ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পদ্মার স্কাউর প্রটেকশনে ফেলা হচ্ছে সাদা বালির বস্তা

মফিজুল সাদিক ও সাব্বির আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
পদ্মার স্কাউর প্রটেকশনে ফেলা হচ্ছে সাদা বালির বস্তা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকা ঘুরে: খরস্রোতা পদ্মানদীর ভাঙনে পদ্মাসেতু প্রকল্পের নদীর ভেতরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য স্কাউর বা গোলাকার গর্ত। এসব স্কাউর প্রটেকশন না করলে পাইলিংয়ের কাজে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ আশঙ্কা থেকে স্কাউর প্রটেকশনে ফেলা হচ্ছে সাদা বালির বস্তা। এতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হলেও পাইলিং সুরক্ষিত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বছর হঠাৎ পদ্মানদীর ভাঙনে পদ্মাসেতু প্রকল্পের নদীশাসন ও মূলসেতু নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষতি হয় প্রায় ২৫৬ কোটি টাকার। এর মধ্যে ১৩১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে নদীশাসনে এবং মূলসেতু নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষতি হয়েছে ১২৫ কোটি টাকার।

পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকায় নদীর তলদেশে সার্ভে করে দেখা গেছে, স্কাউর প্রটেকশন না করলে পাইলিংয়ের কাজে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কোনো ঝুঁকি না নিয়ে স্কাউর প্রটেকশনের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এসব স্কাউর যেন পাইলিং কাজে বাধার সৃষ্টি না করতে পারে, সে লক্ষ্যে স্কাউর প্রটেকশনে ফেলা হচ্ছে বালি ভর্তি সাদা বস্তা। যেখানে স্কাউর সেখানেই এসব বস্তা ফেলা হচ্ছে।

পদ্মাসেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর পদ্মার খরস্রোতের কারণে নদীর তলদেশে অনেক স্কাউর তৈরি হয়েছে। সার্ভে করে আমরা এসব তথ্য পেয়েছি। সার্ভেতে পাওয়া ফলাফলের ভিত্তিতে স্কাউর প্রটেকশনে আমরা বালি ভর্তি সাদা বস্তা ফেলছি। যেখানে স্কাউর, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
 
পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকার ‍মাঝনদীতে ব্যস্ত হাজারও শ্রমিক। কেউ কোদাল দিয়ে বালি কাটছেন কেউ বা আবার সেগুলো সারের সাদা বস্তায় ভর্তি করছেন। অনেকে আবার বালির বস্তাগুলো ট্রলারের সাহায্যে পদ্মাসেতুর কূলে পন্টুনে নিয়ে আসছেন। পন্টুন থেকে বালির বস্তাগুলো স্কাউরে ফেলা হচ্ছে ট্রলারের সাহায্য।

অশান্ত পদ্মা এখন বড়ই শান্ত। জেগেছে চরও। চরের মাটি কেটে পন্টুনে নিয়ে আসা হচ্ছে। নদীর মাঝখানে চরের যে দিকে চোখ যায় শুধুই সাদা বালির বস্তার শুভ্রতা ও হাজারো শ্রমিকের কর্মব্যস্ততা।

প্রতি বস্তা বালি ভর্তির জন্য চার টাকা, মাথায় করে ট্রলারে বোঝাই করা বাবদ ছয় টাকা করে দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের। এভাবে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচশ ‍টাকা আয় করে ঘরে ফেরেনে শ্রমিকেরা। আর মাঝনদীতে বালির বস্তা পরিবহনে ট্রলারের মালিকদের তিন টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের শ্রমিক আবু সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘পদ্মাসেতু ভাঙনি এলাকা। ভাঙনি ঘিরতে নদীশাসনে পল্টনে(পন্টুন) বালি নিচ্ছি’।
পদ্মাসেতু প্রকল্পের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ হচ্ছে পাইলিং। এর আশেপাশে এসব সাদা বস্তার বালি ফেলা হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় পদ্মানদীর কূল ও স্কাউরে এসব বস্তা ফেলা হচ্ছে।
 
শ্রমিক আকমল বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাটি কাটে (পানি ধুয়ে যাওয়া) বালি কাটে না। মূল পিলার গাড়া হচ্ছে। পিলারের চারপাশে বস্তা ফ্যালাইছি’।

সেতুর মোট খরচ ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণের খরচ ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা ও নদীশাসনে ব্যয় প্রায় ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। কূলের ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ভর্তি বালু বস্তা ফেলা হয়েছে ১০ লাখের বেশি। এরপরও স্কাউর প্রটেকশনে ফেলা হচ্ছে বালি ভর্তি সাদা বস্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
এমআইএস/এসএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।