ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নিয়ন্ত্রণমূলক কর চুক্তি

বাংলাদেশের বছরে ক্ষতি ৮৫ মিলিয়ন ডলার!

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
বাংলাদেশের বছরে ক্ষতি ৮৫ মিলিয়ন ডলার!

ঢাকা: বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর কর আরোপের ক্ষমতা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। যার মূল কারণ দেশে নিয়ন্ত্রণমূলক ১৮টি আন্তর্জাতিক চুক্তি।

বিদ্যমান চুক্তিগুলোর কারণে আন্তর্জাতিক যেসব কোম্পানি এদেশে ব্যবসা করছে, তাদের ওপর সরকারের করারোপের ক্ষমতা নাটকীয়ভাবে সীমিত হয়ে গেছে।

দেশে নিয়ন্ত্রণমূলক চুক্তির সংখ্যা কম হলেও চুক্তির একটি ধারার কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৮৫ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব হারাচ্ছে।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ বিশ্বের ৫শ’য়ের বেশি আন্তর্জাতিক চুক্তির ওপর পরিচালিত ‘অপচুক্তি’ নামে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর করারোপ বন্ধ হওয়ায় দরিদ্র দেশগুলো বছরে লাখ লাখ ডলারের রাজস্ব হারাচ্ছে।
 
যার মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানির ওপর করারোপের ক্ষেত্রে দরিদ্র দেশগুলোর অধিকার হরণের জন্য কোন চুক্তিটি বেশি দায়ী তা প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধনী দেশের তুলনায় গরিব দেশগুলোতে বাণিজ্যিক লেনদেনের ওপর করারোপ বন্ধের জন্য প্রায় প্রতিটি চুক্তিই দায়ী। যা বিশ্বব্যাপী বৈষম্য ও দারিদ্র্য আরও বাড়াচ্ছে। ফলে করের মাধ্যমে আদায় করা রাজস্ব দিয়ে সরকারি সেবা খাতগুলোতে অর্থায়ন করার যে সম্ভাবনা ছিল তাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে এর মূল্য দিতে হচ্ছে নারী ও শিশুদের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কর চুক্তিগুলোর একটি ধারার কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৮৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার (প্রায় ৬শ ৬৪ কোটি টাকা) হারাচ্ছে। এ ধারা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে দেওয়া বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের টাকার ওপর করের লভ্যাংশ নিতেও বাংলাদেশের ক্ষমতা সীমিত হয়েছে। আর তা হয়েছে সে দেশে, যেখানে ৬৬ লাখেরও বেশি মানুষ অতি দরিদ্রতার মধ্যে বসবাস করে। প্রতিদিন যাদের গড় আয় ১.৯০ ডলারেরও কম।

জার্মানকে অনুসরণের মাধ্যমে ১৯৭০ সালের পর আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও ইতালি একত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক নিয়ন্ত্রণমূলক কর চুক্তির সূত্রপাত করেছে। যুক্তরাজ্য ও ইতালি ছাড়াও বিশ্বের কিছু অতিদরিদ্র দেশগুলোর সঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক চুক্তির সংখ্যা দ্রুতহারে বেড়েছে চীন, তিউনিশিয়া ও মরিশাসেও।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ব্যবসা পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্যভাবে বাণিজ্যিক কর হ্রাস করছে। আর তা করছে ব্যবসার লভ্যাংশ, রয়্যালটি অথবা সুদের টাকা দেশের বাইরে স্থানান্তরের মাধ্যমে। এজন্য দায়ী অনেক কর চুক্তি।
 
নিম্ন আয়ের দেশগুলো ওইসিডি ক্লাবের ধনী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কর চুক্তি বিষয়ে স্বাক্ষর করেছে। যার ফলে ওইসিডির সদস্য নয় এমন রাষ্ট্রগুলো করারোপের অধিকার বেশি হারিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন আয়ের দেশের রাজস্ব আয় বাড়াতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর কর আরোপ করতে হবে। ফলস্বরূপ নাজুক স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সরকারি সেবা খাতগুলোর উন্নয়ন এবং দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব হবে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অ্যাকশনএইডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে নিয়ন্ত্রণমূলক চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়। আর এজন্য দরিদ্র দেশগুলোর সরকারকে প্রথমত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর ন্যায্য করের ভাগ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও কর চুক্তি বিষয়ক তদবির কার্যক্রম প্রকাশেরও আহ্বান জানায় অ্যাকশনএইড।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
আরইউ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।