নতুন করে জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে প্রয়োজনীয় সতর্কতা ব্যবস্থাগুলো না নেওয়ার কারণেই এমনটা ঘটেছে। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একই ধরনের একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সার্কুলারটি নতুন করে জারি করে ব্যাংকগুলোকে ৬টি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এর অন্যতম হচ্ছে- নতুনভাবে স্থাপিত এটিএম বুথসমূহে বাধ্যতামূলকভাবে এন্টি স্কিমিং ও পিন শিল্ড ডিভাইস থাকতে হবে। আর এরই মধ্যে স্থাপিত বুথে একমাসের মধ্যে এন্টি স্কিমিং ও পিন শিল্ড ডিভাইস বসাতে হবে। এছাড়াও প্রতিদিন এটিএম বুথে সংগঠিত লেনদেনসমূহের ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং তাতে কোন সন্দেহজনক বিষয় মনে হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

তবে গ্রাহককেও কিছুটা সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এটিএম বুথে টাকা তোলার সময় পিন কোড বসাতে গিয়ে এক হাত দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন। গোপন ক্যামেরায় যাতে তা না দেখা যায়। পরিচিত এটিএম বুথগুলোতেই বেশি যাওয়া, যেসব বুথ ভিডিও ক্যামেরা বসিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা সেগুলোই ব্যবহার করা, বুথের ভেতরে ঢুকে নিজেও একটি সতর্ক ভাবে পর্যবেক্ষণ করা আর নিয়মিত নিজের ব্যাংক ব্যালেন্স চেক করা।  

বাংলাদেশ সময় ১২৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।